রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

অপ্রদর্শিত আয় এবং সম্পদ প্রসঙ্গে

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

॥ তিন ॥
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আবু বকর রা.-এর একজন গোলাম ছিল। সে আবু বকরকে মুক্তিপণ হিসাবে কিছু অর্থ নেয়ার শর্তে মুক্তি চাইলে তিনি তাতে সম্মত হন। অতপর সে প্রতিদিন তার মুক্তিপনের কিছু অংশ নিয়ে আসতো। আবু বকর রা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এটা উপার্জন করে এনেছ? সে যদি সন্তোষজনক জবাব দিত তবে তিনি তা গ্রহণ করতেন, নচেত করতেন না। একদিন সে রাতের বেলায় তাঁর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোযা ছিলেন। তাই তাকে ঐ খাদ্যের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলেন এবং এক লোকমা খেয়ে নিলেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কীভাবে সংগ্রহ করেছো? সে বললো, আমি জাহেলিয়াত যুগে লোকের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণনা করতে পারতাম না। কেবল ধোঁকা দিতাম। এ খাদ্য সেই ভাগ্য গণনার উপার্জিত অর্থ দ্বারা সংগৃহীত। আবু বকর রা. বললেন ঃ কী সর্বনাশ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে ফেলার উপক্রম করেছো। তারপর গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বমিতে খাদ্য বের হবে না। উপস্থিত লোকেরা তাকে বললো, পানি না খেলে খাওয়া জিনিস বের হবে না। তখন তিনি পানি চাইলেন। পানি খেয়ে খেয়ে সমস্ত ভুক্ত দ্রব্য পেট এক লোকমা খাওয়ার কারণেই কি এত সব? আবু বকর রা. বললেন: খাদ্য বের করার জন্য যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হতো, তবুও আমি বের করে ছাড়তাম। কেননা আমি রসূলুল্লাহ স. কে শুনেছি: ‘‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’’ এখন মানবজীবনে সম্পদ উপার্জনের কতিপয় অবৈধ পন্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জনের বহুল প্রচলিত একটি প্রধান মাধ্যম হলো সুদের আদান প্রদান, যা আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় অর্থনীতির শিরা উপশিরায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সুদ অর্থনীতির সবচেয়ে পুরাতন ও জটিল একটি বিষয়। মিসর, রোম, গ্রীস ও ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে প্রাচীনকালে সুদ সম্পর্কে আইন রচনার প্রয়োজন হয়। বেদ, তাওরাত ও ইঞ্জিলে সুদকে একটি সমস্যা হিসেবে আলোচনা করা হয়েছে। সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টেটলের মতো প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এবং হিন্দু ও ইয়াহুদী সংস্কারকগণ সুদী কারবারের নিন্দা করেছেন। আর এটি ইসলামের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। সুদ অর্থনৈতিক শোষণ ও জুলুমের অন্যতম হাতিয়ার। এটি মানুষের মানসিকতাকে সংকীর্ণ করে দেয়, মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, অর্থনৈতিক গতিকে শ্লথ করে দেয়, অর্থবণ্টনে বৈষম্য সৃষ্টি করে। যদিও বিভিন্ন প্রাচ্যবিদ বিভিন্ন ধরণের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত সুদকে বৈধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সুদের আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘রিবা’। যার আভিধানিক অর্থ কয়েকটি হতে পারে। যেমন: বৃদ্ধি, বিকাশ, সংখ্যাধিক্য ও ক্ষমতা ভূপৃষ্ঠ থেকে উঁচুস্থান, শিশুর বেড়ে ওঠা ইত্যাদি
পরিভাষিক অর্থে- ঋণ গ্রহণ বাবদ ঋণের পরিমাণের হিসাবে যে অতিরিক্ত হিসাব নির্ণয় করা হয় তাকে সুদ বলে। আর এ অতিরিক্ত অর্থ ভোগকারীকে সুদখোর বলে। ‘‘সুদ বা রিবা হচ্ছে সেই বাড়তি অর্থ যার বিনিময়ে ঋণদাতা ঋণ পরিশোধের সময়টা আরো কিছু দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয়।’’ ইবনুল আরাবী র. বলেন: ‘‘রিবা তথা সুদ হচ্ছে সে বাড়তি দাম, যা কোন মালের বিনিময় নয়।’’ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী র. বলেন: ‘‘পারস্পরিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া মালের প্রবৃদ্ধিই সুদ বা রিবা।’’ আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালীন র. বলেন: ‘‘পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে প্রদেয় অতিরিক্ত পন্য বা অর্থই রিবা বা সুদ।’’ সুদ যে কোন অবস্থাতেই হোক না কেন ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনে হারাম। তাছাড়া সুদ সর্বযুগে এবং সবসময় ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে, যা আমরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও সভ্যতার দিকে দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট জানতে পারি। যা আল-কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিও আল্লাহ্ একই বিধান দিয়েছিলেন যেমনটি দিয়েছিলেন ইয়াহুদীদের প্রতি। এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিল শরীফে বলা হয়েছে: ‘‘যাহারা তোমাদের মঙ্গল করে, তোমরা যদি তাহাদেরই মঙ্গল করিতে থাক, তবে তাহাতে প্রশংসার কি আছে? খারাপ লোকেরাও তো তাহা করিয়া থাকে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন