হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহু প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। আজ শনিবার সকাল ১০টার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া সবচেয়ে বড় ও আধুনিক ২টি ড্রিমলাইনার সোনার তরী ও অচিন পাখিরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটের মোবাইল এ্যাপস উদ্বোধন।
গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিমান সচিব মহিবুল হক ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন। শুরুতেই তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী সেবার মানের দিকে নজর দেয়া হবে। এতে সেবার মান বাড়বে, সহজ হবে ফ্লাইট পরিচালনা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে দুই লাখ টন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ( বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ ২০ হাজার কোটি ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। এই টার্মিনালে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর। নতুন এ টার্মিনাল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করা হবে। থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৪ বছর। ভবন হবে তিনতলা। এভিয়েশন ঢাকা কনসোটিয়াম (এডিসি) এর মাধ্যমে মিতাসুবিশি ও ফুজিটা, জাপান এবং স্যামসাং, কোরিয়া এ তিনটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মান কাজ সম্পন্ন করবেন।
আয়তনে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার এই ভবনটির নকশা করেছেন স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট বেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। থার্ড টার্মিনালের বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে।
এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য ৪টি আলাদা বেল্ট স্থাপন করা হবে।
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে হোটেল লি মেরেডিয়ানের কাছেই বিমানবন্দরে ঢোকার মূল সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোণ হবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এ ছাড়া র্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সাথে মূল বিমানবন্দর সড়কের কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১১ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। এই চারটি প্রতিষ্ঠান হলো, জাপানের নিপ্পন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনস্যালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট, বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড। তারা ইতোমধ্যে প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন রিভিউ, মূল নির্মাণ কাজের দরপত্রের খসড়া, নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকি করবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি এ দেশের অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আজ শনিবার থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ টার্মিনালটি নির্মাণ করা হলে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী পারাপারের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুটের এ টার্মিনালের জন্য খরচ হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী এটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২৩ সালের মধ্যেই আমরা এটি শেষ করতে চাই।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, বড় প্রকল্প হওয়ায় টেন্ডার ঘোষণা, টেন্ডার আবেদন সংগ্রহ, দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজে সময় বেশি লেগেছে। তবে একন আর সময়ক্ষেপণ হবে না। নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন