গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জয়নাব বিনতে হোসেন কোন ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। এমনই প্রমাণ মিলেছে বাংলা বিভাগের বিভিন্ন অফিস নথিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম একাডেমিক সভায় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য ১ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মটি মেনে চললেও জয়নাব বিনতে হোসেন উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মোটেও এ নিয়ম মানতেন না। দেখা যায় তিনি উত্তরপত্র নিয়ে ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে তা মূল্যায়ন করেছেন। যা ওই বিভাগের কোন শিক্ষকই করেননি। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ‘উপন্যাস: প্রাগ্রসর পাঠ’ কোর্সের মাত্র ৩৫টি উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য তিনি ৫ মাস ২৫ দিনের মত সময় নিয়েছেন। এ কারণে বিভাগটির শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ওই শিক্ষকের একটি নম্বরপত্র দেরিতে দেয়ার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থী রত্না ঘোষ মানবিক অনুষদে প্রথম হয়েও ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
এছাড়া উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জয়নাব বিনতের পছন্দ অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে নির্বাচন না করায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় প্রধানের সাথে অসভ্য ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকের উপস্থিতিতে ওই শিক্ষকের শারীরিক ভাষা প্রদর্শনসহ অশালীন, রুচি বিবর্জিত আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে। এ সকল বিষয় নিয়ে বাংলা বিভাগের সাবেক সভাপতি জাকিয়া সুলতানা মুক্তা লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে বললেও সেগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে করেছেন ওই শিক্ষক। অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ নিয়ম অগ্রাহ্য করেও শুধুমাত্র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের আস্থাভাজন থাকায় নিয়মনীতি না মেনেও পার পেয়ে যেতেন শিক্ষক জয়নাব বিনতে।
মেধাবী শিক্ষার্থী রত্না ঘোষ বলেন, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার পিতা মারা যান। চরম দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পড়াশোনা করে এসএসসিসহ সব পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছি। বাংলা বিভাগের প্রভাষক জয়নাব বিনতে হোসেনের গাফিলতিতে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাইনি।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, সহকর্মী হিসেবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রথম থেকেই তার সীমাহীন গাফিলতি প্রত্যক্ষ করেছি। সাবেক ভিসির সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলায় শিক্ষক হিসেবে তার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের ব্যাপারে কখনও জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়নি। তাছাড়া তৎকালীন প্রশাসনের মদদপুষ্টে বিভিন্ন অনিয়ম করেও ওই শিক্ষক কখনো কোন বিষয়ে জবাবদিহি করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জয়নাব বিনতে হোসেন বলেন, সত্যি বলতে আমি আসলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের নিয়মগুলো জানতাম না। আমার আসলে উচিত ছিলো নিয়মগুলো জেনে নেয়া। নতুন আসার কারণে আমার জানার অনেক ভুল ছিল। এরপর থেকে নিয়মগুলো জেনে নিবো। তবে বিভাগীয় প্রধানের সাথে অসভ্য আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সাবেক সভাপতি জাকিয়া সুলতানা আমার লিখিত বক্তব্য চেয়েছিলেন, যা তিনি সঠিক নিয়ম মেনে করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন বলেন, কোন শিক্ষক অন্যায় কিছু করলে বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সে বিষয়ে বিভাগের সভাপতি লিখিত বক্তব্য চাইতে পারেন। কোন শিক্ষক তা অমান্য করলে তিনি নিয়ম ভঙ্গ করলেন বলে ধরা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন