মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে দুই দেশেরই দৃষ্টিভঙ্গি সৌদি আরবের বিপরীত মেরুতে। আবার আগামী মাসে অন্য তিননেতার সঙ্গে তারা বসবেন মালয়েশিয়ায়। বাকী তিন নেতা হলেন ইমরান খান, মাহাথির মোহাম্মন ও ইন্দোনেশীয়ার প্রেসিডেন্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সেনাবাহিনীর অভিযানে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দেয় কাতার। ওই অভিযানে তুরস্ক কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়। তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে সরিয়ে দেয় সীমান্ত এলাকা থেকে।
আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতির পার্থক্যের কারণে গত কয়েকটি বছরে মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিনের সাথে সম্পর্কের কারণে এমনটা হয়েছে। এসব ইস্যুতে আঙ্কারা ও দোহা একই রকম নীতি অনুসরণ করে। আঙ্কারায় সৌদি আরবের কনসুলেটের ভেতর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে এ ইস্যুতে সৌদি আরবের সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক টান টান।
তেমনি এক সময়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দিতে কাতার সফরে গেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আঙ্কারা থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল বিমানযোগে দোহার উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি কাতার পৌঁছেন।
তুর্কি-কাতার হাই স্ট্র্যাটেজিক কমিটির পঞ্চম বৈঠকে যোগ দিতেই এরদোগানের এ সফর। সফরে কাতারি আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল ছানির সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে এরদোগানের। বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দুই নেতা আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে। তার সম্মানে দেয়া কাতারি আমিরের নৈশভোজেও অংশ নেয়ার কথা তুর্কি নেতার। এছাড়া কাতার-তুর্কি কম্বাইন্ড জয়েন্ট ফোর্স কমান্ডও পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার।
সফররত তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দেশটির একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত কাতারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তুরস্কের। ২০১৭ সালে সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ দৃশ্যত একাই ব্যর্থ করে দেয় আঙ্কারা। ওই অবরোধের কয়েক মাসের মাথায় দেশটিতে তুর্কি রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় প্রায় তিনগুণ। ২০১৭ সালের ৫ জুন কাতারবিরোধী অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট। একই বছরের আগস্টে তুর্কি অর্থমন্ত্রী নিহাদ জিবেকজি মন্তব্য করেন, কাতারের চাহিদা পূরণে তুরস্কই যথেষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আঙ্কারার এ অবস্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ২০১৬ সালে তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের সময় এরদোগানের পাশে দাঁড়ান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-ছানি। অভ্যুত্থান চেষ্টার পর এরদোগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাতারের বিশেষ বাহিনীর ১৫০ সদস্যের একটি ইউনিট তুরস্ক পাঠানো হয়। মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে দুই দেশেরই দৃষ্টিভঙ্গি সৌদি আরবের বিপরীত মেরুতে।
২০১৫ সালের ১৮ জুন তারিক ইবন জিয়াদ সামরিক ঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো অবস্থান নেয় তুর্কি সেনারা। এতে করে কাতারের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। সন্ত্রাস দমন করে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন উভয় দেশের নেতারা।
২০১৭ সালে কাতারবিরোধী অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সৌদি জোট। এর মধ্যে একটি ছিল কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার করা। তবে সেই পথে হাঁটেনি দোহা। বরং ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কাতারে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, ভবিষ্যতে তারা কাতারে বিমান ও নৌবাহিনীও মোতায়েন করবে। এভাবে পরীক্ষার সময়ে তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে সুদৃঢ় বন্ধন। এর ফলে দুটি দেশের নেতারা শক্তিশালী ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন। সিরিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিনি মানুষের দুর্ভোগ, মিসরে সামরিক অভ্যুত্থানের মতো সাম্প্রতিক ইস্যুতে কয়েক বছরে আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতিতে একই ভাষায় কথা বলেছে এই দুটি দেশের সরকার। উভয় পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও বলিষ্ঠ। তাদের সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় পৌছে দেবে।
সূত্র: আনাদোলু ও আলজাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন