শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

অবশেষে জার্মানির ইতালি জয়

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে জার্মানি (১৫-৮)। অথচ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে একটিও জয় নেই! ৮ ম্যাচের সব ক’টিতেই হার! হিসাবটা এক ম্যাচ আগের। অবশেষে টুর্নামেন্ট ম্যাচে ‘ইতালি গেরো’ ছুটালো বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে ইতালি কি সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র! ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালের হাইভোল্টেজ ম্যাচে ১২০ মিনিটেও ম্যাচের ফল নির্ধারণ না হলে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার ভাগ্যে ৬-৫ গোলে ইতালিকে কাঁদায় জোয়াকিম লোর দল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ছিল ১-১ সমতায়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে এদিন কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামেন ইতালির খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শুরুর আগে নিরাবতা পালন করা হয় এক মিনিট।
পরশু ফ্রান্সের স্টেডি ডি বোর্দো যেন সব রোমাঞ্চ জমা করে রেখেছিল পেনাল্টি শ্যূট আউটের জন্যে। দু’দলই তাই শুরু থেকে খেলতে থাকে সতর্ক ফুটবল। ট্যাকটিক্যালি কেউ কাওকে ছাড় দেয়নি সুতো পরিমাণও। টাইব্রেকারেও ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মত দুলেছে প্রতিটা শটে। নয়টি করে শট নেয়ার পর ম্যাচ পৌঁছে নিষ্পত্তিরেখায়।
প্রথম শটে ইতালি ও জার্মানির হয়ে গোল করেন লরেঞ্জ ইনসিনিয়ে ও টনি ক্রুজ। এরপর থেকেই নাটকের শুরু। দু’দলই পরের শটে করেন মিস। ইতালির শট গোলের বাইরে নেন সিমোনে জাজা। অথচ জাজাকে বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল পেনাল্টি শট নেওয়ার জন্যেই। জার্মানিকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন টমাস মুলার। পরের শটে যখন বারজাল্লি ইতালিকে এগিয়ে নেয়ার পর ওজিলও যখন মিস করলেন তখন মনে হচ্ছিল আর বুঝি ইতালি গেরো কাটানো হল না জার্মানদের!
কিন্তু তখনও নাটকের ঢের বাকি। চতুর্থ শট নিতে এসে মনে হল কেঁপে গিয়েছিলেন গ্রাৎসিয়ানো পেল্লে। তার দুর্বল শট সাইড-বারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখনই জার্মানির সামনে সুযোগ আসে সমতায় ফেরার। সুযোগটা দু’হাত ভরে নিলেন জুলিয়ান ড্রেক্সলার। ভাগ্যের পাল্লা এরপর ঘুরে দাঁড়ায় জার্মারির পাশে, বেলুচ্চির নেয়া ইতালির পঞ্চম শটটি রুখে দেন ম্যানুয়েল নয়্যার। অথচ এই বেলুচ্চির পেনাল্টি শটেই নির্ধারিত সময়ে সমতায় ফিরেছিল ইতালি। জার্মানি তখন ‘ইতালি গেরো’ কাব্যের অবসান টানতে মাত্র এক শট দূরে। কিন্তু হায়! শোয়েইনস্টাইগারের উড়ন্ত শট আচড়ে পড়ে গ্যালারিতে! স্কোর বোর্ড ২-২!
পরের তিনটি শটেও বজায় থাকল সমতা। ইতালির হয়ে গোল করেন জাকেরিনি, পারোলো ও ডি সিলি, ওদিকে সমতা ধরে রাখেন জার্মানির হুমেলস, কিমিচ ও বোয়াটেং। ম্যাচের ফল নির্ধারিত হলো নবম শটে! ইতালির মাতেও দারমিয়ানের শট ফিরিয়ে দেন ন্যয়ার, এরপর আর কেন? জার্মানির ইতিহাস বদলে দেয়া সেই শটটি নেন লেফট ব্যাক জোনাস হেক্টর। সেই হেক্টর, যার ক্রস থেকে ম্যাচের ৬৪তম মিনিটে হেডারের মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন মেসুত ওজিল। জার্মান শিবিরে উল্লাসের জোয়ার। এই উল্লাস যতটা না আসরের সেফিফাইনালে পা রাখার তার চাইতে যেন বেশি প্রথমবারের মত ইতালি জয়ের।
জার্মান কোচের অবশ্য এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। সেটা জানা গেল তার কথাতেই, ‘২০০৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচেও আমার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওটা আজ কাজে দিয়েছে।’ কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচও নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতেছিল ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের দল, লো তখন ছিলেন সহকারীর ভূমিকায়। বিশ্বকাপ জয়ী লো বলেন, ‘এটা নাটকীয় একটা ম্যাচ ছিল। একেবারে শুরু থেকে শেষ শট পর্যন্ত। দু’দলই টেকটিক্যাল লেবেলে ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। পেনাল্টি মিস ছিল আরো নাটকীয়। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম।’
দুর্দান্ত এই জয়ে এবারের ইউরোর সেমিফাইনালে উঠে গেছে তার আসরের ৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা। গেলবার এই পর্ব থেকেই স্পেনের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এবার সেই হিসেবটা চুকে গেছে শেষ ষোলয়। স্পেনকে হারিয়েই তাদের শেষ আটে ওঠা। এখন তাদের সামনে ফ্রান্স-আইসল্যান্ড ম্যাচের জয়ী দল। তর্ক ছাড়াই এই ম্যাচে ফেভারিট স্বাগতিক ফ্রান্স। জার্মান কোচও অবশ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ফ্রান্সকেই আশা করছেন, ‘দেখা যাক কী হয়। ফ্রান্সই ফেবারিট। ওদের দলটা দারুণ। তবে আইসল্যান্ডের রক্ষণও বেশ ভালো। ফ্রান্সের কাজটা তাই সহজ হবে না।’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন