ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম সূচক টুর্নামেন্ট টিভিএস ফেডারেশন কাপ থেকে বিদায় নিলো দুই আবাহনী। সোমবার শুরু হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা। এদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষ আটের প্রথম ম্যাচে জায়ান্ট কিলার খ্যাত রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূণ্য অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দু’দল একটি করে গোল পায়। এসময় আবাহনীর হাইতির ফরোয়ার্ড কারভেন্স বেলফোর্ট ও রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার এনামুল ইসলাম গাজী গোল করলে ১-১ ব্যবধানের ড্র নিয়ে টাইব্রেকারে যায় দু’দল। রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে আবাহনীর অধিনায়ক নাবীব নেওয়াজ জীবন, সোহেল রানা ও নাসির উদ্দিন চৌধুরী গোল করলেও ব্যর্থ হন কারভেন্স বেলফোর্ট এবং নাইজেরিয়ান সানডে সিজোবা। অন্যদিকে রহমতঞ্জের দিদারুল আলম, তুরায়েভ আকোবীর, নাদিম মোহাম্মদ লিমন ও আকপোপভ আসরোরভ টানা চারটি গোলই করেন।
একই মাঠে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ২-০ গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে। বিজয়ী দলের পক্ষে মিডফিল্ডার শাহেদ হোসেন ও মালির ফরোয়ার্ড সোলায়মান দিয়াবাতে একটি করে গোল করেন।
শেষ আটের প্রথম ম্যাচে যোগ্যতর দল হিসেবেই জয় পেয়েছে রহমতগঞ্জ। ম্যাচের শুরু থেকেই তারা সমান তালে লড়াই করে আবাহনীর সঙ্গে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চললেও নির্ধারিত সময়ে গোল হয়নি। ফলে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ায়। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায়ও ছিল টান-টান উত্তেজনা। গোলের জন্য মরিয়া ছিল আবাহনী। রহমতগঞ্জও কম যায়নি। আবাহনীর প্রতিটি আক্রমণ দৃঢ়তার সঙ্গে ফিরিয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে তারা। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় হতাশ হতে হয় পুরান ঢাকার দলটিকে। ম্যাচের বন্ধ্যাত্ব ঘোচে ৯৩ মিনিটে। এসময় আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স বেলফোর্ট গোল করে দলের স্প্যানিশ কোচ মারিও ল্যামোসকে দুশ্চিন্তামুক্ত করেন (১-০)। কিন্তু সেই গোল আর ধরে রাখতে পারেনি আবাহনী। ম্যাচের ১১৯ মিনিটে রহমতগঞ্জের এনামুল ইসলাম গাজী দারুণ হেডে গোল করে সমতা আনেন (১-১)। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে শতভাগ সফল রহমতগঞ্জ। টাইব্রেকারে তাদের চার গোলদাতার পাশাপাশি নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ম্যাচসেরা গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। তিনি আবাহনীর দুই বিদেশী কারভেন্স বেলফোর্ট ও সানডে সিজোবা’র শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। বিদেশীদের ঘাড়ে চেপেই বছরের পর বছর ট্রফি ঘরে নিয়ে যায় ক্লাবগুলো। তাইতো ফি বছর বিদেশীদের উড়িয়ে আনতে এক প্রকার যুদ্ধে লিপ্ত হন ক্লাব কর্মকর্তারা। কিন্তু সোমবার সেই দুই বিদেশীর ব্যর্থতায় ফেডারেশন কাপ থেকে ছিটকে গেল ঢাকা আবাহনী।
একই ভেন্যুতে সন্ধ্যায় দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান দারুণ খেলা উপহার দিয়ে ২-০ গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে দীর্ঘদিন পর ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। সাদাকালোরা ম্যাচের ৬ মিনিটের মধ্যে দু’গোল আদায় করে নেয়। এতেই অনুমেয় কেমন ফুটবল খেলেছে মোহামেডান।
সত্যিই নবজাগরণ ঘটেছে মোহামেডানের। ক্যাসিনো ঝড়ের পর সাবেক তারকা ফুটবলার ও সংগঠকরা হাল ধরেন ক্লাবটির। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এতেই যেন বদলে যায় মোহামেডান। সাবেক তারকা ফুটবলার ও সংগঠকদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায়
নিজেদের সেরাটাই মাঠে ঢেলে দিচ্ছেন ফুটবলাররা। গ্রুপ পর্বে উত্তর বারিধারাকে হারিয়ে এবং শেখ রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে শেষ আটে উঠে আসে মোহামেডান। আর অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে চার বছর পর ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের গন্ডি পেরিয়ে সেমিতে জায়গা করে নেয় সাদাকালোরা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছিল মোহামেডান। তখন টাইব্রেকারে মুক্তিযোদ্ধার কাছে হেরে ফাইনালে ওঠা হয়নি তাদের।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকে মোহামেডান। চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে সমান তালে লড়েন সাদাকালো ফুটবলাররা। যার ফল তারা পেয়ে যায় ম্যাচের মাত্র ২৫ মিনিটেই। শাহেদ হোসেনের অসাধারণ এক শটে বোকা বনে যান বন্দরনগরীর গোলরক্ষক নেহাল (১-০)। মিনিট ছয়েক পর ব্যবধান দ্বিগুন করেন মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে (২-০)। ব্যাস, ওখানেই খেলা শেষ। বাকি ৬০ মিনিট চেষ্টা করেও গোল শোধ দিতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। ফলে ২-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে যায় মোহামেডান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন