শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

ঈদ সাজে সাজাতে কর্মব্যস্ত টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লী

প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) থেকে মো. রেজাউল করিম ঃ আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। দিনটিকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ঘরে ঘরে মহোৎসব। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর এই আনন্দের দিনটিকে আরো আনন্দময় করতে প্রত্যেকেই চাই নতুন কাপড়। নারীর চাই নতুন শাড়ী। আর সেই নতুন শাড়ীটা যদি হয় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ী, তাহলে আনন্দটা আরেকটু বেশী। আর ঈদের দিনের জন্য পুরুষদের চাই অন্তত একটি পাঞ্জাবী। টাঙ্গাইলের তাঁতের পাঞ্জাবীর প্রতি পুরুষদের এখন অনেকটাই দুর্বলতা। নারী পুরুষদের সেই চাহিদা পূরণ করতে ব্যস্ত এখন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী।
ঈদকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল শাড়ীতে যোগ হয়েছে বাহারি রঙ আর নতুন কারুকাজ। ঈদের আগেই নিপুঁন হাতে ঈদের বিশেষ শাড়ি তৈরি শেষ করতে হবে। এ কারণেই মূলত তাঁত পল্লী এখন উৎসবমুখর আর তাঁতীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। টাঙ্গাইল সদরের বাজিদপুর, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ও চন্ডী ও কালিহাতীর বল্লা রামপুরের তাঁত সমৃদ্ধ এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। ভোর হতে শুরু হয় তাঁতের সেই খটখটি শব্দ। রাতভর কাজ করেও তাঁতীর ক্লান্তি নেই। প্রতিযোগিতা একটাই, উৎপাদন যত বেশী হবে, সাপ্তাহিক বিল ততো বেশী পাবে। উৎপাদিত শাড়ীর মুজুরীর ওপর নির্ভর করবে সাধারণ তাঁতীদের ঈদ আনন্দ।
এক সময় দেশীয় শিল্পীদের নিপূঁন হাতে তৈরি মসলিন কাপড় দেশ বিদেশী রমণীদের নজর কেড়েছিল। সময়ের বিবর্তনে পুরনো মসলিনের কথা আধুনিক নারীদের স্মৃতিতে ধারন না থাকলেও বর্তমানে টাঙ্গালের তৈরি তাঁতের শাড়ী সেই মসলিনের মতই দেশ-বিদেশী রমনীদের মনে স্থান করে নিয়েছে। একদিকে ঈদ অন্যদিকে হরতাল-অবরোধের স্থিতিশীলতা তাঁত শিল্পের মন্দা অবস্থা অনেকটাই কেটে উঠেছে। উৎপাদন ও বাজার উভয়ই ভাল যাচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে নেমছে নতুন শাড়ি। ভিন্ন বুটি আর নতুন নকশায় তৈরি এই শাড়ি শুধু ঈদ উৎসবের জন্য। দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতের শাড়ির হাট টাঙ্গাইলের করটিয়া ঘুরে দেখা যায়, তাঁতীরা তাদের উৎপাদিত কাপড় নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। স্থানীয় ও দূর থেকে আসা অধিকাংশ ক্রেতাদের চাহিদাই এখন ঈদের বিশেষ শাড়ি। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে অনেকটাই উপযোগী টাঙ্গাইল শাড়ি। মূল্যসীমা হাতের নাগালে রয়েছে সুতি শাড়ি। যার খুচরা মূল্য ৩ থেকে ৪শ’ টাকার মধ্য। এছাড়া সিল্ক ,সপসিল্ক, রেশন ও দুতারের মধ্যেও রয়েছে উন্নতমানের ঈদের শাড়ি। যার বাজার মূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
তাঁত শিল্পের সুতা প্রস্তুত আর রঙ করা থেকে শাড়ী প্রস্তুতসহ শাড়ী বিক্রি পর্যন্ত সম্পৃক্ত সবারই চলছে কর্মব্যস্ত।
টাঙ্গাইল শাড়ির প্রধান কাঁচামাল সুতার ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যবসাও জমে উঠেছে। উন্নতমানের সুতা আমদানি করছে পার্শ¦বর্তী দেশ ইন্ডিয়া ও চীন থেকে। আমদানিকৃত সুতা দেশে পছন্দমতো রঙ করা হচ্ছে। মধ্যম শ্রেণির সুতা দেশেই প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য তাঁত পল্লীতে তৈরি হয়েছে ভিন্ন কারখানা। এখানে কাঁচা সুতা ধৌত করে পানিতে সিদ্ধ করে পাকা সুতায় রূপান্তর করা হয়। চন্ডীতে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার কারিগর নীলা দাস বলেন, সুতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব কারখানাতে কারিগরদের ব্যস্ত সময় কাটছে।
এদিকে পাঁকা সুতাকে রঙ করার জন্য এ অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু রঙ কারখানা। ধুলটিয়া গ্রামের রংকর সাজাহান বলেন, অনেক তাঁত বন্ধ হওয়ায় সুতা রঙ করা কমে গেছে। তবে ঈদের কাপড় তৈরি জন্য এড়াও অনেকটা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
সুতা রঙিন করতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় রঙ। এলাকায় তাঁতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রঙের দোকানে বেচাকেনা কমেছে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। তবে ঈদের সামনে রঙের দোকানেও বেচাকেনা অনেকটাই বেশী। রঙ বিক্রেতা পরেশ পাল বলেন, প্রতি কেজি রঙের খুচরা মূল্য ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা। শাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিক্রি নেমেছেছিল ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন তিনি রঙ বিক্রি করছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
সুতা প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাকাকরণ, রঙ করার পর শাড়ি বানানো উপযোগী হয় সুতা। বিভিন্ন সুতার দোকান ঘুরে এখানেও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। সুতা বিক্রি বেড়েছে। সুতা বিক্রেতা আকবর মিয়া ও আব্দুল খালেক মঞ্জু বলেন, সুতা বিক্রি অনেকটাই বেড়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ঈদের কারণে তাঁতীরা আগের চেয়ে বেশী শাড়ী উৎপাদন করছে । ফলে সুতার প্রয়োজন বেড়েছে।
সারা বছর এ পেশার লোকজন কোন রকম সময় পার করলেও ঈদের সময়ে নকশা তৈরিকারকদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পারি দিচ্ছে। আমদানি রপ্তানী বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন ডিজাইন যোগ হচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ীতে। নকশা তৈরিকারক আবুল হোসেন বলেন, ঈদের জন্য টাঙ্গাইল শাড়ির কদর বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পে নতুন ডিজাইন নিচ্ছেন মালিক পক্ষ। এ শিল্পের সচল অবস্থা ধরে রাখতেই নতুন নতুন নকশা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নকশা তৈরি কারকরা।
টাঙ্গাইল তাঁত শিল্পী সমিতির আহবায়ক বিবেক বসাক বলেন, হরতাল-অবরোধে উৎপাদিত শাড়ি আমদানি রপ্তানি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে ঈদকে সামনে রেখে এ শিল্পে পরিবর্তন এসেছে। কারিগরসহ কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত সকলে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন