ভোক্তা অধিকার ফোরামের কথা দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ
কিছুতেই কমছে না পেঁয়াজের দাম। লাগামহীন ঘোড়ার মতো এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পেঁয়াজ স্বমহিমায় তার তেজ বাড়িয়েই চলছে। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। বাজারে ওঠা হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। নতুন এই হালি পেঁয়াজ বাজারে এলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি। মিয়ানমার ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও বাজারে প্রচুর রয়েছে। টিসিবিও বিভিন্ন স্থানে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, তবুও এর ঝাঁজ কমছে না।
ভোক্তা অধিকার ফোরামের মতে, সরকার পেঁয়াজের দাম কমাতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। জানা গেছে, একশ্রেণির অসাধু আড়তদার দেশি পেঁয়াজ মজুদ করার ফলে সেগুলো পচে যাওয়ার পাশাপাশি চারা গজাতে শুরু করেছে তবুও তারা দাম কমাচ্ছেন না। এর ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি দেড়শ’ টাকা ছুঁই ছুঁই। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ত যোগান থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম কমছে না। আর সরকারও ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজেও তাদের ব্যর্থতা শিকার করেছেন। গতকাল এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাজার মনিটরিং করে পেঁয়াজের দাম শতভাগ কমানো সম্ভব নয়। পেঁয়াজের দাম না কমার জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দায়ী। বাজারে সরকারের ১০টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। কিন্তু মনিটরিং করে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ এত জনবল নেই।
অভ্যন্তরীণ ঘাটতি মেটানোর কারণ দেখিয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। দেশটির এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে। কেজিপ্রতি ৫০ টাকার পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ১৪০ টাকা হয়েছে।
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় ভারতে পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। সর্বকালের সবচেয়ে কম দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে দেশটিতে। গতকাল লাসাগাঁও অনলাইন মার্কেটে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬ থেকে ১০ রুপি দরে বিক্রি হয়েছে। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দেশটির কৃষকরা এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছেন।
বাজারে আসছে নতুন পেঁয়াজ। অন্যদিকে মিয়ানমার ও মিসর থেকে আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তার মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। তবে চাহিদার তুলনায় সেটি একেবারেই নগণ্য। সব মিলিয়ে বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি না থাকলেও দাম নিয়ে নিত্যপণ্যটির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এমন বাস্তবতায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলো। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার আমাদের শিক্ষা হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে আমাদের দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করব। যে ৬ থেকে ৮ লাখ টন ঘাটতি সেটা উৎপাদন করতে পারলে আমাদের সমস্যা থাকবে না।
পেঁয়াজের বর্তমান সঙ্কট দূর করতে মিসর থেকে ৬০ হাজার টন আমদানি করা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ১০ হাজার টন আসার পথে। আরো ৫০ হাজার টন দুই-একদিনের মধ্যে আসবে। এত দূর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের মাইন্ড সেটআপ করতেও একটু সময় লেগেছে। তাই ধীরে ধীরে পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন