কুয়াশার আবরণে তুরাগ তীর, আজানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত ইজতেমা ময়দান। শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য শেষ হবে আলমী শুরাদের বিশ্ব ইজতেমা। আজ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে লাখ লাখ মুসল্লির ঢল এখন ময়দানমুখী। যারা ময়দানে জায়গা পাননি তারা সড়ক মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও ময়দানের আশপাশে খালি জায়গায় চট কিংবা বিভিন্ন সামানা বিছিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। মুসল্লিদের চাপে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক টঙ্গী কালীগঞ্জ সড়ক ও কামাড়পাড়া আশুলিয়া সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মুসল্লি ও পথচারীরা।
আজ সকালে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দিনের দাওয়াত ও বিভিন্ন বিষয়ে অলোচনা করেন পাকিস্তানের মাওরানা ওবায়দুল্লাহ খূরশেদ। জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের মুরব্বি যোবায়ের হাসান। ময়দানের উত্তর পশ্চিমকোনে অবস্থিত মূলবয়ান মঞ্চথেকে বয়ান করেন এবং তা বাংলায় তর্জমা করা হচ্ছে। বয়ানে দিনের দাওয়াত, তাবলীগের মেহনত আখেরাত সম্পর্কে কথা বলেন।
ইজতেমার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কানায় কানায় পরিপূর্ণ ইজতেমা ময়দান। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মুসল্লি ময়দানের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন এবং অনেকে জায়গা না পেয়ে বিভিন্নস্থানে দাঁড়িয়ে বসার জায়গার ব্যবস্থা করছেন। যারা ময়দানের বাইরে রয়েছেন তারা পানি, টয়লেট ও খাওয়া দাওয়াসহ বিভিন্নভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতো মুসল্লি কোথায় জায়গা দিবেন এনিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আয়োজক কমিটি।
বিভিন্ন জেলার কিশোর, যুবক, বয়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণির মানুষ ইজতেমা মাঠে আসা শুরু করেছেন। অনেকে দীর্ঘ চল্লিশ বা ১২০ দিন ইসলামের দাওয়াত শেষ করে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইজতেমা শেষে দেশ-বিদেশ ঘুরে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ বা ১২০ দিনের জন্য বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক শামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন।
মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কাঁধে বহন করে মাঠে আসছেন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে আসা মোহাম্মদ দুলাল মিয়া বলেন, আখেরি মোনাজাত শেষে মুরব্বিদের ঘোষণা এলে ইজতেমা স্থান ত্যাগ করবেন। ইজতেমা মাঠের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তারা কখনোই ভাবেন না। তাদের এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। অর্জিত জ্ঞান দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
কিশোরগঞ্জ জেলার এক মুসল্লি মরতুজ আলী বলেন, ময়দানের ভিতরে জায়গা পাই নাই, যে কারণে সড়কে অবস্থান নিয়েছি।
ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যম বিষয়ক সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, তিন দিনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন জামাতের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। ময়দানজুড়ে বিশাল চটের শামিয়ানার নিচে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য ৮৭টি খিত্তা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মেহমানের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা রেখে ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে আন্তর্জাতিক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জামাতবদ্ধ মুসল্লি ছাড়াও ব্যক্তিগত ও স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নেবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের খেদমত করার সুযোগ পেয়েছেন। দেশ-বিদেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের সব দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য সিটি কর্পোরেশন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। এজন্য ২ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছে। ইজতেমার মুরুব্বিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তৎপর রয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন