স্পোর্টস ডেস্ক
এবারের কোপায় আর্জেন্টিনার যাত্রা শুরু হয় চিলির বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় দিয়ে। পিঠের চোটের কারণে সেদিন মাঠের বাইরে ছিলেন লিওনেল মেসি। তবে সেদিনের দলে ছিলেন ডি মারিয়া-লাভেজ্জিরা। আসরের শেষ ম্যাচেও একই বাধা আর্জেন্টাইনদের সামনে। এবার এই ম্যাচে যখন সময়ের সেরা খেলোয়াড়ের থাকাটা নিশ্চিত, তখন লাভেজ্জিকে তো পাওয়ার আশা নেই-ই এমনকি ডি মারিয়াকে নিয়েও কোন সুখবার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আগামীকালের ফাইনালকে ঘিরে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য দুখবার্তা আছে আরো। দলের বাইরে ছিটকে পড়েছেন অগাস্টিন ফার্নান্দেজও। সংশয় আছে মার্কোস রোহো ও নিকোলাস গাইতানকে নিয়েও। এই অবস্থায় দলের একমাত্র ভরসার প্রতীক লিওনেল মেসিই।
২৩ বছরের শিরোপা অপেক্ষা আর্জেন্টিনার। ৫ বারের বিশ্বসেরারও আজন্ম আক্ষেপÑ দেশের হয়ে বড় কোন শিরোপা না জেতা। তাঁর কাঁধে ভর দিয়েই অবশ্য ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শেষ পর্যন্ত ট্রফিটা অধরা থেকেছে। জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ের সেই একমাত্র গোলের হার এখনো পুড়ায় মেসিকে। সেই ক্ষত সঙ্গী করেই পরের বছর কোপার ফাইনালে ওঠে মেসির দল। এখানেও ভাগ্যের ফেরে চিলির কাছে টাইব্রেকারের হার বরণ করতে হয় মেসির দলকে। বছরান্তে আবারো এক ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা। এবারো কোপার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষের নাম চিলি। শুধু পার্থক্য এটুকুইÑ গেলবারের মঞ্চটা ছিল চিলিরই মাঠ সান্তিয়াগোয়, এবার কোপার শতবর্ষী আসরে ফাইনাল মঞ্চস্থ করার জন্য প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট রাদারফোর্ডের মিটলাইফ স্টেডিয়াম।
আগের দিন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা দলকে বার্তা দিয়েছিলেনÑ ‘শিরোপা জিততে না পারলে দেশে ফিরো না’। আর কত? খালি হাতে তাই ফিরতে চান না লিওনেল মেসিও। ট্রফি জিতে দেশের ইতিহাসের অংশ হতে চান তিনি, “আমি ইতিহাস বদলাতে চাই, জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জিততে চাই।” তবে শিরোপা জিততে না পারলেও সেটা ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে না বলেও মনে করেন ফুটবল জাদুকর, “পরপর তিন ফাইনালে হেরে যাওয়া আসলে ব্যর্থতা না, বরং বড় একটা হতাশা। তবে এবার আমরা খুব বেশি চাপ নিচ্ছি না। আশা করি, আমরা এবার জিততে পারব।”
শিরোপা অভিযানে এবারের আর্জেন্টিনা আসলেই আরো দুর্দান্ত। ৫ ম্যাচে ১৮ গোলের বিপরীতে মাত্র দুই গোল খাওয়াটা তো তারই প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে মাঠেই নামেননি মেসি। পরের দুই ম্যাচে খেলেন বদলি হিসেবে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেই পুরো সময় মাঠে ছিরেন বার্সা তারকা। তাতেই ৫ গোল করে হয়েছেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, এছাড়াও ৪টি গোলের কারিগরও তিনি। তাঁর চেয়ে একটি গোল বেশি নিয়ে এই তালিকায় সবার ওপরে চিলির এদুয়ার্দো ভার্গাস। এছাড়া আর্জেন্টিনা দলে দারুণ ফর্মে আছেন গঞ্জালো হিগুইন। টুর্নানেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ (৪টি) গোলদাতা নাপোলি স্ট্রাইকার। টুর্নামেন্টে এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলেও সুযোগের অপেক্ষায় আছেন সার্জিও আগুয়েরো। মেসিরও বিশ্বাস লক্ষ্য পূরণে খেলোয়াড়রা সর্বস্ব দিয়েই চেষ্টা করবে, “এখন কিছু না দেয়ার সময় নয়। কারণ, আমরা এখানে যা অর্জন করতে এসেছিলাম তার খুব কাছে চলে এসেছি।” একই সাথে চিলিকে নিয়ে সতীর্থদের সতর্ক করে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেন, “আমরা চিলিকে চিনি, এটা খুব নিখুঁত একটি দল এবং এ কারণেই আবার ফাইনালে উঠেছে তারা।”
এই চিলি আসলেই নিখুত ফুটবলে পারদর্শী। ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫ নম্বর দলটি রক্ষণে যেমন অটুট ঠিক তেমনি আসরে ৫ ম্যাচে ১৪ গোল করে আক্রমণেও নিজেদের প্রমাণ রেখেছে তারা। দু’দলের মুখোমুখী লড়াইয়ে অবশ্য ঢের এইগয়ে ফিফার এক নম্বর দল আর্জেন্টিনা। ৮৭ ম্যাচের ৫৮টি’তেই জয়ী আর্জেন্টিনা। ৬টি জয় চিলির, বাকি ২৩টি ম্যাচ ড্র। চিলির কোচ জুয়ান অ্যান্তোনিও পিজ্জি অবশ্য এত কিছু নিয়ে ভাবছেন না। ক্লাওদিও ব্রাভো, গারি মেদেল, আর্তুরো ভিদাল, আলেক্সিস সানচেসের মত সমৃদ্ধ দল তার। এই দলের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস, “আমরা খুব ভালো অবস্থায় ফাইনালে এসেছি। আমরা শক্তিশালী। তাদের (খেলোয়াড়দের) অবশ্যই প্রতিপক্ষকে সমীহ করতে হবে, কিন্তু জিততে হলে তাদের অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।”
চোট সমস্যা আছে চিলিরও। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের দিন হাঁটুর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন দলের মিডফিল্ডার পাবলো হার্নান্দেজ, টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মার্সেলো দিয়াসকেও নিয়ে রয়েছে শঙ্কার কালো মেঘ। তা সত্ত্বেও জমজমাট এক ম্যাচের প্রতীক্ষা করতেই পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন