বিশ্বকাপ জয়ী আকবরকে রংপুরে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বোনের মৃত্যুর ১৯ দিনের মাথায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিশ্বকাপ শিরোপার আনন্দে ভাসিয়ে হিরো আকবর প্রথম এসেছেন নিজ জন্মভুমি রংপুরে। তাকে বরণ করে নিতে উৎসবের আমেজে সেজেছে পুরো রংপুরসহ আকবর আলীর নিজ মহল্লা জুম্মাপাড়া।
তার আগমনে উৎফুল্ল পুরো রংপুরবাসী। গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন আকবর আলী। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। পরে সেখান থেকে তাকে কার, মাইক্রো, মোটর সাইকেলের বিশাল বহর সহকারে রংপুরে নেয়া হয়। পথে পথে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে জানানো হয় শুভেচ্ছা। মোড়ে মোড়ে হাত উচিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে সংবর্ধিত করেন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষ। পরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ভালোবাসার ফুল, শুভেচ্ছা ও আশির্বাদে সিক্ত হন আকবর। সেখানে গণসংবর্ধনা শেষে নিজ পাড়া জুম্মাপাড়ায় ঢোকার পথে নগরীর কৈলাস রঞ্জন স্কুল গেটের সামনে থেকে লাল গালিচায় ফুলে ফুলে সিক্ত হয়ে মা-বাবার কাছে পৌঁছান আকবর।
সেখান থেকে বিকেলে তাকে আনা হয় জুম্মাপাড়ার সংবর্ধনা মঞ্চে। বিশ্বজয়ের পর যে এটাই তার প্রথম নিজ জেলায় আগমন। তার শৈশব-কৈশোরের স্বর্ণালি দিনগুলো কেটেছে এই রংপুর শহরের পশ্চিম জুম্মাপাড়ায়। আতশবাজি, মিউজিক্যাল সাউন্ড শো, আর লাল সবুজের পতাকায় পশ্চিম জুম্মাপাড়া হয়ে উঠে বর্ণিল। গোটা মহল্লাজুড়ে প্রকম্পিত হতে থাকে ‘আকবর দ্য গ্রেট’, ‘আকবর দ্য গ্রেট’ ধ্বনিতে। তার হাতে কাটা হয় ১৯ পাউন্ডের বিশাল একক কেক। সংবর্ধনার আয়োজন নিয়ে পশ্চিম জুম্মাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, ‘আমাদের আকবর বিশ্ব ক্রিকেট যুদ্ধে যে ক্রীড়া নৈপূণ্য দেখিয়েছে, তা বাংলাদেশের আগামীর উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিগন্তকে উন্মোচিত করেছে। আকবরের জন্য যেমন বাংলাদেশ গর্বিত। তেমনি রংপুরের মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত। বীরোচিত অধিনায়ক আকবরকে আমাদের সন্তান হিসেবে ক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’
আকবর শুরুতে মাদরাসায় ভর্তি হলেও পরে বাড়ির পাশে বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে রংপুরের অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে অঞ্জন সরকারের হাত ধরে রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে তার ক্রিকেটের হাতেখড়ি। ২০১২ সালে সুযোগ পান ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলে খেলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতাও হতে থাকে সমানতালে। সেই পথচলায় বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
শুধু ক্রিকেট নিয়েই অবশ্য পড়ে থাকেননি আকবর। পড়াশোনাটাও দারুণভাবে করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে তার এসএসসি পরীক্ষার সময় চলছিল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। তখন খেলা ও লেখাপড়া দুটিই সামলেছেন দারুণ মনোযোগে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি। এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৪২। সবকিছুতে ভালো করার ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ যুবদলের নেতৃত্বের ভার তার কাঁধে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্বের ভার সামলে চমক দেখালেন আকবর আলী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন