পৌষের শেষ সপ্তাহ এসে গেছে । রাজধানী ঢাকাতে শীতের প্রাদুর্ভাব বেশ লেগেছে কিন্তু ঢাকার বাহিরে বেশ শীত অনেক দিন ধরেই । তাই এই সময়টাতে শিশুদের নিয়ে একটু যতœবান হওয়া উচিৎ। মূলত আবহাওয়ার তারতম্য বা ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারনে এবং শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হওয়ার কারনে শীতের শুরুতেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
সাধারনত শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় বায়ুবাহিত ও ফুসফুসের রোগ বেশি হয়। এ সময় সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অ্যালার্জিক রোগ, শীতকালিন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে। শীতে সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠান্ডা জ্বর বেশি দেখা দেয়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয় এবং এ সমস্ত রোগেই বেশি আক্রান্ত হয় । আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃসরিত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ হয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুদের একটু দূরে রাখতে হবে । কেননা এর ফলে রোগীর জ্বর, গলাব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, বন্ধ নাক দিয়ে অনবরত সর্দি নিঃসৃত হওয়া, খুসখুসে কাশি এবং এর ফলে গলা, মাথা ও বুকে-পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। কোনো কোনো সময় খাবারে অরুচি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর শিশুকে ও যাদের ক্রনিক ডিজিজ আছে, তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। শিশু বয়সে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হলো নিউমোনিয়া। এই রোগটির সতর্কতা স্বরূপ পিতা- মাতাকে মনে রাখতে হবে ঠান্ডা লাগার পর শিশু যদি খুব দ্রæত ও ঘন শ্বাস নেয় অথবা শ্বাস নেওয়ার পর সাইঁ সাইঁ শব্দ হয় কিংবা বুকের পাঁজর যদি ডেবে যায় তাহলে শিশুকে অতি দ্রæত চিকিৎসকের কাছে পরামর্শেও জন্য নিতে হবে । মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারনে নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শীতের মধ্যে শিশুদের ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খাওয়ানো উচিত নয়। সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। তা ছাড়া কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মায়েরা ছোট শিশুদের জন্ম থেকে দুই বছর পর্যন্ত মাথা উঁচু করে বুকের দুধ খাওয়াবেন। শুয়ে দুধ খাওয়ালে সর্দি, কাশি ও কানের ইনফেকশন হতে পারে। খুব বেশি শীতের কাপড় পরালে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। প্রস্রাব করে তার ওপর শুয়ে থাকলে ঠান্ডা লাগতে পারে। শীতকালে যে ডায়রিয়া হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রথমে বমি দিয়ে শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পর থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এক পর্যায়ে চালধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা ঘন ঘন হতে পারে। ডায়রিয়া বা বমি হলে শুরুতেই খাওয়ার স্যালাইন ও অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই শরীরে পানিশূন্যতা যেন দেখা না দেয়। যে পরিমাণ পানি ও লবণ শরীর থেকে বের হবে, সে পরিমাণ পানি ও লবণ খাওয়ার স্যালাইনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিংক ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়াতে হবে।
খোসপাঁচড়া ছাড়াও শিশুদের ফোঁড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, হাত-পা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি চর্মরোগ হতে পারে। তাই শীতকালে শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ধুলাবালি নিয়ে খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হবে। পরিবারে বড়দের সর্দি কাশি হলে তাদের কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। আর পরিবারে বড় শিশুরা বাহির গেলে ঘরে এসে হাত পা ধুতে হবে । সর্বোপরি এ সময়ে যে কোনো সমস্যার শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, ভালো থাকুন।
শিশুরোগ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
সাবেক পরিচালক, শিশু হাসপাতাল
ডাঃ মনজুর’স চাইলড’স কেয়ার সেন্টার
৮৪/১(৩য়তলা), রোড ৭/এ
সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৯।
মোবাইল-০১৭১১৪২৯৩৭৩
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন