শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাশিয়ার উদ্বেগ সত্ত্বেও লিবিয়ায় সেনা পাঠাচ্ছে তুরস্ক : এরদোগান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৪ পিএম | আপডেট : ৩:৩৪ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাশিয়ার উদ্বেগ সত্ত্বেও লিবিয়ায় সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। ত্রিপোলির অনুরোধেই তুরস্ক এই সেনা পাঠাচ্ছে বলে জানান তিনি। জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে বিষয়টি পার্লামেন্ট উপস্থাপন করবেন এরদোগান।
বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় নিজ দল ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় এরদোগান এসব কথা বলেন। এরদোগান বলেন, লিবিয়ার পক্ষ থেকে দেশটিতে সেনা মোতায়েনের জন্য তুরস্কের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। আঙ্কারা সে অনুরোধ গ্রহণ করেছে। আগামী জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে বিষয়টি পার্লামেন্ট উপস্থাপন করবেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন তথ্যই মিলেছে।
মাসখানেক আগে লিবিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ফয়েজ আল সাররাজ সরকারের সাথে দু’টি চুক্তি সই করেছে আঙ্কারা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, নিরাপত্তা ও সামরিক সহায়তার, অন্যটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নৌসীমানা সংক্রান্ত। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক।
মাসব্যাপী লড়াইয়ে পূর্ব লিবিয়ায় খলিফা হাফতারের বাহিনীকে রুখে দিয়েছে সাররাজের জাতীয় ঐক্যের সরকার (জিএনএ)। রাশিয়া, মিসর, জর্দান, সৌদি আরব, ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থন পেয়েছে হাফতার বাহিনী।
লিবিয়া সরকারকে সহায়তায় প্রয়োজনে দেশটিতে সেনা মোতায়েনেরও ঘোষণা গত রোববারই দিয়েছিলেন এরদোগান। তিনি বলেছিলেন, তুরস্ক প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবিয়ার সরকারকে সামরিক সহায়তা বাড়িয়ে দেবে এবং স্থল, বিমান ও নৌসামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে চাহিদাকে বিবেচনা করবে। জিএনএ অনুরোধ জানালে লিবিয়ায় সেনা মোতায়েন করতে পারে তারা। তুরস্ক সম্প্রতি জিএনএকে ‘অত্যন্ত মূল্যবান’ সহায়তা দিয়েছে। লিবিয়া এমন একটি দেশ যে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে সমর্থনের পাশাপাশি শান্তি স্থিতিশীলতা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকেও সমর্থন করবে তুরস্ক। হাফতারকে সমর্থনকারী দেশগুলো অবৈধ যুদ্ধবাজকে সমর্থন করছেন। জাতিসঙ্ঘ-অনুমোদিত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সরকারের পরিবর্তে কিছু দেশ হাফতারকে সমর্থন করছে। প্রয়োজনে আমরা লিবিয়াকে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেবো।’
প্রতিবেশী লিবিয়ার সাথে একটি সম্ভাব্য অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছাতে সহযোগিতা করতে বুধবার তিউনিসিয়া সফরে যান এরদোগান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, জিএনএকে সমর্থন দিতে তুরস্ক ও তিউনিসিয়া একমত হয়েছে। এ দিকে লিবিয়ায় তুরস্কের সম্ভাব্য সেনা মোতায়েন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, হাফতারকে রুশ সমর্থিত ভাড়াটে খুনিদের সহায়তায় চুপ থাকবে না তুরস্ক।
এদিকে তুর্কি জ্বালানিমন্ত্রী ফাতিহ দোনমেজ ঘোষণা করেন, চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করবে তুরস্ক। অন্যদিকে গ্রিসের সাথে লিবিয়ার সমুদ্রসীমা থাকায় ওই চুক্তিতে ক্ষুব্ধ হয় গ্রিস। তবে আঙ্কারার দাবি, আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এ অঞ্চলে নিজের অধিকার সুরক্ষিত রাখার অধিকার তুরস্কের রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতা নিয়ে চলা লড়াইয়ে ফয়েজ-আল-সাররাজের নেতৃত্বাধীন গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডকে (জিএনএ) সমর্থন করে তুরস্ক। ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পরও জিএনএকে সামরিক সহায়তা ও উপকরণ সরবরাহ করছে তুরস্ক।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হলুসি আকার বলেছিলেন, দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তুরস্ক লিবিয়ার সরকারের পাশে থাকবে। গ্রিস, ইসরাইল ও মিসরকে উদ্দেশ করে গত রোববার এরদোগান বলেছিলেন, তুরস্ক লিবিয়ার সাথে চুক্তি থেকে ‘একেবারে’ মুখ ফিরিয়ে নেবে না।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ ওকতাই আগে থেকেই বলে আসছেন, লিবিয়ার জাতীয় ঐকমত্যের সরকার চাইলে দেশটিতে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে আঙ্কারা। লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল খলিফা হাফতারের সশস্ত্র হামলা প্রতিহত করার লক্ষ্যে সে দেশে সেনা পাঠাতে চায় তুরস্ক।
তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিআরটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে এরদোগানও লিবিয়ায় সেনা পাঠাতে তার সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি হুমকির সুরে বলেছিলেন, ‘লিবিয়ায় সেনা পাঠাতে তুরস্ক কারো কাছ থেকে অনুমতি নেবে না।’ সূত্র : রয়টার্স, আনাদোলু ও এপি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন