শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সুশাসনের জন্যই বাকস্বাধীনতা প্রয়োজন

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হচ্ছে, স্বাধীন মতামত প্রকাশ করা। সেটা পরিবার হোক, সমাজ হোক, রাষ্ট্র হোক কিংবা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার সময় হোক-সব জায়গায়ই মতামত প্রকাশ করা বা কথা বলা তার সহজাত বৈশিষ্ট্য। কার কথা কতটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক, তা নিয়ে তর্ক থাকংেতি পারে। পছন্দ হলে কেউ গ্রহণ করে, অপছন্দ হলে পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। কখনো কখনো ঝগড়া-ঝাটিও লেগে যায়। আবার তা মিটেও যায়। তা না হলে, চিরকাল ঝগড়া-ঝাটি লেগে থাকত। সভ্যতা বলে কিছু থাকত না। কাউকে কথা বলতে না দেয়া সভ্য কাজ নয়। সভ্য ও সচেতন মানুষের কাজ হচ্ছে, কারো কথা পছন্দ না হলেও তা শোনা এবং শুনে তার যুক্তিযুক্ত জবাব দেয়া। তার আগে যে কথা বলতে চায়, তাকে তা বলতে দেয়া। মূলত মানুষের মধ্যে এমন সভ্য আচরণকেই গণতন্ত্র কিংবা বাকস্বাধীনতা বলা হয়েছে। পরস্পরের কথা বলাকে স্বাগত জানানো, সহমর্মী হওয়া এবং তার আলোকে কথার জবাব দেয়ার সংস্কৃতির এই ধারা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এর ব্যতিক্রম যে ঘটে না তা নয়, একগুঁয়ে মনোভাবসম্পন্ন এমন মানুষও রয়েছে যারা চায় তাদের কথাই শেষ, তা ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক, এর বাইরে আর কোনো কথা নেই এবং কেউ কথাও বলতে পারবে না। এ ধরনের একগুঁয়ে মানুষ পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হিসেবে পরিচিত। গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের পছন্দ করেনি, এখনও করে না। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতাকেই মানুষ আঁকড়ে ধরেছে। তবে বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় এই ধারাটি যেন ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। একনায়েকতন্ত্র এবং স্বৈরাচারী মনোভাবসম্পন্ন শাসন ব্যবস্থা বেড়ে চলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত অনেক দেশেই এমন ব্যবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে চীন এবং ভারতের দিকে তাকালে তা বোঝা যায়। অন্যদিকে এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন। অনেকে বলছেন, ‘ফ্রিডম অফ স্পীচ’-এর বিষয়টি সীমিত হয়ে পড়েছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচ অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছে, আমাদের দেশে বাকস্বাধীনতা খর্ব হয়ে গেছে। মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারে না। সরকারের সমালোচনা করতে পারে না। গণমাধ্যম সেল্ফসেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে চলছে। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সরকার রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা সীমিত করে দিয়েছে। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়। দেশে অবাধ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রয়েছে বলে বলা হয়। এর বিপরীতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সরকারের কথা বলার অবাধ বাকস্বাধীনতা থাকলেও সরকারের বাইরে যারা রয়েছে, তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। সবকিছুই চলছে সুপরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে। কথা সবাই বলছে, তবে তা সরকারের বিপক্ষে যায় বা সরকারের ভুল-ত্রু টির কথা প্রকাশ পায়, এমন কথা বলা যাচ্ছে না। কথা বলতে গিয়ে ভয় কাজ করে। প্রখ্যাত দার্শনিক, লেখক জন মিল্টন বলেছিলেন, ‘গিভ মি দ্য লিবার্টি টু নো, টু আটার, অ্যান্ড টু আরগু ফ্রিলি অ্যাকোর্ডিং টু কনসায়েন্স, এভাব অল লিবার্টি।’ তার এই কথার মধ্যে ভেতরে ভেতরে গুমরে মরা মানুষের কথা বলতে না পারর বিষয়টি উঠে এসেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে মিল্টনের এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে, বাকস্বাধীনতার নামে যা খুশি তা বলা নয়, বরং যা সত্য এবং উচিত তা বলার স্বাধীনতা দেয়া। আমাদের দেশে কি এখন এই উচিত কথা বলার মতো পরিবেশ রয়েছে?

দুই.
জনসাধারণের বাকস্বাধীনতার বিষয়টি সাধারণত নির্ভর করে রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সচেতন নাগরিক মহলের প্রতিনিধিত্বের উপর। তাদের দায়িত্ব জনসাধারণের জন্য উচিত-অনুচিত এবং কল্যাণ-অকল্যাণমূলক ঘটনা এবং কথাবার্তা সুবিবেচনাপ্রসূত ও অবারিতভাবে প্রকাশ করা। এ দায়িত্ব পালনে তারা কতটা স্বাধীন বা করতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ ফ্রিডম অফ স্পীচ বা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালে গৃহীত ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’-এর আর্টিক্যাল ১৯-এ বলা হয়েছে, কোন ধরনের বাধা ছাড়া প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশ ও ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের তথ্য খোঁজা, গ্রহণ করা এবং তা বলা, লেখা, শিল্পকলাসহ যত ধরনের প্রকাশ মাধ্যম রয়েছে, তার পছন্দমতো মাধ্যমে প্রকাশ করা। তবে এ স্বাধীনতা সতর্কতার সাথে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে চর্চা করতে হবে, যাতে অন্যের অধিকার ও সম্মানহানি এবং জাতীয় ও জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। অর্থাৎ বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রটি কেবলমাত্র নিশ্চিত হতে পারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সুশাসন ও সুস্থ্য রাজনৈতিক পরিবেশের মাধ্যমে। আমাদের দেশে বাকস্বাধীনতার মৌলিক এই চরিত্রের অনুপস্থিতি দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। এটিকে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে, কিছু প্রচার মাধ্যম ও সচেতনমহল তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করেছে এবং করছে। একের জন্য যে কথা সুবিধার সেটাই সঠিক, অন্যের কথা যতই উচিৎ ও সত্য হোক, তা উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। অথচ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার নিউক্লিয়াসই হচ্ছে, অন্যের মতামত পছন্দ না হলেও তার গুরুত্ব দেয়া। নোয়াম চমস্কি বলেছিলেন, তুমি যদি বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো, তবে তোমাকে ধরেই নিতে হবে তোমার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির বাকস্বাধীনতাকে পছন্দ করতে হবে। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের বিখ্যাত সেই উক্তি তো সকলেরই জানা। তিনি বাকস্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তোমার মতের সাথে আমি একমত না হতে পারি, তবে তোমার মত প্রতিষ্ঠায় আমি জীবন দিতে পারি। মতপ্রকাশের তার এই বাণী মানুষের কাছে অমর হয়ে রয়েছে। তার নির্যাস মুক্তমনের মানুষ সবসময়ই ধারণ করে চলেছে। আমাদের দেশের মতো গণতন্ত্রকামী দেশে যেখানে গণতন্ত্র পুরোপুরি ভিত্তি লাভ করেনি, সেখানে গণতন্ত্র অনেকটা তৈলাক্ত বাঁশে বানরের উঠানামার মতো অবস্থায় রয়েছে। গণতন্ত্রকে একেক দল বা গোষ্ঠী তাদের সুবিধা মতো সংজ্ঞায়িত করেছে এবং করে চলেছে। মুখে মুখে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতের উদাহরণও প্রায়ই তারা দিয়ে থাকে। গণতন্ত্রের এসব উদাহরণ দেখিয়ে জনসাধারণের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি করলেও কার্যক্ষেত্রে এর চর্চা এবং প্রতিফলন দেখা যায় না বললেই চলে। বলা যায়, গণতন্ত্রের মোড়কে এক ধরনের একনায়কতন্ত্রিক মনোভাব ধারণ করে। বলা বাহুল্য, গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। পরিতাপের বিষয়, যাদের নেতৃত্বে জনগণ সংগ্রাম করেছে, ক্ষমতায় আসার পর তাদের দ্বারাই গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। জনসাধারণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তারা আশাহত হয়েছে। এক গণতন্ত্রের জন্য তাদের আর কত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে, তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ব্রিটিশ, আমেরিকার গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করতে শত বছর লেগেছে। তাদের দেড়-দুইশ’ বছরের গণতন্ত্র। আর আমাদের এখনো অর্ধশত বছর পূরণ হয়নি। তাদের এসব কথার মধ্যে যে এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক ও শাসন-শোষনের মনোভাব রয়েছে, তা সচেতন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের এ কথার অন্তর্গত অর্থ হচ্ছে, শতবর্ষ না পেরুলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না, কাজেই জনসাধারণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরও শতবর্ষ অপেক্ষা করতে হবে। এটা গণতন্ত্রকামী মানুষের সাথে এক ধরনের প্রবঞ্চণা ছাড়া কিছুই নয়। যে রাজনৈতিক দল অভিযোগ তুলে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণ, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া,এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সেই তারা যখন ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করে, তখন দেশের মানুষের বিস্মিত ও আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। দেশের শাসক গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি এ ধরনের প্রবণতা বজায় থাকে, তবে শত বছর কেন, হাজার বছরেও গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করবে না। মানুষের বাকস্বাধীনতাও নিশ্চিত হবে না। যারা উচিত কথা বলতে যাবেন, তাদেরকে পদে পদে হুমকি-ধমকির মধ্যেই থাকতে হবে।

তিন.
আমাদের দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটুকু রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ দেখলে মনে হবে, প্রবল চাপে নুয়ে পড়ে স্থবির হয়ে রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক ও শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এর ভেতরে যে কথা বলতে না পারার বেদনা চাপা পড়ে আছে, তা সকলেই বুঝতে পারছে। সচেতন নাগরিক সমাজ এই পরিস্থিতিকে পলিটিক্যাল অ্যানহিলেশন বা নিশ্চিহ্নকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অনেকে বলছেন, ক্ষমতাসীন দল আন্দোলনরত বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদেরকে দমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও দিকভ্রান্ত হয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েছে। তারা না জনগণের হয়ে কথা বলতে পারছে, না নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছে। বরং ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর তাদের রাজনীতি নির্ভর করছে। পৃথিবীর সব ক্ষমতাসীন দলেরই স্বাভাবিক চাওয়া, তার প্রতিপক্ষ বা সমালোচক বলে কেউ না থাকুক। তবে সুশাসনের মনোভাব সম্পন্ন এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল অবশ্যই চায় তার প্রতিপক্ষ সমালোচনা করুক, তার ভুল-ত্রু টি ধরিয়ে দিক। শাসক দলের এ ধরনের মনোভাবই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখে। ঘুরিয়ে বললে, ক্ষমতাসীনদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই প্রতিপক্ষের মতামত এবং সমালোচনা গ্রহণ করা জরুরী। তা না হলে, যখন তাদের বিদায় নিতে হবে, তখন ক্ষমতার সাথে সাথে তার দলের পতন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে যারাই সরকারে যায়, তারাই মনে করে তাদের কোনো দিনই ক্ষমতা ছাড়তে হবে না। তাই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীমত দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ প্রবণতা এখনও রয়েছে এবং তা প্রবলভাবে বিদ্যমান। এ প্রবণতা টিকিয়ে রাখতে, বিরোধী দল তো বটেই গণমাধ্যম থেকে শুরু করে যেসব ব্যক্তি সরকারের সমালোচনা করে, তাদের দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর সরকারের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমগুলো ভয়ে নিজেরাই সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে চলছে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশে প্রতিমুহূর্তে কি হচ্ছে, তা জানার অধিকার দেশের জনগণের রয়েছে। তাদের এ জানানোর কাজটি যে গণমাধ্যমগুলো যথাযথভাবে করতে পারছে না, তা সকলেই বুঝতে পারছে। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে সঙ্কুচিত তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কয়েক বছর আগে তার এক প্রতিবেদনে খোলামেলাভাবে বলেছে। তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি ঘটছে। সঙ্কুচিত হয়ে আসছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। অব্যাহত রয়েছে গণমাধ্যম সম্পাদক আর নির্বাহীদের হয়রানি। তাদের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে সরকার।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারি দলের পক্ষ থেকে সংগঠনটিকে বিরোধীদলের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। সরকারি দলের লোকজন দ্বারা যদি বিশ্বখ্যাত সংগঠন তোপের মুখে পড়ে, তখন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের উপর সরকার প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে, এ কথা দেশীয় কোন মানবাধিকার সংগঠন বা ব্যক্তি বললে, তার কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। যারাই একটু-আধটু বলতে গেছে, তাদের কি অবস্থা হয়েছে, তা তাদের পরিণতি ভোগ করার মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে। একইভাবে বলা প্রয়োজন, গণমাধ্যম অত্যন্ত সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল মাধ্যম। এখানে সচেতন, দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিরাই কাজ করেন। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, তারাও মানুষ। ভুল তাদেরও হতে পারে। আর তাদের ভুলের প্রতিকারের নানা নিয়মকানুন ও বিধিব্যবস্থা রয়েছে।

চার.
আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মাঝে মাঝে হোঁচট খেলেও, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যারা এই ব্যবস্থা এগিয়ে নিচ্ছে, তাদের সতর্ক থাকার আবশ্যকতা রয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের দ্বারাই যদি এ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা জাগ্রত হয়, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। গণতন্ত্রের স্পিরিটটাই এমন যে, জরুরী অবস্থার মধ্যেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা বা দমানো যায় না। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশিত হয়। এ প্রকাশকে যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দমানোর প্রয়াশ চালায়, তা কোনক্রমেই তাদের অনুকুলে যায় না। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সংকট দেখা দিলে তা নিরসন করতে পারে একমাত্র বাকস্বাধীনতা। এর মাধ্যমে সংকটমোচন এবং বিবদমান গোষ্ঠীকে প্রশমিত করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফ্রিডম অফ স্পীচ গণতন্ত্রের ‘সেফটি ভাল্ভ’ বা নিরাপদ কপাট হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব ব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গর্ভনেন্স ইন্ডিকেটরস’ প্রজেক্টের আওতায় কিছুকাল আগে বিশ্বের ২০০ দেশের উপর করা জরিপে দেখা গেছে, যেসব দেশে বাকস্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতা আছে, সেসব দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র সংহত হয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, শাসকদল এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ধারা ও বাকস্বাধীনতার সংকোচন নীতি অবলম্বন করছে না। তবে যেহেতু দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে, তাই এ নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। স্মরণ রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং সুশাসন কখনোই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে না।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন