(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
প্রিয় মহাদয়,
এতদিনে আপনাকে লিখতে পারিনি, এর জন্য কি চমৎকার করে ক্ষমা চাইতে পারতাম, যদি আপনি দশজনের মত সাধারণ একজন ব্যক্তি হতেন। আপনি তো ভালো করেই জানেন ,দুর্দিন এলে, সমস্যায় পড়লে আমরা আমাদের বন্ধুদের ভেতর সবচেয়ে আন্তরিক, অকৃত্রিম, সবার চেয়ে কল্যাণকামী বন্ধু ছাড়া অন্য কোথাও ছুটে যাই নে।
আমি নিশ্চিত, আপনি বিস্মিত ও ব্যথিত হবেন কিছু সংবাদ জেনে। ... ... শুনে অবশ্য আপনার খারাব লাগবে ,আমার এ পরিস্থিতির জন্য কয়েক জন ব্যক্তির নির্দয় ও রহস্যময় আচরণই দায়ী। এদের ভেতর একজন দিগম্বর মিত্র, যাকে অন্তত বন্ধু বলে ভাবতে আমি দ্বিধান্বিত হই নি। সমগ্র ঘটনাটা নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক। আপানার উপর আমার শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রয়েছে, এজন্য বিষয়টা আপনাকে জানাচ্ছি।
আসবার সময় আমার স্ত্রী ও দুটো শিশু সন্তানকে আমি কলকাতায় রেখে আসি। তখন আমার সম্পত্তির পত্তনিদার মহাদেব চট্টোপাধ্যায়ের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিমাসে ১৫০ টাকা করে আমার পরিবারকে দেবে। এ ব্যবস্থায় যাতে বিঘœ না হয় , সে ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছিলেন বাবু দিগম্বর মিত্র। সে টাকার কিছু পরিমাণ অগীম দেওয়া হয়েছিলো যা ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এটা ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের কথা।... ... ...বাবু দিগম্বর মিত্র দশমাস আগে আমাকে একটা চিঠি লেখেন, তারপর থেকে তাঁকে কমপক্ষে আট খানা চিঠি লিখেছি অথচ একটি চিঠিরও উত্তর পাই নি।
এ অবস্থায় আমাকে এখন ফরাসি জেলখানায় যেতে হবে। ... ... ... বাধ্য হয়ে গ্রেজ ইন (লন্ডনের গ্রেজ ইন বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে মধুসূদন ব্যারিস্টারি শিক্ষার জন্য ভর্তি হন) থেকে আমি ৪৫০ টাকা ধার নিযেছি। ঐ ইন এর বিচারকরা আমাকে বহি®‘ার করেছেন। ... ... ...কলকাতায় আমার ৪ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। বাবু দিগম্বর মিত্র যদি এরই ভেতর টাকা না পাঠিয়ে থাকেন , তাহলে সে টাকা থেকে কিছু টাকা আমাকে পাঠিয়ে আপনি আমাদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবেন, এটা আশা করছি। যদি ১৫০০০ টাকা নিতে পারেন , তাহলে তা থেকে দয়া করে আপনি এ দেনাগুলো পরিশোধ করে দেবেন-
মথুরামোহন কুন্ডু-১৭০০
সাগর দত্ত-প্রায় ৮০০
আপনি-১০০০
মধুসূদন মজুমদার-৫০০
... ... ...আগামী অক্টোবরের আগে যদি এ কাজটা করতে পারেন তা হলে আমি গ্রেজইন-এ ফিরে যেতে পারব, যার ফলে যথা সময়ে ভারত বর্ষে ফিরতে পারব। বাবু দিগম্বর নিষ্ঠুরভাবে আমাকে যে গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছে, একমাত্র আপনি সেই সীমাহীন সমুদ্র থেকে আমাকে উদ্ধার করতে পারেন, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যদি না পারেন, তাহলে আমার নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে।.. ... ...
চিঠির উপরে যে ঠিকানা আছে, সেই ফ্রান্সের ঠিকানায় আমাকে লিখবেন। ঈশ্বই ভরসা। শুধুমাত্র ঈশ্বরের কৃপা আর আপনার সহায়তা ছাড়া এদেশ থেকে ফিরতে পারব না প্রিয় মহাদয়!
আপনার বিশ্বস্ত (মধুসূদনের চিঠি/অনুবাদ: খসরু পারভেজ )।
এই চিঠিতে একজন প্রথিতযশা মহাকবির করুণ পরিনতি এবং অসহাত্বের কথা সাবলিলভাবে বিবৃত হয়েছে। হৃদয়বিদীর্ণ এই চিঠি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
বিখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিত রায় কিশোরদের জন্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। সেইসূত্রে কিশোরদের চিঠির উত্তর দিতেন তাদের সাহিত্যানুরাগ বিকশিত করার জন্য শত কাজের মাঝেও এই কাজটি তিনি নিরলসভাবে করে যেতেন। দেবযানী রায়কে লেখা , সত্যজিৎ রাযের একটি চিঠি।
ভাই দেবযানী,
তোমার দুটো চিঠিই পেয়েছি। তোমাকে ঙঁৎ ঋরষসং ঞযবরৎ ঋরষসং দেবো বলে কথা দিয়েছি, সেটা কিন্তু ভুলিনি। আপাতত সকাল সন্ধে টালিগঞ্জে কাটাতে হচ্ছে তাই বইটা জোগাড় করতে পারিনি। দিন চারেকের মধ্যেইপারব বলে আশা করছি।
তুমি সন্দেশের বিষয় যে সব মন্তব্য করেছ সেগুলো একদম ঠিক। খেলাধূলার বিভাগে একজন অপেক্ষাকৃত তরুন কাউকে রাখতে পারলে ভালো হতো(অজয় হোমের বয়স ৬৫ পেরিয়ে গেছে যদিও মনটা বেশ কাঁচা)। আসল ত্রুটি আমার মতে ছবির অভাব- যেটা সম্ভব ১। আরো অন্তত ৫০০ বেশী গ্রাহক হলে । ২।নিজেদের প্রেস থাকলে। ৩।কাগজের বাজার ভালো হলে। সন্দেশ এর অবস্থা এখনো দরিদ্র-অন্তত ‘আনন্দমেলা‘র তুলনায়।
আমি শুটিং-এর গল্প আরো লিখব। পূজোয় পাবে, কথা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে অবশ্যি আরো কিছু পাবে, শব্দ জব্দও পাবেÑতবে পূজো সংখ্যাতেই কিনা বলতে পারছি না।
ভালোবাসা নিও
মানিকদা
৭/৭/৭৭
একজন গুণী চিত্রশিল্পীর সঙ্গে কেউ চিত্র শিল্প নিয়েই কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার তিনি যদি হন কলকাতা সরকারি শিল্প বিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৭১-১৯৫১) বিশেষ প্রীতিভাজন ছাত্র। এই ব্যাক্তির নাম শিল্পী অসিতকুমার হালদার। শিল্পীদের কাজ ক্রীতদাসের মতো প্রাচীন শৈলীর অনুকরণ নয়, বরং তাঁদের প্রত্যেকের কাজে আছে মৌলিকত্ব আছে বিশেষ পারদর্শিতা ক্ষমতা। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন