দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশের লোকসানি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো লাভজনক করার লক্ষে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো ১শ’ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করছে। বোর্ডের দিকনির্দেশনা ও স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ উত্তরণ সম্ভব হলে বেশিরভাগ লোকসানি সমিতির আর্থিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৭টি লাভজনক। বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত সমিতিগুলো নানা প্রতিবন্ধকতায় লোকসান এড়াতে পারছে না। লাভজনক সমিতির মুনাফা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানি সমিতিগুলো ব্যয় নির্বাহ করছে। বর্তমানে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রায় ৫ লাখ কিলোমিটার লো-টেনশন ও হাই-টেনশন লাইনের মাধ্যমে প্রায় ৮২ হাজার গ্রামের পৌঁনে ৩ কোটি পল্লী গ্রাহককে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় গ্রাহক এখন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৮০টি সমিতি। এসব সমিতির সান্ধ্য পিক আওয়ারে চাহিদা ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। সমিতিগুলোর প্রায় আড়াই কোটি আবাসিক গ্রাহক নূন্যতম দামে ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়াও প্রায় ৩ লাখ সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচির আওতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
যেসব গ্রাহক চুক্তিবদ্ধ লোড অপেক্ষা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে মাঠ পর্যায়ে তা যাচাই করে ডিমান্ড চার্জ সংশোধন করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। সম্প্রতি সরকার ৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত চাহিদার শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিনামূল্যে ট্রান্সফর্মার সরবরাহের নিয়ম প্রবর্তন করায় এ ধরনের আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সংযোগ প্রদান করতে বলা হয়েছে। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধরন নিয়মিত পর্যালোচনা করে ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের সংযোগে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টিও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সিস্টেম লস হ্রাস করার লক্ষে আপগ্রেডেশন প্রকল্পসমূহ দ্রুত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষে পরিকল্পনা মাফিক ফিডার ও ফেজ ব্যালেন্সিংসহ ফিডারের দূরত্ব নির্ধারণ, ট্রান্সফর্মার গ্রাউন্ডিং, কানেক্টরের মাধ্যমে সংযোগ প্রদান এবং উপযুক্তমানের ক্যাপাসিটর স্থাপনসহ যথাযথ রেটিং ফিউজ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গড় সিস্টেম লস ১০-১১% হলেও যে সাব-স্টেশন থেকে সমিতিগুলো বিদ্যুৎ গ্রহণ করছে, সেখানে সিস্টেম লসের পরিমাণ ৮% এর মধ্যে রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সার্বিক সিস্টেম লসের পরিমাণ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার লক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি সমিতিই কাজ করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট হ্রাস করার লক্ষে কিছু কারিগরি নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে বিদ্যুৎ ব্যবহারে লোয়ার সøাব সুবিধাপ্রাপ্ত গ্রাহকদের বিষয়টি বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখে এ লক্ষে ‘এক খানা এক মিটার’ নীতি প্রতিপালনসহ কোন অবস্থাতেই যেন মিটার বিভাজনের সুযোগ দেয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। ইজি বাইকের চার্জিং স্টেশনগুলো যাতে বৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার শংকর কুমার কর ইনকিলাবকে জানান, আমরা ১শ’ দিনের এ কর্মসূচির অনেক কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। চেষ্টা করছি অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে সিস্টেম লস সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে বড় ধরনের লোকসান এড়ানো সম্ভব হবে।
দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার গ্রামের প্রায় ১৮ লাখ গ্রাহককে বিদু্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ৫০ লক্ষাধিক মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীভ‚ক্ত ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ সরবারহ করছে সমিতি। এসব সমিতির গ্রাহকরাই সমিতির মালিক। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এলাকা প্রধান ও পরিচালকসহ পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও নির্বাচিত করছেন গ্রাহকরা। আর এসব পরিচালনা পরিষদই প্রতিটি সমিতি সরাসরি পরিচালনা করে আসছেন।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ২২টি সমিতির প্রায় কোনটিই এখনো লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। মূলত সেচ ও শিল্প গ্রাহকের অভাবসহ অনেক লম্বা বিতরণ লাইনে কম সংখ্যক গ্রাহক এবং গ্রামেগঞ্জে গাছপালার ভেতর দিয়ে হাই ও লোটেনশন লাইন টানতে হওয়ায় সিস্টেম লসের পরিমাণ হ্রাস করা দুরহ। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর লোকসান হ্রাস করা যথেষ্ট কঠিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন