শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আবাহনীর নবম শিরোপা

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয় আসর ফেডারেশন কাপের নবম শিরোপা জিতে নিলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। অন্যদিকে ইতিহাস গড়া হলো না জায়ান্ট কিলার খ্যাত আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের। এর আগে তারা আরো দু’বার এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও শিরোপার দেখা পায়নি। ১৯৯৭ সালের ফাইনালে আবাহনীর কাছে ২-১ এবং ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় মতিঝিল ক্লাবপাড়ার দলটি।
গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ওয়ালটন ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনী ১-০ গোলে আরামবাগকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে। বিজয়ী দলের হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড লি টাক। এই জয়ের ফলে পাঁচবছর পর শিরোপা খরা কাটলো ঢাকা আবাহনীর। ২০১১ সালে সুপার কাপের ট্রফি জেতার পর ঘরোয়া আসরে আর কোন শিরোপা জিতেনি আবাহনী। শেষবার ২০১০ সালে ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো তারা।
দীর্ঘ বিরতিতে শিরোপা জয়ের হাতছানি ছিলো আকাশী-হলুদদের সামনে। আর সাফল্য লাভে তাদের বাঁধা ছিলো আরামবাগ। যাদের লক্ষ্য ছিলো ইতিহাস গড়া। ১৯ বছর আগে এই আবাহনীর কাছেই ২-১ গোলে হেরে প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের শিরোপা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয় আরামবাগের। সেই আক্ষেপ ঘোঁচানোর সুযোগ পেয়ে এবারও ব্যর্থ হলো তারা।
ফেডারেশন কাপের শিরোপা খরা ঘোঁচাতে দু’দলেরই জন্যই স্বপ্নের ম্যাচ ছিলো এবারের ফাইনালটি। তাই কাল ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ সাবধানী ফুটবল খেলে আবাহনী ও আরামবাগ। তারা নিজেদের রক্ষণভাগ সামলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটিকে উপভোগ্য করে তুলে। ম্যাচে প্রথম সুযোগটি পায় আবাহনীই। ৬ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো তারা। কিন্তু আরামবাগের শক্ত রক্ষণদুর্গ ভেদ করা সম্ভব হয়নি আবাহনী ফরোয়ার্ডের। এসময় আকাশী-হলুদদের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে সিজোবার বক্সের ভিতর থেকে করা শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন আরামবাগ গোলরক্ষক মিতুল হাসান। ফিরতি বলে হেড নেন জুয়েল রানা। কিন্তু এবার বল ক্লিয়ার করেন আরামবাগের ডিফেন্ডাররা। ৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে আবাহনীর ইংলিশ ফরোয়ার্ড লি এন্ড্রু টাক ফ্রিকিক করলে মিডফিল্ডার জুয়েল রানা হেড নেন। কিন্তু এবারও গোলরক্ষক মিতুল কর্ণারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। তবে ১১ মিনিটে আর ভুল করেনি আবাহনী। প্রতিপক্ষ রক্ষণের ভুলেই এগিয়ে যায় তারা। আরামবাগ মিডফিল্ডার আবদুল্লাহর মিস পাস থেকে বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান লি টাক। বক্স লাইনের কাছ থেকে বামপায়ের জোড়ালো শটে গোল করেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড (১-০)। পরের মিনিটেই সমতায় ফেরার একটা সুযোগ পায় আরামবাগ। ম্যাচের ১২ মিনিটে আবাহনীর ডিফেন্ডার প্রাণতোষ কুমারের মিস পাসে বল পেয়ে যান প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল। কিন্তু তিনি বল বাইরে মেরে সহজ সুযোগটি নষ্ট করেন। তীব্র তাপদাহে ম্যাচে দু’বার কুলিং ব্রেক নিতে হয়। ম্যাচের ১৫ মিনিট আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চললেও এই সময়ের পর প্রথমার্ধের বাকি সময় যেন ম্যাচটা ঝিমিয়ে পড়ে। হয়তো প্রচÐ গরমের কারণেই এসময় দু’দলের ফুটবলারদের এলোমেলো খেলতে দেখা যায়। ফলে প্রথমার্ধে আর কোন গোল হয়নি। এক গোলে পিছিয়ে থেকে আরামবাগ বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই যেন জ্বলে উঠে। গোলশোধে মরিয়া আরামবাগের ফরোয়ার্ডরা বিরতির পর একের পর এক আক্রমণ চালায় আবাহনী রক্ষণভাগে। কিন্তু অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডের অভাবে সমতায় ফিরতে পারে না তারা। ম্যাচের ৫০ মিনিটে বক্সের প্রায় ৩০ গজ দূরে ফ্রিকিক পায় আরামবাগ। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কেস্টার এ্যাকনের মাপা শট পোস্টের খুব কাছেই পড়েছিলো। কিন্তু আবাহনী গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল বল ক্লিয়ার করেন। পরের মিনিটেই আরো একটি সুযোগ পায় মতিঝিলের দলটি। ৫১ মিনিটে ক্যামেরুনের মিডফিল্ডার ইয়োকো স্যামনিক ডানপ্রান্ত থেকে বল বাড়িয়ে দেন ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল। জাফর শট নিলেও তা গোলরক্ষক সোহেল দক্ষতার সঙ্গেই ফিস্ট করে ফেরান। ৫৬ মিনিটে বক্সের ভেতর বল পেয়েও সুযোগ হাতছাড়া করেন আরামবাগ ফরোয়ার্ড আবু সুফিয়ান। তার শট কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সোহেল। ৬০ মিনিটে প্রায় নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন আরামবাগের ইয়োকো স্যামনিক। এসময় মাঝমাঠ থেকে কেস্টার এ্যাকনের থ্রু পাস বক্সের মধ্যে পান ইয়োকা। কিন্তু তিনি বল বাইরে মারেন। ম্যাচের বাকি সময় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চললেও আর কোন গোল হয়নি। ফলে ১-০ গোলের জয়েই শিরোপা জিতে মাঠ ছাড়ে আবাহনী। আর স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় হতাশ হয়ে ঘরে ফেরে আরামবাগ। চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফিসহ ৫ লাখ এবং রানার্সআপদের ট্রফি ও ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার পান আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। ম্যান অব দ্য ফাইনাল নির্বাচিত হন একই দলের ইংলিশ ফরোয়ার্ড লি টাক এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান আরামবাগের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কেস্টার এ্যাকন। সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ম্যাচ শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন