আবু হেনা মুক্তি : ঈদুল-ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। ঈদের কেনাকাটায় এখন বেশ ব্যস্ত শিল্পনগরী খুলনা। প্রতিটি বিপনী বিতান, ফ্যাশন হাউস, ফুটপাতের দোকানসহ গোটা নগরের ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিপনী বিতানগুলো মুখর হচ্ছে ক্রেতাদের পদভারে। এবারের ঈদে খুলনার নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শাড়ী। তবে ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকাদের পরিহিত থ্রি-পিচও বাজার দখল করে নিয়েছে। কেনাকাটাও হচ্ছে আশানুরূপ। আর তরুণরা ঝুঁকেছেন জিন্স আর গ্যাভার্ডিং প্যান্ট এবং সুতী পাঞ্জাবীর দিকে।
দোকানীরা জানান, খুলনায় এবার নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে শাড়ী। উজ্জ্বল রং ও জঁমকালো ডিজাইন, ক্যানভাসজুড়ে কারচুপি, এমব্রয়ডারি কিংবা পাথরের কারুকাজ সম্পন্ন শাড়ির দিকে নারীদের নজর বেশি। এদিকে ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে প্রতি বছরের মতো এবারও নগরীর খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, সেফ এন্ড সেভ, নিউমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, জলিল মার্কেট, আক্তার চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন রূপে সেজেছে। এসব দোকানে নারীদের পছন্দের জামদানি, বেনারশী, টিস্যু, মসলিন, টাঙ্গাইল চিত্রা, টাঙ্গাইল বুটিকস, টাঙ্গাইল বালুচুরি, টাঙ্গাইল সফট সিল্ক, মার্চ স¬াইচ কটন, খাদি, হাফ সিল্ক, সুতি, এন্টিকস, রাজশাহী সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন, টুয়েল কটন, কাতান অপেরা, জুট কাতান, আশিকে-২, কাটিয়াল ঝুট, জর্জেট বেনারশি, কাঞ্জিবনন ও বিভিন্ন ধরনের তাঁতের শাড়িসহ দেশি ও বিদেশী শাড়ীর সমাহার ঘটেছে।
জলিল মার্কেটে শাড়ী কিনতে আসা আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্রী শরীফা রহমান বলেন, এবারের ঈদে থ্রি-পিচের পরিবর্তে শাড়ী কিনেছি। প্রতিবারইতো থ্রি পিচ কেনা হয় তাই এবার শখ করে জর্জেটের শাড়ি কিনলাম। গৃহবধূ নেছাউন বলেন, অন্য ঈদের চেয়ে এবার অনেক সুন্দর সুন্দর শাড়ি এসেছে। নাসিমা খাতুন বলেন, গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের পছন্দ শাড়ী। তাদের জন্য প্রতি ঈদেই শাড়ী কিনতে হয়। এবার দাম বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। জলিল মার্কিটের মেসার্স পালকি শাড়ী বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. অহিদ উল্লাহ্ হাওলাদার জানান, আবারও শাড়ীর কদর ফিরে এসেছে। বিশেষ করে এবার জামদানি, বেনারশী, টিস্যু, মসলিন, টাঙ্গাইল, রাজশাহী সিল্ক, কাতানসহ বিভিন্ন তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফ্যাশন সচেতন নারীরা রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং ও জমকালো ডিজাইন, ক্যানভাসজুড়ে কারচুপি, এমব্রয়ডারি কিংবা পাথরের কারুকাজ করা শাড়ি কিনছেন। এসব শাড়ী সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ী বিক্রির পরিমাণ বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গৃহসুখন ফ্যাশান হাউজের মালিক সালমা রহমান বলেন, মোমবাটিক, টাইডাই বাটিক, টাঙ্গাইলের নীল কমল, জামদানি, সফুরার সিল্ক, টিস্যু, রাজশাহী সিল্কসহ নকশা করা হাতের কাজের বিভিন্ন শাড়ির প্রতি এবারের ঈদে নারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বস্ত্র মেলার ম্যানেজার সন্তু লস্কর বলেন, মোটামুটি দামের মধ্যে টাঙ্গাইল বুটিকস, বøক প্রিন্ট, সুতির শাড়ী বেশি বিক্রি হচ্ছে। তার দোকানে বাহা ১৫শ’ টাকা, ধুপিয়ান সিল্ক ১৫শ’ থেকে ৮ হাজার টাকা, দেশি টাঙ্গাইল ১৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা, জুট কাতান ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, টাপুর টুপুর ১১শ’ টাকা, লেহেঙ্গা সিস্টেম শাড়ি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কিরণমালা, পাখি, বর্জ্যমালা, বাজিরাও মাস্তানি, দিলওয়ালা, সারারা, জারাসহ দিলি বুটিকস, অর্গানডি বুটিকস বেশ বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, এবারের ঈদে তরুণদের নজর সুতি পাঞ্জাবির দিকে। বিশেষ করে, সিল্ক, সুতি, খাদি কাপড়ের শর্ট পাঞ্জাবির দিকে ঝোঁক বেশি। নগরীর খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, সেফ এন্ড সেভ, নিউমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, জলিল মার্কেট, আক্তার চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাঞ্জাবির পসরা সাজানো হয়েছে। কাটছাঁট রং আর বৈচিত্র্যের পাঞ্জাবিতে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এবারের ঈদে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবির প্রাধান্য থাকছে। লাল, খয়েরি, কমলা, নীল, কালা, সাদা, ছাই, হালকা সবুজ বেগুনি ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটগুলোতে।
পাঞ্জাবি কিনতে আসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপিনের ছাত্র মো. আব্দুল্লাহ জানান, সবাই চায় একটু ভিন্ন ভিন্ন রং আর ঢঙয়ের বৈচিত্র্যের পাঞ্জাবি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) যন্ত্র কৌশল অনুষদের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান বলেন, ঈদ উৎসবকে যেন আরও আনন্দময় করে তোলে নতুন পাঞ্জাবি। তাই পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদ ভাবাই যায় না। তিনি জানান, ঈদের নামাজ ছাড়াও আজকাল ঈদ পুনর্মিলনী, ঈদের সন্ধ্যায় ও রাতের পার্টিতে শর্ট পাঞ্জাবি পরছে ছেলেরা। তরুণের পাশাপাশি, শিশু-কিশোর বৃদ্ধরাসহ সব বয়সের ছেলেরাই ঈদে পাঞ্জাবি পরেন।
অপরদিকে, এবারের ঈদে খুলনার তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে কিরণমালা নামের পোশাক। এছাড়াও রুচি ভেদে কারও কারও পছন্দ পাখি, বর্জ্যমালা, বাজিরাও মাস্তানি, দিলওয়ালা, সারারা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের পছন্দের তালিকায় আছে আড়ি ও লেচ থ্রি-পিস। তবে তরুণীদের প্রায় সবারই অভিযোগ পোশাকের দাম অনেক চড়া। ক্রেতা নাজমুন নাহার বলেন, ঈদের পোশাকে আলাদা বৈচিত্র্য চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের তার অনেক বান্ধবী এবারের ঈদে কিরণমালা পোশাক কিনেছেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র কৌশল অনুষদের শিক্ষার্থী আফরোজা খানম বলেন, ঈদের পোশাকে ফ্যাশন সচেতনতা একটু বেশি থাকে।
বড় বাজারের নিউ ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. আব্দুল্লাহ জানান, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে সালোয়ার-কামিজে। বিগত কয়েক বছরের শর্ট ও মিড কামিজকে পেছনে ফেলে আবারও ফিরে এসেছে লম্বা কাটের কামিজ। এ লাইন, স্ট্রেট কাট, আমব্রেলা কাট, কোনা কাট, ডবিøউ কাট, ভি কাট-এসবই এবার ঈদের ট্রেন্ড। তাদের হাউজে ঘন ও হালকা জরি, স্টোন, চুমকি এবং অ্যান্টিক ডিজাইনের জাঁকজমক ও চমকপ্রদ পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।
রেলওয়ে মার্কেটের দোকানী মো. আব্দুর রহমান জানান, এবারের ঈদে তরুণীদের পছন্দের কিরণমালা, পাখি, বর্জ্যমালা, বাজিরাও মাস্তানি, দিলওয়ালা, সারারা এসব পোশাকের দাম এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার মার্কেটে পোশাকের নতুন সংযোজন হিসেবে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি ঘের এসেছে। এর প্রতি ক্রেতাদের প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লেহাঙ্গা। এবার একেকটি লেহাঙ্গা বিক্রি হচ্ছে সাত হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন