সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা তুরস্ক করছে, তার প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা। ইউরোপীয় দেশগুলো এ কাজে সমর্থন না দিলে আঙ্কারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের জন্য নিজের সীমান্ত খুলে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে তুরস্ক। খবর আনাদোলুর। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান গত শনিবার ইস্তাম্বুলে এক বক্তৃতায় এ সতর্কবার্তা দেন। তিনি দাবি করেন, তুর্কি সেনাবাহিনী সিরিয়ার ভেতর থেকে তুরস্কে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের চেষ্টা করছে এবং ইউরোপীয়দের এ প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাতে হবে। এরদোগান বলেন, রাশিয়ার সোচিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সা¤প্রতিক বৈঠকে উত্তর সিরিয়ার নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে কুর্দি গেরিলাদের সরে যাওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে।
এরদোগান নির্ধারিত ওই অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার জন্য কুর্দি গেরিলাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা তা না করলে আবার অভিযান শুরু করবে তুর্কি সেনাবাহিনী। কুর্দি গেরিলাদের দমনের নামে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ তার তীব্র বিরোধিতা করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলছেন, তার সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজকে সমর্থন জানাতে হবে। গত ৯ অক্টোবর থেকে তুর্কি বাহিনী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালায়। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও তুর্কি-সিরিয়া সীমান্ত থেকে কুর্দি গেরিলাদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে আঙ্কারা ওই সামরিক অভিযান শুরু করে। অবশ্য টানা ৯ দিনের অভিযানের পর ১৮ অক্টোবর সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তুর্কি বাহিনী। পরে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সীমান্ত থেকে কুর্দি গেরিলাদের সরে যাওয়ার শর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় তুরস্ক। এর আগে সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তে কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তুরস্ক। শনিবার আঙ্কারায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস-এর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
সিরিয়ার সশস্ত্র কুর্দি বিদ্রোহীদের নিজ দেশের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করে তুরস্ক। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের উৎখাতে অভিযান শুরু করে আঙ্কারা। তুরস্কে বসবাসরত ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে পুনর্বাসনের জন্য সেখানে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির জন্য এ অভিযান শুরু করে দেশটি। পরে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় গত ১৭ অক্টোবর ৫ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় আঙ্কারা। এ সময়ের মধ্যে কুর্দি বিদ্রোহীদের অঞ্চলটি ছেড়ে দিতে বলা হয়, যাতে নিজ দেশে আশ্রয় নেওয়ার শরণার্থীদের তুরস্ক সেখানে পুনর্বাসন করতে পারে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীরা অঞ্চলটি না ছাড়লে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তুরস্ক। সূত্র : আনাদোলু, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন