সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয়তা নিবন্ধন (এনপিআর) ও নাগরিকত্ব নিবন্ধন আইন (এনআরসির) কোনও প্রয়োজন নেই ভারতের। এই শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার একটি খোলা চিঠি লিখলেন ভারতের ১০৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। ওই চিঠিতে তারা দাবি করেন, এনপিআর ও এনআরসি ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং তা ‘অপব্যয়’।
দিল্লি নাজবি জংয়ের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর কেএম চন্দ্রশেখর এবং সাবেক মুখ্য তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ সহ শতাধিক আমলা ওই চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে তারা দাবি করেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন তথা সিএএ নৈতিকভাবে অসমর্থনীয়। তাদের মতে, এই আইনে সজ্ঞানে মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে, যারা ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ। প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন, সিএএ ও এনআরসি পরস্পর সম্পর্কিত নয়। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর উল্টো কথাই বলেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতিতে যখন দেশের সেদিকেই সবথেকে বেশি নজর দেওয়া দরকার, তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে সরকার ও জনতা মুখোমুখি সংঘর্ষে রাস্তায় নেমেছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, অধিকাংশ রাজ্য সরকারই এনপিআর ও এনআরসিকে মেনে নেয়নি। ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব কাক্সেক্ষয় নয়। পাশাপাশি এর ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যাতে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবম‚র্তি ক্ষুণœ হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কেরও অবনতি হবে।
প্রাক্তন আমলারা জানাচ্ছেন, তাদের দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে তারা স্পষ্ট ভাবে বুঝছেন এনপিআর ও এনআরসি অপ্রয়োজনীয়। এবং এটি অপব্যয়ও বটে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ অসুবিধায় পড়বেন। এবং এর প্রয়োগে যে অর্থ ব্যয় হবে তাকে গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য কল্যাণকর কোনও প্রকল্পে খরচ করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি আধার, মোবাইল নম্বর ও ভোটার আইডি-র মতো তথ্য ওই তালিকা তৈরিতে কাজে লাগবে। এর ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হতে পারে। ওই তথ্যের অপব্যবহারও হতে পারে বলে জানান তারা। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতে জন্মের নথিভুক্তকরণের বিষয়টি খুব ভাল নয়। এর ফলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ফলে দেশজুড়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ দমনে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশের যে পদক্ষেপ, তার ফলে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে এনপিআর, এনআরসি তৈরি করা হচ্ছে দেশের বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে দেশছাড়া করার জন্য। চিঠিতে তারা জোর দিয়ে জানিয়েছেন, ভারতে এনপিআর ও এনআরসির কোনও প্রয়োজন নেই। সূত্র : এনডিটিভি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন