শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনায় আসছে ইইউ প্রতিনিধি দল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:১৬ পিএম | আপডেট : ১২:২৪ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ইউরোপের বাণিজ্য কর্মসূচিসংক্রান্ত উদ্যোগ এভরিথিং বাট আর্মসের (ইবিএ) অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পায় বাংলাদেশ। এ সুবিধা চলমান রাখতে মানব ও শ্রম অধিকার রক্ষায় সহায়ক কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনায় বাংলাদেশে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল। এক বছরের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো দেশে আসছে ইইউর প্রতিনিধি দল।

জানা গেছে, আগামী মার্চের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)। ইবিএর আওতায় দেয়া জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারসংক্রান্ত বাংলাদেশের মানোন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনাই প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ সফরের কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ইসি বলেছে, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার টেকসই করতে ইসির অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। জাতিসংঘ কনভেনশনের আওতায় প্রযোজ্য ইবিএ ব্যবস্থার অধীন জিএসপির মানদন্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মান পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এটির প্রয়োজন রয়েছে।

২০২০ সালের মধ্যে সুনির্দিষ্ট একটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ইইউর প্রচেষ্টা বহুগুণ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রম আইন ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আইন সংশোধনের সময়সীমা আরো কমিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউর (ইউপিআর) সুপারিশ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ সত্তে¡ও তা অন্তর্ভুক্ত না করে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইসির চিঠির জবাব দেয় বাংলাদেশ। এ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এসব বিষয় হালনাগাদের পাশাপাশি কারিগরি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনার জন্যই আগামী মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফরে আসছে ইইউ প্রতিনিধি দল। সফরটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, ইবিএ উদ্যোগের আওতায় ইউরোপে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত যে সুবিধা পায়, তা ধরে রাখতে এরই মধ্যে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে ইইউর কাছে ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর সময় চেয়েছে বাংলাদেশ।

১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জিএসপি প্রাপ্তির যোগ্যতা পর্যালোচনাসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইসি। সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রচলিত আইনকে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বাংলাদেশের দায়িত্বশীলতা ও খাপ খাইয়ে নেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে আরো চাপ বৃদ্ধি ও সংলাপের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা ব্যর্থ হলে জিএসপি প্রত্যাহারের দিকে যাওয়া হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইবিএ সুবিধায় ইইউর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজে লেগেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আরো নিবিড় সংলাপের বিষয়ে অগ্রগতি রয়েছে। আইন, নীতি ও চর্চার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে এতে উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জন্য কমিশন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যদি সংলাপ যথেষ্ট ফলাফল নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়, সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সুবিধা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করতে ইইউ প্রস্তুত আছে।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে মোট সাতটি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে শ্রমসংঘ গঠনের বাধা দূর করা; ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য, হয়রানি, চাকরিচ্যুতি ও গ্রেফতার কর্মসূচি বাদ দেয়া; ট্রেড ইউনিয়ন গঠন পদ্ধতি সহজ করা; পরিদর্শন সক্ষমতা বৃদ্ধি; শিশুশ্রম নিরসন; সুশীল সমাজে স্বাধীন মত প্রকাশ পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং এরই মধ্যে দায়ের করা নির্যাতন ও আইনবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত।

ইসির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ইবিএর আওতায় ইইউতে বাংলাদেশ ১৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রফতানি করেছে। সুবিধার আওতায় বার্ষিক প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরোর শুল্ক বাংলাদেশ বাঁচাতে পেরেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ গত বছরের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসে ইবিএ পর্যবেক্ষকদের একটি দল। সফরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে প্রচলিত শ্রম আইনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সামঞ্জস্য বিধানে হালনাগাদ আইন সংস্কার পর্যালোচনা। এছাড়া জিএসপির অধীনে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনাও ছিল দলটির সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। পর্যবেক্ষক দলটি ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে। সফর শেষে গত ডিসেম্বরে তাদের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশকে জানায় ইইউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন