স্পোর্টস ডেস্ক : ইতালির জন্য কি এটাকে প্রতিশোধের ম্যাচ বলা যায়? হয়তো না। ফাইনালে হারের কোন প্রতিশোধ হয় কি? এর জন্য যে দরকার হয় আরেক ফাইনালের। কিন্তু ইতালির জন্যে তো এই ম্যাচই এক প্রকার ফাইনাল। পিছনের দুই আসরের দিকে যদি ফিরে দেখেন তাহলেই বুঝবেন। আর স্পেন? ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতে আগেই একটা রেকর্ড করেছে তারা। এখন তারা মাতোয়ারা টানা তৃতীয় ইউরো জয়ের নেশায়।
আন্দ্রেয়া পিরলো অবশ্য এটাকে প্রতিশোধের একটা সুযোগ বলেই মনে করেন। ইতালির মাঝ মাঠের সাবেক সেনানী এক ক্রীড়া দৈনিকে বলেন, “সাক্ষাৎটা অনেক আগে হচ্ছে। স্পেনের গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত ছিল। তাহলে দারুণ এক ফাইনাল হতে পারত। কিন্তু এটা আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে।”
২০০৮ সালে জার্মানিকে হারিয়ে স্প্যানিশরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বটে, কিন্তু সেবার তাদের সবচেয়ে বড় বাধা পেরুতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। ইতালির বিপক্ষে হাভানায় কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল তাদের। ঐ ম্যাচের আগে বড় কোন টুর্নামেন্টে ইতালিকে হারানোর কোন রেকর্ড ছিল না স্পেনের। পেনাল্টি শুট-আউটে সেবারই প্রথম ইতালিকে হারায় তারা। ঐ ম্যাচের পর ইকার ক্যাসিয়াস বলেছিলেন, “স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে এটা একটা ঐতিহাসিক দিন।” এরপর থেকে বড় কোন টুর্নামেন্টে ইতালির কাছে হারেনি দেল বস্কের দল। গেল ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে স্পেন উড়িয়ে দিয়েছিল ৪-০ গোলে। ২০১২ সালের এই ফাইনাল ম্যাচকে স্মরণ করে পিরলো বলেন, “সেদিন আমাদের কিছুই করার ছিল না।” এরপর কনফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালেও পেনাল্টি শুটআউটে জিতেছিল লা রোজারা। তবুও এই স্পেনকে একতরফাভাবে ফেভারিট বলা যাচ্ছে না সেটা শুধুমাত্র ‘ইতালি’ নামটার কারণে। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার সেস ফেব্রিগাসও বললেন তেমনি, “তাদের যে খেলার ধরন তাতে করে লড়তে হলে আমাদের সেরাটাই দিতে হবে।”
স্পেন এবারের মিশন শুরু করে চেক চেক রিপাবলিক ও তুরস্কর বিপক্ষে জয় দিয়ে। কিন্তু গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে এসে তারা ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বসে ২-১ গোলে। ফলে ‘ডি’ গ্রæপে রানার্স-আপ হয় তারা। গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হলে তাদের ফাইনালের পথটা তুলনামূলক সহজ হত। এখন তারা ইতালিকে হালেও ১০ জুলাই ফাইনালের পথে তাদের পেরুতে হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং স্বাগতিক ফ্রান্সের মত বাধা। পথটা বন্ধুর বটে। তাদের সাম্প্রতিক ফুটবলও নেই সেই পুরোনো ছন্দ। ফেব্রিগাসও জানেন এটা। চেলসি তারকা তাই বলেন, “সেরা ফুটবলটা খেলার জন্য আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে কারণ তারা দৌড়ানো থামায় না এবং প্রতিটা বলের জন্য তারা লড়াই করে।” সাবেক বার্সা ফরোয়ার্ড যোগ করেন, “তাদের রক্ষণ খুবই দৃঢ় এবং তারা জানে কিভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে হয়।”
গ্রæপ পর্বে ইতালির যাত্রাটাও ছিল স্পেনেরই মত, বেলজিয়াম ও সুইডেনের বিপক্ষে জয় দিয়ে। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে আন্তেনিও কোন্তের শিষ্যরা হেরে বসে আইসল্যান্ডের কাছে। এই ম্যাচে অবশ্য আটজন নিয়মিত খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোন্তে। আজ নিশ্চয় সেই ভুল করবেন না তিনি। এদিন তাদের একমাত্র দুশ্চিন্তা মিডফিল্ডার আন্তোনিও কানদ্রেভার চোট। এরপরও জয়ের ব্যপারে দৃড়প্রত্যয়ী দলের ডিফেন্ডার জর্জিও চিলিনি। এই ম্যাচের মধ্যেই তার সাথে দেখা হবে ক্লাবমেট আলভারো মোরাতার। তাকে নিয়ে একটু মজাও করলেন চিলিনি, “আমি দোয়া করি তার ক্যারিয়ারটা ভালো কাটুক, শুধুমাত্র সোমবারের (আজ) ম্যাচটা বাদে।” এর আগে ৩৪ বার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। দু’দলেরই জয় সমান ১০টি করে। সব মিলে ফ্রান্সের সাঁ-দেনিতে আজ রাত দশটায় এক জমজমাট ম্যাচই অপেক্ষা করছে বলা যায়।
আরো একটি ম্যাচ অপেক্ষা করছে আজ। নিসে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ড। আক্ষরিক অর্থেই এই ম্যাচে ফেভারিট ইংলিশরা। ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর মাত্র দুইবার হেরেছে রয় হজসনের দল, জয় ১৮টি, বাকি ৪ ম্যাচ ড্র। একমাত্র দল হিসেবে শতভাগ জয় নিয়ে গ্রæপ পর্বে পা রাখে তারা। সত্যিই সেদিন সেরা খেলাটা উপহার দিয়েই প্রথমবারের মত শেষ ষোলয় পা রাখে আইসল্যান্ডাররা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন