পঞ্চগড় জেলা সংবাদাতা ঃ সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পঞ্চগড়ের বাংলাবন্ধা স্থলবন্দরে চলছে ঘুষের রমরমা বাণিজ্য। সূত্রমতে, এখানে কাস্টমস ও সিএন্ড এফ এজেন্ট’র অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে লুটেপুটে খাচ্ছে সরকারের রাজস্ব। আর ঘুষ ছাড়া এখানে সবই অচল। ঘুষ ছাড়া কাস্টমস কর্মকর্তারা ফাইলে স্বাক্ষর করেন না এবং মলামাল ও খালাস হয় না এ বন্দরে। গত বছর ভারত হতে আসা একটি অবৈধ সাইকেলের বড় চালান ধরা পড়লে এখানকার কাস্টমস কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও বন্দরটিতে কিঞ্চিৎ পরির্বতন হয়নি। তবে, ঘুষের বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের নানা অবৈধ সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে প্রতি ৫০০ টন পাথর আমদানি করতে কাস্টমস, শ্রমিকচার্জ, সিএন্ড এফ চার্জ এবং ঘুষসহ প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। প্রতি ৫০০ টনে মূল রাজস্ব ২ লাখ ২০ হাজার টাকা হলেও বাকি টাকা ঘুষ এবং অন্য খাতে ব্যয় হয়। প্রতি ৫০০ টনে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে ৬ হাজার টাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। প্রতি ১ হাজার টনে দিতে হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। এ টাকা না দিলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম-কানুন দেখিয়ে পণ্য আটকে দেয়। সিএন্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে এ টাকা কাস্টম কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে এ স্থলবন্দর দিয়ে শুধুমাত্র পাথর আমদানি হচ্ছে। এর আগে ২২ প্রকারের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলেও বর্তমানে বাকি পণ্য আমদানি করতে অনুমতি দিচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বন্দরটির নানা অনিয়মের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আমদানি বা রপ্তানি করতে গেলেই প্রত্যেক ট্রাক বাবদ কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান করতে হয়। না দিলে পণ্যবাহী গাড়ি দিনের পর দিন আটকে থাকে। ২০১৫ সালের ১৯ মে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা দুই হাজার ৪০০টি বাইসাইকেল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা আটক করে। এর মধ্যে ৪৮০টি বাইসাইকেলের রাজস্ব পরিশোধের কাগজপত্র ও বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র ছিল। এ সময় ৫টি ট্রাকের ৮ জন চালক ও সহকারীকেও আটক করা হয়। মূলত এসব কারণেই বাকি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা। সিএন্ড এফ এজেন্ট নসিমুল হাসান ও সাইদুর রহমান জানান, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্যই রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দেয়া হয়। এতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের অবৈধ সুবিধা করে দেয়। নতুন বন্দর হিসেবে এ এলাকার ব্যবসায়ীরা অনেক কিছুই এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। ক্রমান্বয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেন, এবং বলেন, ব্যবসায়ীরা কেন এমনটা বলছেন বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন ‘টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাবন্ধা দিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ অসে। একটি বিশেষ সিন্ডিকেট এই অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত। শুরু থেকে এই সব অনৈতিক কার্যকলাপ করে অনেকে টাকার পাহাড় গড়ছে। এসব অবৈধ মদে মুনাফাও কম না। একটি বোতলে অর্ধেকেই লাভ হয়। কাস্টমস কর্মকর্তারা যায় আসে এর কোন পরিবর্তন হয়না। এতে সিএন্ড এফ’র কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে যা অনেকের জানা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন