সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

লোকসানের মুখে পিছিয়ে পড়ছে সিটিসেল

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক ঃ সিটিসেল, (প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লি.) দেশের সবচেয়ে পুরনো সেলফোন অপারেটর। যাত্রার সময় এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সেলফোন কোম্পানি। তীব্র প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণে অন্য অপারেটরদের তুলনায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহক সংখ্যায় যেমন, তেমনি আয়ের বিবেচনায়ও। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে মালিকানা বদলের প্রচেষ্টাও শুরু হয়। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিটিসেলের ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গটেল এশিয়া প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড ও ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশের মালিকানা ফারইস্ট টেলিকমের। অপারেটরটির সিংহভাগ শেয়ারের মালিক সিঙ্গটেল ২০১২ সালে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে সিটিসেল।
জানা গেছে, দক্ষিণ আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত বছরই মালিকানা বদলের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি আলোচনা চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। মালিকানা বদলের বিষয়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক সম্মতি পেলে দেশে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে সিটিসেল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সবকিছু চূড়ান্ত হলে সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে সিঙ্গটেল। আর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানাবে সিটিসেল। নতুন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থ্রিজি ও ফোরজি প্রযুক্তির সেবাদানে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য করতে রাজি হননি সিটিসেলের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা।
কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক হারিয়ে চলেছে দেশের সবচেয়ে পুরনো সেলফোন অপারেটরটি। ফলে দেশে সেবাদানকারী ছয় অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যায় তাদের অবস্থান সবার নিচে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহক সংখ্যায় সিটিসেলকে পেছনে ফেলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক।
বিটিআরসি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের এপ্রিলে সিটিসেলের গ্রাহক ছিল ১৮ লাখ ১ হাজার। ১৭ মাস পর ২০১৩ সালের অক্টোবরে গ্রাহক বৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে অপারেটরটি। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ গ্রাহক ছিল ২০১০ সালের অক্টোবরে। সে সময় তাদের গ্রাহক সংখ্যা পৌঁছেছিল ১৯ লাখ ৩৩ হাজারে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৭ হাজারে। বছরটিতে সিটিসেলের গ্রাহক কমেছে আড়াই লাখের বেশি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশেরও নিচে।
গ্রাহক কমে যাওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে লোকসানও বেড়েছে সিটিসেলের। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৯৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২৬ কোটি টাকায়। ২০১৩ সালে লোকসান আরো বেড়ে হয় ৩২০ কোটি ও ২০১৪ সালে ৪৮০ কোটি টাকা।
একমাত্র সেলফোন অপারেটর হিসেবে নব্বইয়ের দশকে একচেটিয়া ব্যবসা করে সিটিসেল। কলরেট ও হ্যান্ডসেটের উচ্চমূল্য সত্তে¡ও সে সময় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো প্রতিষ্ঠানটির এ সেবা। তবে ওই দশকের শেষে সেলফোন সেবার লাইসেন্স দেয়া হয় একাধিক প্রতিষ্ঠানকে। এতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে অপারেটরটি।
দেশের সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবাদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান সিটিসেল। বাকি পাঁচ সেলফোন অপারেটর— গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক সেবা দিচ্ছে জিএসএম (গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন্স) প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সিডিএমএর তুলনায় স্বল্প ব্যয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ থাকায় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জিএসএম প্রযুক্তি। পাশাপাশি এ প্রযুক্তির উন্নয়নও হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। এক্ষেত্রেও অন্য অপারেটরদের তুলনায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে সিটিসেল।
২০১২ সালের এপ্রিলে জিএসএম প্রযুক্তির সেবা দিতে তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য বিটিআরসির কাছে আবেদন করে সিটিসেল। এতে প্রতিষ্ঠানটির অনুক‚লে বরাদ্দ দেয়া ৫ মেগাহার্টজ সিডিএমএ তরঙ্গ পরিবর্তন করে ইজিএসএম ব্যান্ডে ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এবং ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে অতিরিক্ত ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ চাওয়া হয়।
ওই বছরের জুনে অন্য এক আবেদনে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করে, সিডিএমএ ডিভাইসে ইকোসিস্টেম না থাকায় চেষ্টা সত্তে¡ও জিএসএম অপারেটরের তুলনায় সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার কমছে। ২০০৭ সালে যেখানে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি, ২০১২ সাল নাগাদ তা ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সিডিএমএ ডিভাইসে ভর্তুকি হিসেবে ২০১২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি টাকা।
এদিকে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করায় সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনাও বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে টুজি লাইসেন্সের আওতায় তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, তরঙ্গ বরাদ্দ চার্জ বাবদ ১৯ কোটি ৭৫ লাখ, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৭ কোটি ৪৫ লাখ ও লাইসেন্স ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা। আর্থিক সংকটের কারণে এ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জানিয়েছে সিটিসেল। এজন্য একাধিকবার অর্থ পরিশোধের সময় বৃদ্ধির আবেদনও করে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সিটিসেলের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন