আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা আজ আছে-কাল নাও থাকতে পারে। আজ সু-সময়ে আছেন। এই সু-সময় চিরদিন নাও থাকতে পারে। ক্ষমতা চিরদিন থাকে না, এক সময় চলে যাবে। তাই ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না। বিনয়ী থাকবেন। সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে। অনেক স্বপ্ন দেখতে হবে এবং স্বপ্ন দেখাতেও হবে।
তিনি আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দলের মধ্যে দলাদলি করবেন না। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। আত্মীয়-স্বজন দিয়ে কমিটি ভর্তি করবেন না। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। ত্যাগীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেছেন, সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে। যেন মানুষ সবার পাশে থাকে। সব দু:সময়ের বিরুদ্ধে দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়। সু-সময়ের কথা চিন্তা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা যাবে না । চলমান শুদ্ধি অভিযানে নতুনদের আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে আমন্ত্রণ করেছি- আওয়ামী লীগের দরজা শিক্ষিত, ক্লিন ইমেজ ও ভালো লোকদের জন্য খোলা রয়েছে। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, এই দেশ উন্নত হবে। রংপুরে উন্নয়ন হবে। দেশে সমৃদ্ধি আসবে।’
দল ভারি করার জন্য খারাপ লোকদের দলে না নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বসন্তের কোকিলদের দলে টানবেন না। এই বসন্তের কোকিলরা ক্ষমতার সময় সুবিধা নিবে। আবার দল ক্ষমতায় না থাকলে হাজার পাওয়ারের বাতি জ¦ালিয়েও এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বসন্তের কোকিল চাই না। দলে সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, মাদকসেবি, ভূমি দখলকারীদের না বলুন।’ এসময় তিনি আরও বলেন, ‘নতুন নবাগত ফ্রেস মুখ যারা, এদেরকে দলের মধ্যে স্থান দিতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য নতুন রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত চাই। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির ভিতর মশারি টাঙাবেন না।’
রংপুরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গোটা উত্তর জনপদ চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত চারলেন রাস্তা হয়েছে। এই চারলেনের রাস্তার কাজ এখন বগুড়া থেকে রংপুরে শুরু হয়েছে। এরপর রংপুর থেকে চারলেন চলে যাবে বুড়িমারীতে। তারপর চারলেন রাস্তা চলে যাবে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘রংপুর বামনডাঙ্গা হতে আফতাবগঞ্জ ৭২ কিলোমিটর সড়ক চারশ’ ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্ত করা হচ্ছে। একশ ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বালাশী সেতু, শ্যামপুর সেতু, নেংটিচড়ার সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। চারলেন ছাড়াও রংপুর, গঙ্গাচড়া, হাজিরহাটসহ বিভিন্ন সড়কের প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রংপুর শহর, রংপুর বাইপাস, রংপুর-কুড়িগ্রাম, রংপুর-পার্বতীপুর, মিঠাপুকুর, ফুলছড়ি সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, রংপুর এক সময়ে মঙ্গা-কবলিত এলাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছে। কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে, সেটিও অপেক্ষমাণ।
বিদ্যুতায়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও শতভাগ আছে। সর্বমোট ৯৪ ভাগ মানুষ রংপুরে বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। সোলার সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামের ইউনিয়নে ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার পৌঁছে গেছে। রংপুরের মঙ্গাকে শেখ হাসিনা জাদু ঘরে পাঠিয়েছে। মঙ্গা বলতে আর কিছু নেই। তিস্তাপাড়ের মানুষের মঙ্গা নেই, দুর্ভিক্ষ নেই। আছে শুধু উন্নয়ন। রংপুরকে আরও উন্নয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী।’
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্দে, রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরি ডিউক, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু ও মহানগরের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনসহ প্রমূখ। সঞ্চালনা করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, দলে অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা হবে। তবে ভালো মানুষের দরকার আছে। অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারা অনুপ্রেবশকারী তা বুঝতে হবে। তাদের অতীত জানতে হবে। শুধু শুধু ভালো মানুষদেরকে অনুপ্রবেশকারী দেখিয়ে দল করতে দিবেন না, তা হবে না।’
এসময় তিনি রংপুরের দীর্ঘ দিনের বিলম্বিত সম্মেলনকে সেশনজট উল্লেখ করে বলেন, ‘সম্মেলন না হওয়ার কারণে আমাদের দুর্দিনের নেতা-কর্মীরা পর হয়েছে। তাদের খোঁজ করে বের করতে হবে। ত্যাগী নেতাদের বুকে টেনে নিতে হবে। আওয়ামী লীগে কোন ক্রাইসিস নেই।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন