বন্ধন ট্রেনে বাংলাদেশী যুবক জহিরুলকে করোনা রোগী বলে কোলকাতা রেলের টিটিই বিনা টিকিটে গার্ডের হাতে তুলে দেন। লিখিত বিবৃতিতে এমনটিই বলেছেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি কোলকাতা থেকে খুলনাগামী বন্ধন ট্রেনের সিনিয়র গার্ড কৃষ্ণেন্দু বোস। কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে যাত্রী তালিকা দেয়ার সময় এমনটি জানান। খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তটস্থ হয়ে পড়েন। জহিরুল দীর্ঘ সময় ট্রেনে লুকিয়ে থাকায় সন্দেহ ঘনীভূত হয় ও সম্ভাব্য পলায়ন ঠেকানো জরুরী হয়ে পড়ে।
কস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারির সেমিনারে প্রশিক্ষণে করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনার আলোকে কাস্টমস কর্মকর্তারা সতর্কতার সাথে করোনা সন্দেহভাজন ব্যাক্তিকে খুঁজতে থাকেন। ট্রেনের নির্ধারিত বগির যে সিটে সে বসে এসেছিলেন সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। ভারতীয় গার্ডও তাকে চিহিৃত করতে পারছিলেন না। অনুসন্ধানকারীদের মধ্য এসময় আতংক বিরাজ করছিল।
তাৎক্ষণিক স্টেশনে কর্তব্যরত ডাক্তারকে খবর দেয়া হয়। পরবর্তীকালে শার্শা থেকে টীমে আরো ডাক্তার যোগ দেন। তারা জীবাণু নিবারণী পোশাক পরে দীর্ঘক্ষণ খুঁজে সবাই মিলে একজনকে সন্দেহ করেন। তার পাসপোর্ট দেখে গার্ডের দেয়া তথ্যের সাথে নামেরমিল পেয়ে ঐ যাত্রীকে বের করে নিয়ে আসেন। তার শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রাথমিকভাবে তার মধ্য লক্ষণ দেখে করোনারোগী বলেই সন্দেহ করেন বলে কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) কামরুল ইসলাম জানান চিকিৎসকরা।
কর্তব্যরত ডাক্তারা যশোরে কথা বললে, যশোর অফিস তাদেরকে ঢাকায় কথা বলার পরামর্শ দেন। ঢাকায় কথা বলে ডাক্তারগণ জানান, তার মধ্যে করোনা ভাইরাস নেই। সে যে করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত নয় সেটা কাস্টমস কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের কাছে লিখিত সনদ চাইলে চিকিৎসকরা কোনভাবেই তা দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। এসময় তিনি ডাক্তারদের বলেন লিখিত সনদ না দিলে ট্রেন ছাড়া যাবে না।
পরে ডাক্তার আজিম উদ্দিন লিখিত সনদ দেন। এ বিষয়গুলো কাস্টমস এর এসি, আইআরএম ও কমিশনারকে জানানো হয়।
ভারতীয় রেলগার্ড কর্তৃক যাত্রী তালিকা (ঢ়ধংংবহমবৎং সধহরভবংঃ) হস্তান্তরের সময় নাম বলে করোনা রোগী হিসেবে পরিচয় করা। ভারতীয় রেলওয়ে চিকিৎসক টীমের মৌখিক উদ্ধৃতি, একইভাবে ভারতের টিটিই কর্তৃক করোনা ভাইরাসের রোগী পরিচয়ে ট্রেনে হস্তান্তর। বিনাটিকিটে যাত্রীকে ট্রেনে তুলে দেয়া। স্টেশন থেকে চিকিৎসকদল ও বিএসএফ কর্তৃক পুশব্যাক। পাসপোর্টে ভারতে এন্ট্রিরেস্ট্রিকটেড (ঊহঃৎু ৎবংঃৎরপঃবফ) সীলপ্রদত্ত। বেনাপোল পৌঁছে ট্রেনে লুকিয়ে থাকা ও পাসপোর্টে চীনের ভিসা ও সম্প্রতি চীন ফেরত এসব পারিপার্শ্বিকত কাস্টমস কর্মকর্তারা জহিরুলকে করোনা রোগী ভাবতে প্রলুব্ধ হন। শরীরে জ্বর থাকা, কর্তব্যরত চিকিৎসক টীমের সন্ধিগ্ধতা এবং করোনামুক্ত ঘোষণা ও লিখিত সনদ দিতে বিলম্ব এ ধরণের পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল যেকেউ আত্মরক্ষার ও নিবারণী পদক্ষেপ নিতে পারেন।
একাধিক সুত্র জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তারাও পলাতক যাত্রীর সম্ভাব্য পলায়ন ঠেকাতে ও বাড়তি সতর্কতার জন্য ফেসবুকে প্রচারের উদ্যোগ নেন। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, চেকপোস্টে কর্মরর্ত কর্মকতাদের সতর্কতার জন্য যাত্রীর ছবি ও পাসপোর্টের ছবি ফেসবুকে দেয়া হয়। দশ হাজার যাত্রী, বেনাপোল বসবাসকারী হাজার হাজার সরকারী কর্মচারী, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাস্টমসের পক্ষ থেকে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘করোনা ভাইরাস নেই’ মর্মে চিকিৎসকের সনদ পাবার পরপরই সে পোস্ট ডিলিট করা হয়।
বেনাপেল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোশিয়েশনের সি: সহ সভাপতি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান জানান, ব্যবসায়ীরা জানান,বেনাপোল রেলস্টেশন সুরক্ষিত প্রাচির দেয়া নয়। কিংবা বিমানবন্দেরের মতো নয়। এখান থেকে যে কারো দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব। কর্তব্যরত কাস্টমস টীমের দায়িত্ববোধ ও বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে কাস্টমস কর্মকর্তারা সবাইকে জানানোর উদ্যোগ নেন। সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর দিয়ে যাতে এমন রোগী পালাতে না পারে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, বিষয়টি চিকিৎসকদের সনদের ভিত্তিতে সুরাহা হবার পর ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেয়া হয়। সেখানে ভারতীয় রেল গার্ডের বিবৃতি সংযুক্ত করে বলেন, তিনি (ভারতীয় গার্ড) বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারতীয় টিটি তাকে এ যাত্রীকে হস্তান্তর করেছেন। বিভ্রান্তির ওখান থেকে সৃষ্টি! এমন খবর পাবার পর দায়িত্বশীলতা থেকে আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন