শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রঙ ছড়াচ্ছে গোলাপি বল

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

উপমহাদেশের প্রথাগত উইকেট মানেই স্পিনবান্ধব। এখানে খেলতে আসা দলগুলোর বাড়তি প্রস্তুতি থাকে স্পিন পরীক্ষা মোকাবেলা করার। পেসনির্ভর উইকেটের দেখা মেলা এককথায় দুষ্কর। বাংলাদেশ কিংবা ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতের পিচের ঘূর্ণিপাকে কাবু হওয়া দলের ও তাদের খেলা ম্যাচের সারি অনেক লম্বা। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ইন্দোরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দেখা গেল অন্য এক ভারতকে। যেখানে স্পিন নয় বরং পেস আক্রমণই ছিল তাদের মূল শক্তি। এবার দ্বিতীয় ম্যাচেও একই আক্রমণের বিপক্ষে পরীক্ষা দিতে হবে মুমিনুলদের। অবশ্য দিবা-রাত্রির কোলকাতা টেস্টে গোলাপি বলের লড়াইয়ে ‘অভিষেক’ হচ্ছে দু’দলেরই। এর আগে বাংলাদেশ-ভারত কখনোই গোলপী বলে খেলেনি। ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকে হয়েছিল বাংলাদেশের। এবার গোলাপি বলেও প্রতিবেশী দলের বিপক্ষে অভিষেক হতে যাচ্ছে।

প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের সামনে বাংলাদেশ দুর্বল। তারমধ্যে লাল বলের পরিবর্তে গোলাপি বলে প্রস্তুতি নেয়া আসলেই মুশকিল। যেখানে বর্তমান স্কোয়াডের কোন টাইগারের নেই পূর্ব অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে ভারতীয় দলের পূজারা, আগারওয়াল, শামিসহ বেশকয়েক জনের জানা আছে গোলাপি বলের ক্যারিশমা।
ম্যাচের সময়ে পরিবর্তনে নতুনভাবে খাপ খাওয়ানো একটি চ্যালেঞ্জ। লাল বলের তুলনায় বলের গ্রিপিং ও মুভমেন্টের তারতম্য থাকায় ভাবতে হবে বিষদভাবে। এবারের পিচেও ব্যবধানটা চোখে পড়ার মতোই। রাতে খেলার কারণে আলোক সল্পতার ব্যাপারও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সবকিছুর পরও সন্ধ্যার পর থেকেই রাত পর্যন্ত শিশিরের প্রভাব ভোগাবে বোলার-ব্যাটসম্যান ও ফিল্ডারদের।

সময়ে পরিবর্তন
প্রাক শীতের আমেজ এখন কলকাতায়। মাঠে শিশিরের কথা মাথায় রেখেই খেলা শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। শেষ হবে রাত ৮টায়। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে চারটা দশ মিনিট পর্যন্ত ৪০ মিনিটের লাঞ্চের বিরতি। এরপর ৪টা ১০ থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় সেশন। ৬টা ১০ মিনিটে খেলা বন্ধ হবে ২০ মিনিটের চা পানের বিরতির জন্য। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে খেলা চলবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত।

উইকেটে লম্বা ঘাস
গোলাপী বলের খেলায় পিচ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চোখের দেখায় মানিয়ে নেয়াটা হতে পারে বড় সমস্যা। গ্রাউন্ড স্টাফদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ব্যাটিং দল ও ফিল্ডিং দলের মাঝে সুযোগে ভারসাম্য তৈরি করা। সুজন মুখার্জি ইডেনের প্রধান গ্রাউন্ডম্যান। তিনি জানিয়েছেন, পিচে ৪ মিলিমিটার ঘাসের আবরন থাকবে। ৬ মিলিমিটার ঘাসের আবরন গোলপী বলের কার্যকারিতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে উপযোগী। কিন্তু ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার দিবা-রাত্রির ম্যাচে অ্যডিলেড ওভালে ১১ মিলিমিটার ঘাসের আবরন ছিল, যা ঠিল চোখে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য।

পেসারদের স্বর্গরাজ্য
সবুজ ঘাসের আবরনে সবুজ ঘাসের পিচের আদ্রতা থেকে সুবিধা পাবেন বোলাররা। পেসারদের জন্য অনেকটা কার্পেটের মতো একটি ব্যাপার কাজ করবে। পিচে অতিরিক্ত কোন কাজই করেননি বলে জানিয়েছেন ইডেনের প্রধান গ্রাউন্ডম্যান। এমনকি রোলিংও করা হয়নি পিচে।

ফ্যাক্টর শিশির
দিবা-রাত্রির ম্যাচে শিশির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। কারো পক্ষে আন্দাজ করা সম্ভব নয়, আসলে কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে। প্রাক শীতের আমেজে কোলকাতায় সাড়ে চারটা নাগাদ ডুবে যায় সূর্য। শিশিরের প্রভাব প্রথম দুই সেশনে তেন প্রভাব পেলবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে শেষ সেশনে শিশিরের কথা মাথায় রাখতে হবে। বল গ্রিপ করার ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পড়বেন বোলার ও ফিল্ডাররা। অবশ্য ম্যাচ শুরুর আগে থেকে আউটফিল্ডে পানি দেয়া বন্ধ রাখলে কিছুটা সুফল আশা করা যেতে পারে।

গোলাপি বলের প্রথম ও শেষ
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর বাইশ গজে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলেছিল নিউজিল্যান্ড। অজিরা সেই ম্যাচ চার উইকেটে জিতেছিল। লেখা হয়েছিল নয়া ইতিহাস। চলতি বছর জানুয়ারিতে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কা দিন-রাতের টেস্ট খেলেছে। অজিরা ইনিংস ও ৪০ রানে জেতে।

দু’দলে পূর্ব অভিজ্ঞতা
ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি ও ঋদ্ধিমান সাহা সিএবি সুপার লিগের ফাইনালে খেলেছিলেন। চেতেশ্বর পূজারা, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, ঋষভ পন্থ ও কুলদীপ যাদব প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গোলাপি বলে খেলেছেন আগে। অন্যদিকে এই বলে খেলার অভিজ্ঞতা নেই কোন বাংলাদেশীর। তবে বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন মনে করছেন, লড়াইটা মূলত দুই দলের পেসারদের। যারা ভালো করবেন তারাই এগিয়ে থাকবেন কলকাতা টেস্টে।

তারতম্য কি শুধুই রংয়ে?
শুধু বাংলাদেশ-ভারত দু’দলই এ ম্যাচে অভিষেক করছে না। বরং বল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও। তাদের জন্য এটাই হবে প্রথম পরীক্ষা। এসজি-র গোলাপি বলে এর আগে কোন ম্যাচ হয়নি। গোলাপি বলের সিম কালো সুতো দিয়ে সেলাই করা, অন্যদিকে লাল বলের সিম ছিল সাদা সুতোর বোনা। এসজি-র বলের সেলাই হাতে করা, যা সিমের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমানিত হকে পারে। শিশিরের প্রভাবে বলের উজ্জ্বল অংশ বলকে রক্ষা করবে দীর্ঘসময়। বোলারদের জন্য সুইংয়েও সহায়তা করবে এই প্রক্রিয়া বলে ধারনা নির্মাতাদের।

ব্যাটসম্যানের সুবিধা
যদি ম্যাচে ব্যাটসম্যান আলোক সল্পতার অভিযোগ করে তাহলে ম্যাচ অফিসিয়াল চাইলে দ্রুত মাঠে লাইটিং চালু করতে পারেন।

দুই মাসকট
ভারতের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে দুই মাসকটের নাম রাখা হয়েছে পিংকু ও টিংকু।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন