বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

বহুতল ভবন নির্মাণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বহু ডেভেলপার কোম্পানি

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বগুড়া থেকে মাহফুজ মন্ডল : ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরে বগুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও হঠাৎ করে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগকৃত অর্থ উত্তোলনের চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন। হঠাৎ উন্নয়নশীল বগুড়ায় বড় বড় ব্যবসায়ীদের কেন এমন নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও বহু ভূমি মালিক। ব্যবসায়ীদের এমন নেতিবাচক পরিস্থিতি টের পেয়ে অনেক ভূমি মালিক সটকে পড়ার চেষ্টা করছেন।
কারণ যে প্রতিষ্ঠান করার জন্য ব্যবসায়ীরা প্রথমে সামান্য বিনিয়োগ করেছিলেন তারা আর এগিয়ে না আসায় ভূমি মালিকরা পড়েছেন বেকায়দায়। তারা না পারছেন ব্যবসায়ীদের এমন পরিস্থিতি সইতে না পারছেন জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিতে অথবা অন্য কোন বিনিয়োগকারীর নিকট বন্ধক রাখতে। এ নিয়ে বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল জলেশ্বরীতলা এলাকার বেশ কয়েকজন ভূমি মালিক বিনিয়োগকারীদের হাত থেকে তাদের চুক্তিবদ্ধ জমি ফিরিয়ে নিতে আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন। শনিবার এরকম ঘটনায় বন্ধক দেয়া জমি ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে বগুড়া প্রেস ক্লাবে তার সন্তানদের নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফরিদা ইয়াসমীন নামে এক গৃহবধূ। তিনি জলেশ্বরীতলা এলাকার আব্দুর রশিদের স্ত্রী। তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শহরের সূত্রাপুর মৌজায় ২৬৯ খতিয়ানভুক্ত ৮০৪৬ দাগের একটি প্লটে ১৫ তলা বিল্ডিং করার জন্য চুক্তিমোতাবেক জমিটি বন্ধক দেন ইনল্যান্ড প্রোপার্টিজ লিমিটেড (আইপিএল) নামে একটি ডেভিলপিং কোম্পানিকে। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। তিনি দাবি করেন চুক্তির পর হতে নানা অজুহাতে কোম্পানিটি তাদের জায়গা খালি করে দিলেও আজ পর্যন্ত উক্ত কোম্পানি তাদের জায়গায় চুক্তি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন কাজ শুরু করেনি। এতে তারা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।
তাই ভূমি মালিকপক্ষ বাধ্য হয়ে ডেভেলপার কোম্পানির সাথে আমমোক্তারনামা বাতিলের জন্য জেলা বগুড়ার ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৩৬/২০১৬ (অন্য) প্রকারের মোকদ্দমা দায়ের করেন। একইভাবে একই মৌজায় মিল্লাত প্লাজা নামের একটি বাড়ির মালিকগণ বগুড়ার অপর একটি ডেভেলপার কোম্পানির সাথে বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই কোম্পানি চুক্তি করার পর ইমারত নির্মাণে গড়িমসি শুরু করে।
এতে ওই জমি মালিকরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। পরে মামলা মোকদ্দমা ছাড়াই তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে আমমোক্তারনামা বাতিল করে আপোষ মীমাংসা করে ফেলে। একইভাবে বগুড়ার এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রথমে বহু ডেভলোপার কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য এগিয়ে এলেও এখন অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আগে বিনিয়োগকৃত টাকা উঠিয়ে নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
হঠাৎ বগুড়ার মত একটি উন্নয়নশীল শহরে বিনিয়োগকারীরা কেন বিনোয়াগ না করে অথবা বিনিয়োগকৃত টাকা উঠিয়ে নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বগুড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে উন্নয়ন লাভ করছিল বর্তমানে সে উন্নয়ন থমকে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ এর সাত বছর এবং ওয়ান ইলেভেন সরকারের তিন বছরের শাসনামলে বগুড়ায় তেমন কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ হয়নি। মূলত সে কারণেই বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বগুড়ায় তাদের বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বগুড়া ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা এখন রাজধানী ঢাকায় না গিয়ে বগুড়ায় সব ধরনের জিনিজপত্র পাইকারী দামে কিনে নিজেদের এলাকায় বিক্রি করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন ক্রেতাসাধারণগণও ন্যায্য মূল্যে তাদের জিনিসপত্র কিনে আনন্দিত হচ্ছেন। এছাড়া বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। এজন্য আবাসিক সংকট দূরীকরণার্থে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বগুড়ায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ জন্মাতে সরকারের উচিত এখানে উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ আরও বাড়ানো দরকার বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন