রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

টাইগারদের নৈপুণ্যে কুপোকাত ভারত

ভারত : ২০ ওভারে ১৪৮/৬ বাংলাদেশ : ১৯.৩ ওভারে ১৫৪/৩ ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

মোঃ জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

উইনিং ছক্কাটা এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকেই। তবে ম্যাচ জয়ের উচ্ছ্বাসটা ছাপিয়ে গেছে মুশফিকুর রহিমকে। কারণটাও অজানা নয়, তার ব্যাটে চড়েই যে অসাধ্য সাধন করে প্রথম বারেরমতো টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল দিল্লিতে-ক্রিকইনফো


বাংলাদেশের জয় কোন ‘অঘটন’ নয়। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রসঙ্গে এমনটাই বলেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দলের প্রাণভোমরা সাকিব আল হাসান ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের আক্ষেপকে শক্তিতে পরিণত করে ভারতের বিপক্ষে ‘ঐতিহাসিক’ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। 

ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ইতিহাস সমৃদ্ধ ছিল না বাংলাদেশের। ইতিপূর্বের আট লড়াইয়ের সবকয়টিতেই হেরেছিল টাইগাররা। দিল্লিতে মাহমুদউল্লাহ শুধু ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষেই জিতলেন না। সেই সঙ্গে জিতলেন দিল্লির দূষণের বিপক্ষেও। জিতলেন নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণেও। জিতলেন সেরা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতিতে বলীয়াণ আত্মবিশ্বাসেও।
ম্যাচের শুরুতে টসের ভাগ্যটাও এদিন ছিল দলপতি মাহমুদউল্লাহর। টসে জিতে সাহস দেখিয়ে ভারতকে পাঠিয়েছেন ব্যাটিংয়ে। বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত আঁটসাট বোলিংয়ে শক্তিশালি ভারতকে নিজেদের কন্ডিশনে মাত্র ১৪৮ রানে আটকে রাখে। জবাবে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের এক হাজারতম ম্যাচটি ৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতে দিল্লিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয় মাহমুদউল্লাহ ব্রিগেড। এ জয় যেন ভারত-জয়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের হাজারতম ম্যাচটিতে দিল্লির দূষণের কারণে চারদিক ছিল ধোঁয়াচ্ছন্ন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড়ই যেন হয়ে উঠেছিলেন এক একটি জ্বলন্ত প্রদিপ। হাজার ওয়াটের আলো জ্বালিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতীয়দের চোখে মুখে ছেড়ে দিয়েছেন বিষাদের ছায়া। রোহিতবাহিনী যেন হয়ে ওঠে অন্ধকারের প্রতিচ্ছ¡বি।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪ রানের। হাতে ছিল ৭ উইকেট। রোহিত শর্মা আস্থা দেখিয়েছিলেন অভিষিক্ত শিভাম দুবেতে। প্রথম বলেই ডট। পরের বলে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ২ রান। তাতেই চাপে পড়ে অনভিজ্ঞ দুবে। পরের বলে দিয়ে বসেন একটি ওয়াইড। তখন ভারত ও বাংলাদেশের স্কোর সমান। তৃতীয় বলে মাহমুদউল্লাহর ভাবনা বোধহয় ছিল ভিন্ন ধরনের। ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়টি তিনি রাঙাতে চেয়েছিলেন নিজের মতো করেই। দুবের শর্ট লেন্থের ডেলিভারিতে পুল করে মিড উইকেটের উপর দিয়ে পাটিযে দেন গ্যালারিতে। ছয় রান। গ্যালারি স্তব্ধ। ভারতের বেশিরভাগ দর্শকের হাতে থাকা পতাকাসহ তারা ছেড়ে যায় মাঠ। অবশিষ্ঠ দর্শকেরাই থেকে গেলেন উদযাপনের জন্য। চারদিকেই শুধু লাল-সবুজের পতাকা।
স্বাগতিকদের দেয়া এই ১৪৯ রান তাড়া করাও সহজ ছিল না। শুরুতে দীপক চাহারের প্রথম ওভারেই মাত্র ৭ রানে ফিরে যান লিটন দাস। এরপর সৌম্য সরকার ও অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাঈম জয়ের আশা দেখিয়ে গেছেন। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। যুজবেন্দ্র চাহালের ঘূর্ণি ঠিকমতো বুঝতে না পেরে ২৬ রানে ফিরে যান নাঈম। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে এগুচ্ছিলেন সৌম্য। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ৬০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। ঠিক সে সময়েই ঘটে বিপর্যয়। খলিল আহমেদের বলে কাট করতে গিযে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান এই বাঁহাতি ওপেনার।
কিন্তু মুশফিক ঠিকই পণ করেছিলেন-জয় নিয়েই ফিরবেন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ১৭ বলে ৩৫ রান তাড়া করার পরিকল্পনা আটেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। একসময় শেষ দশ বলে প্রয়োজন ছিল ২০ রানের। বলপ্রতি দুই রান। সেইসময় খলিলের বলে টানা চারটি চার মেরে ম্যাচটিকে করে ফেলেন একপেশে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে জয়সূচক রান আসলেও ম্যাচের মূল নায়ক ৬০ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক। ভারতের হয়ে চাহার, খলিল ও চাহাল একটি করে উইকেট নেন।
এরআগে আমিনুল ইসলাম, আফিফ হোসেন ও শফিউল ইসলামের বোলিং দৃঢ়তায় ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান তুলতে পেরেছিল স্বাগতিকরা। শুরুতেই টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান সফরকারি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দলপতির সিদ্ধান্ত সঠিক প্রথম করতে প্রথম ওভারকেই বেঁছে নেন শফিউল। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ৯ রানে ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর আফিফ, আমিনুলও চেপে ধরে স্বাগতিকদের। ভারতের পক্ষে ধাওয়ান সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন। তবে বল খরচ করেছেন ৪২টি। ম্যাচের ১৬তম ওভারে একশ পেরুনো ভারতকে দেড়শর কাছাকাছি নিয়ে যান ক্রুনাল পান্ডিয়া (৮ বলে ১৫) ও ওয়াশিংটন সুন্দর (৫ বলে ১৪)।
বাংলাদেশের হয়ে আমিনুল ও শফিউল নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। এছাড়া একটি উইকেট শিকার করেছেন আফিফ। এছাড়াও আল আমিন, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ উইকেট না পেলেও রান দিতে কার্পণ্য করেছেন। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ৭ নভেম্বর। রাজকোটে সেই ম্যাচেও মাহমুদউল্লাহর কাছে প্রত্যাশাটা এমনই থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
mahbubur rahman babu ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
OVINONDON
Total Reply(0)
মজলুম জনতা ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৮:২৩ এএম says : 0
সাকিব তামিম যখন দলে নেই।তখন কি আর আছে।কিন্তু আমাদের খেলোয়ারদের চোখে মুখে ফুটে উঠে ছিল,হারানোর যেহেতু কিছুই নেই,আছে বিশ্ব জয়ের বাসনা ।তাই এ অবি স্বরনীয় জয় এনে দিয়েছে।।
Total Reply(0)
Aminul Islam ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৮:৫১ এএম says : 0
এটা তো প্রমো, সিনেমা এখনো বাকি, আসছে, অপেক্ষা করুন, দাদারা।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন