রফিকুল ইসলাম সেলিম ঃ দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। বাজারে তাই ক্রেতদের তাড়াহুড়া। চট্টগ্রামের মার্কেট, শপিং মল আর বিপণি কেন্দ্রগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের জমজমাট কেনাকাটা। ভিড় বেড়েছে জুতা, টুপি, আতর আর সেমাই-চিনির দোকানে।
ঈদের অনেক আগেই এবার শুরু হয়েছে লম্বা ছুটি। ইতোমধ্যে মহানগরী ছেড়ে গেছে কয়েক লাখ মানুষ। অফিস-আদালত বন্ধ। রাস্তায় যানবাহনের চাপও কমে গেছে। তবে বিপরীত চিত্র মার্কেট এলাকায়। মার্কেট ঘিরে সড়কে যানজট। ঈদ বাজারে মানুষের ভিড়। সকাল থেকে সেহেরী পর্যন্ত প্রতিটি মার্কেট, শপিংমল, বিপণী কেন্দ্র খোলা থাকছে। বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ার খুশি বিক্রেতারাও। শেষ সময়ে এসে অনেকে দাম ছেড়ে দিচ্ছেন। কিছুটা কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এতে উভয়ে খুশি।
ঈদ উপলক্ষে পোশাকের বাজারে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। গত কয়েক দিনের তুলনায় শপিং মলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। তবে শেষ সময়ে যারা শপিং মলগুলোতে আসছেন তারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের বাজার করছেন। ক্রেতারা জানান, শপিং মলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় একটু বেশি সময় নিয়ে দেখে পছন্দের পোশাক ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে বিক্রয় নিয়ে খুশি দোকানিরা। তারা জানান, ঈদে লম্বা ছুটির কারণে এ বছর একটু আগে ভাগে শপিং মলগুলোতে ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। যারা ঈদ গ্রামে করবেন তাদের বেশিভাগ ইতিমধ্যে নগর ছেড়েছে। যার কারণে এখন ক্রেতার সংখ্যা একটু কম।
মহানগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, আমীন সেন্টার, সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, মুন্নি সুপার, শপিং কমপ্লেক্স, গুলজার টাওয়ার, মতিটাওয়ার, কোয়ারী, চকসুপার মার্কেট, লাকিপ্লাজা, সাউথল্যান্ড সেন্টার, ব্যাংকক সিঙ্গাপুর মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিঙ্গাপুর সুপার মার্কেট, বে-শপিং সেন্টার, মহাজন টাওয়ারসহ নগরীর ছোটবড় শতাধিক মার্কেট এখন জমজমাট।
নগরীর টেরী বাজারস্থ একটি পঞ্জাবির দোকানদার জানান, ক্রেতাদের ঈদ আনন্দে যাতে কোন ভাটা না পড়ে সে জন্য এবার সব ধরনের পাঞ্জাবিতে বিশাল ছাড় দিয়েছি। যার কারণে বিগত বছরের তুলনায় ভালো সাড়া পেয়েছি। শেষ মুহূর্তে পাঞ্জাবির দাম আরেক দফা কমিয়ে খুব সামান্য লাভে বিক্রয় করছি। আমীন স্টোরের একজন ব্যবসায়ী জানান, শেষ দিকে আমরা কিছুটা ছাড়ে পোশাক বিক্রি করছি। এতে ক্রেতারাও খুশি, আর শেষ সময়ে এসেও বিক্রি হওয়ায় আমরাও খুশি।
নগরীর প্রায় সব শপিং মলে এখন ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম। তাই বিক্রেতারাও কিছু দাম ছাড় (ডিসকাউন্ট) দিয়ে বিক্রয় করছেন পোশাক। তারা জানান, ঈদের পর দীর্ঘদিন শপিং মলগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া এ সময়ের পরও কিছুদিন শপিং মলে আসবেন না ক্রেতারা। তাই পোশাকের যে টুকু স্টোক আছে তা কম লাভে বিক্রয় করে পুঁজি তোলায় এখন লক্ষ্য। ঈদের আগে আরো তিনদিন বিক্রয় হবে। এছাড়া ঈদের আগের দিন সারা রাত খোলা থাকবে মার্কেটগুলো।
কিছু স্বস্থিতে কেনা কাটা সারতে পেরে খুশি ক্রেতারা। নগরীর ভিআইপি টাওয়ারে ঈদের কেনাকাটা সারতে আসেন পতেঙ্গার গৃহিণী কোহিনুর বেগম। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ছেলে মেয়েদের নিয়ে মার্কেটে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ভিড়ের কারণে অনেক কিছুই কিনতে পারেননি। তার উপর প্রচÐ গরমে কাহিল হয়ে পড়েন। এখন সে অবস্থা নেই, মার্কেটে ভিড়ও তেমন নেই, পরিবেশও অনেক ভাল। গত দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় গরমের তীব্রতা কমে গেছে। এতে ক্রেতারা আরামেই মার্কেটে ঘুরতে পারছেন।
অভিজাত বিপণী কেন্দ্রের সাথে ফুটপাতের দোকানেও কেনাবেচা বেশ জমে উঠেছে। তবে বৃষ্টির কারণে বিক্রেতাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, মালামাল ভিজে যাচ্ছে। আবার ক্রেতারাও বৃষ্টিতে ভিজে কেনা কাটা করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। নগরীর আন্দরকিল্লা ও চকবাজারে দেখা গেছে টুপি ও আতরের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ঈদে নতুন কাপড়ের সাথে নতুন টুপির চাহিদাও কম না। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে দেশি বিদেশি টুপি।
ঈদের নামাজে নতুন পাঞ্জাবির সাথে মিল রেখে টুপি আর একটুখানি আতরের সুবাস না হলে যেন অপূর্ণতা থেকে যাবে ঈদ আনন্দ। তাই ঈদের সার্বিক কেনাকাটার পাশাপাশি টুপি, আতর যেন অপরিহার্য। তবে দোকানিরা বলছে গতবারের তুলনায় এবার বাজার কিছু মন্দা। আগে ভাগে বাসিন্দারা নগরী ছাড়ার কারণে ক্রেতার সংখ্যা এবার কিছু কম। বাজারে সেমাই চিনিসহ হরেক রকম খাবারের বিক্রিও বেড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন