শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অতিথি পাখির কলকাকলি

এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

লস্কর উজিরের দীঘি। রাউজানের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘির পাশে গেলে যে কেউ এখন পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ হতে বাধ্য। বিশাল দীঘির জলে চোখ পড়লেই দেখা মিলবে হাজারো অতিথি পাখির। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীঘির জলে বিচরণ করে কালো ডানা ও লালচে ধূসর বর্ণের ‘সরলী’ নামের এ পাখি। কখনও জলে ভাসতে ভাসতে আবার কখনও দল বেঁধে উড়ছে দীঘির চারপাশে। একসঙ্গে ওঠানামা করতে গিয়ে পা আর পাখার ঝাপটায় চারদিকে ছিটকে পড়া পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে এক অপরূপ দৃশ্য।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে উঁড়ে আসতে শুরু করে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। অন্যান্য বছরের মত এবারও হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির ঝাঁক উঁড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে রাউজানের বড় বড় পুকুর দিঘিতে। দলবদ্ধ পাখি এখন ঠাঁই নিয়েছে এখানকার জনকোলাহলমুক্ত পরিবেশে নির্ঝন এলাকার পুকুর দিঘিতে। ভিনদেশী এসব পাখির ঝাঁক দেখা যায়, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কর্তার দিঘি, কদলপুর ইউনিয়নের লষ্কর উজির দিঘিসহ উপজেলার বিভিন্নস্থানের বড় বড় জলাশয়ে। ভিন দেশিয় পাখির ঝাঁক যেই এলাকায় নেমেছে, সেই এলাকাটি এখন কলকাকলিতে ভরে উঠেছে। কিচিমিচি শব্দ শুনে অনেকেই উঁকি মেরে দেখছে পাখির মুক্তবিচরণ। কৌতুহলী অনেকেই কাছ থেকে দেখতে গেলেই ঝাঁক বেঁধে উড়াল দিচ্ছে আকাশের পানে। আতংকিত পাখির দল কিছুক্ষণের জন্য আকাশে উঁড়ে তী² দৃষ্টি রাখে নিচের দিকে। যখনই তারা নিরাপদ মনে করছে তখনই এসে পড়ছে আশ্রয় নেয়া সেই পুকুর দিঘিতে।

রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের লস্কর উজির দীঘিতে দেখা যায়, অতিথি পাখির বিপুল সমাগম। দূরদেশ থেকে আসা এসব অতিথি পাখি দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরাও। ইউনিয়নের শেষ সীমানায় হাফেজ বজলুর রহমান সড়কের পাশে অবস্থিত ৬০ একর আয়তনের বিশাল এই দীঘির উত্তর পাড়েই রয়েছে বিশাল এক বাগান। শীতের মৌসুম আসার পর থেকেই প্রতিদিন হাজারো অতিথি পাখি দল বেঁধে আসতে শুরু করে এখানে। কখনো এরা দীঘির পাড়ের বাগানে গাছে গাছে দল বেঁধে বসে থাকে। আবার কখনো দল বেঁধে উড়ে বেড়ায় দীঘির পানির ওপর দিয়ে। হাজার হাজার অতিথি পাখির কোলাহলে পুরো এলাকা এখন মুখরিত।

কদলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষজনকে অতিথি পাখি শিকার থেকে বিরত রাখার জন্য দীঘিটি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আকবর ও নাছির উদ্দিনকে দিয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে লস্কর উজির দিঘীর উত্তর পাড়ে বাগানের মধ্যে বিনোদনের জন্যে আসা দর্শনার্থীর জন্য বসার পাকা বেঞ্চ নির্মাণ করে দিয়েছে কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদ। ৩‘শ বছরের পুরনো লস্কর উজীর দিঘীতে অতিথি পাখির কোলাহল, দীঘির পাড়ে বাগান, দীঘির পূর্ব পাড়ে মসজিদ, পাকা ঘাট অপরুপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।

কদলপুর লস্কর উজির দীঘির পাশ্ববর্তীরা জানান, এখানে যখন আমরা নামাজ পড়তে আসি তখনি এসব পাখির দৃশ্য আমাদের মনে আনন্দ দেয়। আমরা আনন্দ পাই কারণ এরকম দেশি-বিদেশি পাখির দৃশ্য কোথাও দেখা যায় না, যা এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এরকম একটি মনোরম দৃশ্য দেখতে অনেক সুন্দর আর ভালো লাগে। বিশেষ করে এই দিঘীটি পাখির একটি নিরাপদ আবাসস্থল, তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যায়না। নিরাপদ বলেই প্রতি বছর এই দিঘীতে অতিথি পাখিরা ছুটে আসেন।স্থানীয়রা আরো জানায়, কতৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিলে কদলপুর লস্কর উজির দিঘী হতে পারে চট্টগ্রামের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট।

এদিকে কেউ যেন পাখি শিকার এবং তাদের বিরক্ত না করে তার জন্যও নজরদারি করছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ। পাখি নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের শীতের আবহওয়ার পরশ পেতে বহু দেশ থেকে ছুটে আসে পাখির দল। এসব পাখির মধ্যে দেখা যায়, শামুক ভাঙ্গা, লালশির, পাতারি হাঁস, কালো হাঁস, বালি হাঁস, মাঝলা বক, সরালী, ছোট সরালী, রাজ হাঁস, কানি বক, ধূসর বক, গো বক, সাদা বক, জলের কাদাখোঁচা পাখি, লেঞ্জা, হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

সূত্র মতে পথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এসব পাখির একটি অংশ বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে দেশে দেশে ছুটে বেড়ায়। মৌসুমী ভ্রমনে বের হওয়া এসব পাখির একটি সংখ্যা আমাদের দেশে আসে শীতের মৌসুমে। ওরা আশ্রয় নেয় গ্রামীণ বিভিন্ন খাল, বিল, পুকুর,দিঘির মত বড় বড় জলাশয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন