শামীম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে : লক্ষ্যটা তার আসরে সর্বোচ্চ রানÑ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং ৭৩ রানের ইনিংসের পর সে ইচ্ছের কথাই জানিয়েছিলেন বাঁ হাতি মিডল অর্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ৭৩, দ্বিতীয় ম্যাচে ১১৩ নট আউটÑলক্ষ্য পূরণে আছেন শান্ত কক্ষপথেই। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচের চেয়েও কক্সবাজারে বাজে শুরু বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। স্কোরশিটে ১৭ উঠতে নেই দুই টপ অর্ডার পিনাক, জয়রাজ। যেভাবে চলছে রানের গতি, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। অথচ, এমন ম্যাচেও শান্ত ব্যতিক্রম। স্ট্রাইক রোটেড করা তার বৈশিষ্ট্য, দলকে উদ্ধার করে, সম্মানজনক স্কোরের পথে নিয়ে যেতে ইনিংসের শেষপর্যন্ত থাকতে চানÑ প্রথম ম্যাচে ১ ওভারের জন্য সেই আক্ষেপ থাকলেও গতকাল করতে হয়নি সে আক্ষেপ। ইনিংসের ৪৯তম বলে খেলতে এসে শেষবল পর্যন্ত থেকেছেন অবিচ্ছিন্ন।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশেষ কিছু অর্জনের লক্ষ্যও ছিল তার। অনূর্ধŸ-১৯ ক্রিকেটের সর্বাধিক রানের (১৬৯৫) মালিক পাকিস্তানের সামী আসলামকে টপকে যেতে দরকার ছিল শান্ত’র ৬২ রান। নিল ফ্লাককে মিড উইকেটে দুর্দান্ত এক বাউন্ডারি শটে সবাইকে টপকে অনূর্ধŸ-১৯ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শান্ত। পার্টনার সাইফের যেখানে প্রথম রানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪তম বল পর্যন্ত, সেখানে দ্বিতীয় বলের মোকাবিলায় ফাইন লেগ দিয়ে সিঙ্গলে পেয়েছেন প্রথম রান শান্ত। লেগ স্পিনার হ্যারিস আসলামকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে নিজের প্রথম বাউন্ডারিতে আত্মবিশ্বাসী শান্ত দিয়েছেন বড় ইনিংসের পূর্বাভাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধŸ-১৯ দলের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৭৯’র পর জিম্বাবুয়ে এবং দ. আফ্রিকার বিপক্ষে একই ভেন্যুতে ১০২ ও ৭৪। কক্সবাজারে সেখানে স্কটিশদের বিপক্ষে ৭১ বলে ফিফটি, ১১১ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিÑএর চেয়ে ভালো ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত কি আর হতে পারে?
স্কটিশ পেস বোলার গাফফারকে পুল শটে মিড উইকেটে বাউন্ডারি দিয়ে অনূর্ধŸ-১৯ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিনে যুব বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন উদযাপন এই মিডল অর্ডার। অনূর্ধŸ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের এটি ৫ম সেঞ্চুরি (বিজয় ২টি, সাদমান,লিটন দাস এবং শান্ত ১টি করে)। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাইফকে নিয়ে ১০১ এবং ৪র্থ জুটিতে মিরাজকে নিয়ে ১০০ রানের পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দিয়েছেন শান্তই। ইনিংসের শেষ ১০ ওভারকে প্রকৃত শ্লগে পরিণত করতে পেরেছে বাংলাদেশ, যোগ করেছে ৯০ রান, তাও সম্ভব হয়েছে শান্ত ছিলেন বলেই। নব্বইয়ের ঘরে এসে নার্ভাসনেস পেয়ে বসেনি, পরবর্তী ১০ রানে খেলেছেন তিনি ৫টি বল।
অনূর্ধŸ-১৯ ক্রিকেটে রান সংগ্রহে সবাইকে টপকে যুবাদের এভারেস্টে এখন শান্ত (৫৪ ম্যাচে ১৭৪৭)। ২০১৩ সালের এপ্রিলে মাত্র ১৪ বছরে অনূর্ধŸ-১৯ দলে প্রতিনিধিত্ব করে সিলেটে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটি ছিল তার এতদিন একমাত্র এবং সর্বোচ্চÑ গতকাল টপকে গেছেন শান্ত সেই ইনিংস (১১৩ নট আউট)। এমন একটি দিনকে স্পেশাল বলে মনে করছেন শান্তÑ ‘আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠছি। আমি সেঞ্চুরি পেয়েছি, প্রথম ম্যাচে যা পারিনি। টিম জিতেছে। তাই দিনটি খুব স্পেশাল। ক’ রান করলে রেকর্ড করতে পারব, গতকাল (গতপরশু) জেনেছি তা। আজ (গতকাল) খেলার সময় ওটা মাথায় ছিল। করতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগবে, তবে রেকর্ড করতে হবে সে রকম কিছু চিন্তা করিনি। আমি শুধু আমার ব্যাটিং করে গেছি। তো রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় খুব ভালো লাগছে। আম্মা ও আব্বা আমার রেকর্ড নিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। ৬২ রান হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এসে শান্তকে অধিনায়ক মিরাজের অভিনন্দন পেয়েছেন শান্ত। তবে লম্বা সময়ের পার্টনার মিরাজের এমন অভিনন্দনে আছে বিস্ময়, সেটাই জানিয়েছেন মিডিয়াকে শান্তÑ ‘৬২ হওয়ার পর মিরাজ অনেক ইমোশনাল হয়ে গেছে। মনে হয়েছে, রেকর্ডটা বুঝি ও করে ফেলেছে।’
সিঙ্গল, ডাবলকে প্রাধান্য দেওয়া ইনিংসে নেই একটিও ছক্কা, আছে ১০টি চার। আদর্শ মিডল অর্ডারই বটে। তবে অনূর্ধŸ-১৯ ক্রিকেটে পাকিস্তানের সামী আসলামকে টপকে রান সংগ্রহে সবার উপর উঠে যাওয়া শান্ত’র এখনো ফিফটির সংখ্যায় আছেন পিছিয়ে। সামী আসলামের ফিফটির (৬ সেঞ্চুরি, ১০ ফিফটি=১৬টি) সংখ্যাকে স্পর্শ করতে এখন দরকার নাজমুল হোসেন শান্ত’র (২ সেঞ্চুরি, ১২ ফিফটি) আরো ২টি উইকেট। যেভাবে একটার পর একটা ইনিংসে শান্ত মেলে ধরছেন নিজেকে, তাতে সামী আসলামের এই রেকর্ডটিও সম্ভবত খুব দ্রæতই দিচ্ছেন ভেঙ্গে শান্ত। অনূর্ধŸ-১৯ বিশ্বকাপের চলমান আসরেই ১৭ বছর বয়সী ছেলেটি গড়তে পারেন নতুন রেকর্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন