মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দিল্লি যেন মৃত্যুপুরী

মৃত বেড়ে ৩৭ : যোগীর রাজ্য থেকে এসেছিল সন্ত্রাসী ও অস্ত্র : ট্রাকে আনা হয় পাথর : গুলির সাথে এসিড হামলাও হয়েছে : মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা : মুসলিমদের রক্ষায় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রি

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে দিল্লিতে চলা হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। বিভিন্ন এলাকায় পোড়া ও ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আরো লাশের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাসপাতালে কাতরাচ্ছে অনেকে। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে যেতে না পেরে গোপনে চিকিৎসা করাচ্ছেন অনেকে। বিভীষিকাময় দিল্লি যেন মৃত্যুপুরী। গত বুধবার গভীর রাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুর, মৌজপুর কারায়াল নগরে নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বহু নেতা ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার সহিংসতায় উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। বুধবার পর্যন্ত এই সহিংসতায় নিহত হয় ২৭ জন। দিল্লির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সহিংসতাকবলিত এলাকা থেকে বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত তারা ১৯টি কল পেয়েছেন। এসব কলে সাড়া দিতে একশ’রও বেশি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তান্ডবকবলিত এলাকার গুরু তেজ বাহাদুর হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট সুনীল কুমার গৌতম জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের সহিংসতায় তাদের হাসপাতালেই নিহত হয়েছে ৩০ জন। মৌজপুরের গলির একটি দোকানে এখনও আগুন নেভেনি। দোকানের মালিক মুসলিম হওয়ায় সেখানে আগুন লাগানো হয়েছে। জাফরাবাদের এক বাসিন্দা বলেন, ভেতরের মহল্লায় অশান্তি চলছে। কোথায় কতজনের লাশ পড়ে আছে কেউ জানে না। পুলিশ এখনও ঢুকতে পারেনি সেখানে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৮টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং ১০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে দু›লাখ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

যোগীর রাজ্যের আগ্নেয়াস্ত্রে দিল্লিতে তান্ডব : দিল্লিতে আহত বহু মানুষ এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাদের কেউ গুলিবিদ্ধ আবার কেউ ধারালো অস্ত্র, পাথরের আঘাত বা পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত এসব ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা দেশীয় পিস্তল, তলোয়ার, হাতুড়ি, লাঠি ও বড় বড় পাথর নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশের ধারণা দিল্লির তান্ডবে উত্তর প্রদেশ তথা যোগীর রাজ্য থেকে আনা দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন মুখোশধারী হামলাকারীও উত্তর প্রদেশ থেকে আসার কথা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন বিজেপি নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার সহিংসতায় উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর ও শামলির মতো এলাকা থেকে দিল্লিতে এসে হামলায় অংশ নিয়েছে অনেকে। দিল্লির জাফরাবাদের মধ্যমসারির এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তের অংশ বিশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিলো। ৪০ ঘণ্টারও বেশি তান্ডব চলার পর শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ করার পর প্রথম দিনে তান্ডব আর বাড়েনি। দিল্লিতে ব্যবহৃত হওয়া সব অবৈধ পিস্তল বাইরে থেকে আনা হয়েছে’। পুলিশি রেকর্ডেও দেখা গেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অপরাধী চক্রের হাতে সহজেই অস্ত্র পৌঁছায়। পুলিশি তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তর প্রদেশের মিরাট, শামলি ও মুজাফফরনগরের মতো পশ্চিমাংশে একটি দেশীয় অস্ত্র বিক্রি হয়েছে তিন থেকে পাঁচ হাজার রুপিতে। আর এসব এলাকায় অটোমেটিক পিস্তল বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার রুপিতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া সবচেয়ে বেশি যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো পাথর। পাথরের আঘাতে মারা যান দিল্লি পুলিশের হেড কনেস্টবল রতন লাল (৪২)। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অমিত শর্মার মাথায়ও পাথরের আঘাত লেগেছে। পাথর নিক্ষেপে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হামলার সময়ে ট্রাক ভর্তি করে আনা হয়েছে পাথর।

দিল্লিতে মার্কিনিদের সতর্কবার্তা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পরই দিল্লিতে মার্কিন নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে তার সরকার। বুধবার একটি নির্দেশিকা জারি করে ভারতে থাকা মার্কিনিদের ‘উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলতে’ বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্পের কড়া সমালোচনায় বার্নি স্যান্ডার্স
দিল্লির সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বলেছেন, ভারত সফরকালে দিল্লির সহিংসতা নিয়ে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হলো ‘ফেইলর অব লিডারশিপ’ বা নেতৃত্বের ব্যর্থতা। তিনি মানবাধিকারের ইস্যুতে ব্যর্থ হয়েছেন। দিল্লির সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এর একদিন পরেই ভারমন্টের সিনেটর, এবার ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্রন্টরানার বার্নি স্যান্ডার্স ওই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, কমপক্ষে ২০ কোটি মুসলিমের বসবাস ভারতে। তারা একে তাদের দেশ মনে করেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা ভারতের বিষয়’। এর সমালোচনা করে স্যান্ডার্স আরো লিখেছেন, মানবাধিকারের ইস্যুতে এটা হলো নেতৃত্বের ব্যর্থতা।

দিল্লিতে বেছে বেছে আক্রমণ মুসলিমদেরই : দাবি মার্কিন কমিশনের
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত মার্কিন কমিশনের দাবি, দিল্লিতে বেছে বেছে মুসলিমদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। এই নৃশংস হিংসা থেকে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারত সরকার। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রধান টনি পার্কিনস একটি বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, ‘আমরা দেখেছি দিল্লির হিংসায় বেছে বেছে মুসলিমদের আক্রমণ করা হচ্ছে। ওদের বাড়ি, দোকান পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের প্রাথমিক দায়িত্বগুলির মধ্যে একটি হল, দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে নিরাপত্তা দেয়া’। ভারত সরকারের কাছে আরজি জানিয়ে পারকিনস বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা উন্মক্ত জনতার হাত থেকে মুসলিমদের বাঁচান’। মার্কিন কমিশনের এই বিবৃতির পরই নড়েচড়ে বসে নয়াদিল্লি। তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

চার বিজেপি নেতা শনাক্ত
দাঙ্গায় বিজেপি নেতাদের উস্কানির ভিডিও জমা হয়েছে হাইকোর্টে। ভিডিও দেখার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ইতিমধ্যে চার বিজেপি নেতাকে শনাক্ত করা হয়েছে। বুধবার তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিডিও দেখেছেন দিল্লির আদালত। ওই চার ব্যক্তি ছাড়া যারা উস্কানি দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যে চার নেতার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন, বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, অভয় বার্মা ও পরবেশ ভার্মা।

হয়েছে অ্যাসিড হামলাও
বিক্ষোভ-সংঘাতে আহতদের অনেকেই মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪৬ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত মিলেছে। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন অ্যাসিড হামলায়ও দগ্ধ হয়েছে। সেখানে গোলাগুলির পাশাপাশি অ্যাসিড হামলাও চালানো হয়েছে। এই ঘটনা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। মুস্তাফাবাদ থেকে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদের অনেকেরই চোখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে। দৃষ্টি হারিয়েছেন চারজন। খুরশিদ নামে একজনের দু’চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। তেজ বাহাদুর হাসপাতাল থেকে লোকনায়ক জয়প্রকাশ হাসপাতালে আসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সও পাননি তিনি। দুই চোখসহ পুরো মুখ ঝলসে গেছে তার।

দিল্লি ছাড়ছেন আতঙ্কিত মানুষ
ভারতের রাজধানী দিল্লির পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষজন। দিল্লির সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি এবং অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক জওয়ান মোতায়েন করায় বুধবার নতুন করে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সরকারের উপর মহল থেকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ আসায় এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদ এলাকার মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষজন ফের সহিংসতার আশঙ্কায় ব্যাগ-বস্তা নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ধর্মীয় এই সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, সহিংসতার সময় হিন্দুত্ববাদী হামলাকারীদের উৎসাহ দিয়েছে তারা। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ নিজের ঘরকেও আর নিরাপদ মনে করছেন না। সহিংসতা এই উত্তেজনায় তারা বাড়িঘর রেখে দিল্লি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শুধু মুসলিম নয় এই তালিকায় আছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লির এক মুসলিম বাসিন্দা ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদীরা স্লোগান দিতে দিতে আসে এবং সবকিছু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তারপর তারা দোকানপাট থেকে সব মালামাল লুট করে তাতেও আগুন দেয়ার পর মসজিদ তার পাশের দুটি বাড়িতে আগুন দেয় দলবেঁধে।’

মুসলিমদের ঘরে হিন্দুরা
বেশিরভাগ এলাকায় বেছে বেছে মুসলিমদের ওপরই হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম মুস্তফাবাদ। এ এলাকায় হিন্দু-মুসলিম হাতে হাত রেখেই দাঙ্গাকারীদের প্রতিরোধ করছেন স্থানীয়রা। মুস্তফাবাদের প্রধান সড়কগুলোর বেশিরভাগই প্রায় জনশূন্য, ঘোরাফেরা করছেন কিছু পুলিশ-সিআরপিএফ সদস্য। ১৪৪ ধারা জারি করায় কাউকে দেখামাত্রই গুলি করার অনুমতি রয়েছে তাদের। তবে অলিগলিতে স্থানীয়দের দেখা মিলছে কিছুটা। বাইরে দাঁড়িয়ে তারা সতর্ক নজর রাখছেন, যেন কেউ হামলা না চালায়। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এক ব্যক্তি বলেন, ‘অবস্থা তো কিছু লোকই খারাপ করে রেখেছে। আমরা চেষ্টা করছি না ওদিক (হিন্দু) থেকে হিংসা থাক, না এদিক (মুসলিম) থেকে।’ পাশের একটি বাড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন, ওটা মুসলিমদের বাড়ি। কিন্তু সেখানে তিন দিন ধরে এক ব্রাহ্মণ মেয়ে থাকছে।’ জানা যায়, ওই বাড়ির মালিকের নাম মোহাম্মদ আরশাদ খান। দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে সোনিয়া স্বামী নামে এক হিন্দু মেয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

শুধু এটাই নয়, মুস্তফাবাদে স¤প্রীতির উদাহরণ আরও আছে। শামাদের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই পরপর তিনটি হিন্দু বাড়ি। মোহাম্মদ ইরফান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এলাকায় দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি দেখার পর থেকেই তারা (হিন্দু) খুব ভয়ে ছিল। আমি বলেছি, কোনও ভয় নেই, আমি তোমাদের পাশে আছি, তোমাদের দায়িত্ব আমার। তোমরা আমার প্রতিবেশী, আমি তোমাদের খেয়াল রাখবো।’ মনু নামে ওই এলাকার হিন্দু ধর্মানুসারী এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা গতরাতে খুব আতঙ্কে ছিলাম। গুলি হচ্ছিল, ইটপাটকেল মারছিল, বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। সেই সময় বন্ধু ইমরানসহ কিছু লোক আমাদের সাহস দেয় ও সেখান থেকে সরে আসতে সাহায্য করে। তারা মানবতাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। ।

বদলি দিল্লি হাইকোর্টের সেই বিচারপতি
রাজধানীর হিংসা নিয়ে তিনি বুধবারই দিল্লি পুলিশকে তুলোধোনা করেছিলেন। তার একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে যায় দিল্লি পুলিশ। কার্যত মুখে রা-কাড়ার মতো অবস্থা ছিল না তাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগুন জ্বলার সময় যতটা নিশ্চল ছিল দিল্লি পুলিশ তার থেকেও বেশি নীরবতা ছিল গতকাল দিল্লি হাই কোর্টে। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর বুধবার রেয়াত করেননি কাউকে। বুধবার তার এজলাসে দিল্লিতে হিংসা মামলার শুনানি চলার সময় কেন্দ্র, দিল্লি পুলিশ, দিল্লি সরকারকে একহাত নেন তিনি। তাই তড়িঘড়ি তাকে বদলি করা হয় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে।

দিল্লি হাইকোর্টের তৃতীয় প্রবীণতম বিচারপতি হলেন এস মুরলীধর। ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বদলির জন্য প্রস্তাব দেয়। সরকারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “সংবিধানের ২২২ নম্বর ধারার ১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিচারপতি মুরলীধরের বদলির সিদ্ধান্তের গত সপ্তাহেই নিন্দা করে বার অ্যাসোসিয়েশন। তবে সেই আবেদন ধোপে টিকল না। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম এই বদলির প্রস্তাব তুলে নেয়া হোক এই দাবিও করে বার অ্যাসোসিয়েশন।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরের বদলি নিয়ে একযোগে সরব হলেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মধ্যরাতে বিচারপতি মুরলীধরের বদলি শুধু আশ্চর্যের নয়, এটা নিঃসন্দেহে দুঃখের ও লজ্জার। কোটি কোটি মানুষের ন্যায়নিষ্ঠ বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে। কিন্তু বিচারব্যবস্থার কণ্ঠরোধের চেষ্টা ও মানুষের আস্থা ভেঙে দেয়ার চেষ্টা দুঃখজনক’। অপরদিকে, এ প্রসঙ্গে বিচারক লোয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তিনি লিখেছেন, ‘সাহসী বিচারক লোয়ার কথা মনে পড়ছে, যাঁকে বদলি করা হয়নি’।

দিল্লির হিংসার ঘটনায় নীরব দর্শক কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার। এই ভাষাতেই নরেন্দ্র মোদি সরকার ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এ দিন দিল্লির ঘটনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় কংগ্রেস।

ত্রয়োদশী ছাত্রী নিখোঁজ
সোমবার সকালে বাবার সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল সে। বিকেলে ৫টা ২০ নাগাদ তার স্কুল ছুটি হয়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়া হিংসার জেরে ঠিক সময়ে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যেতে পারেননি তার বাবা। মেয়েও আর বাড়ি ফেরেনি। ছোট মেয়েটির খোঁজ হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী তার বাবা।

দিল্লির খাজুরি খাস এলাকার বাসিন্দা ১৩ বছরের মেয়েটি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। পরীক্ষা ছিল বলে গোলমাল সত্তে¡ও স্কুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু হিংসার কারণে ঠিক সময় তাকে স্কুল থেকে আনতে যেতে পারেননি তার বাবা। পরে স্কুলে গিয়ে আর মেয়ের খোঁজ পাননি তিনি। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ছোট মেয়েটি কোথায় কী অবস্থায় আছে, তাই ভেবে হয়রান হয়ে পড়েছেন তিনি। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত খবর পাওয়া যায়নি।

দাঙ্গা জীবনের অংশ
হরিয়ানার মন্ত্রী রঞ্জিত চৌটালা বললেন, ‘দাঙ্গা তো হয়ই, আগেও হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর গোটা দিল্লি জ্বলছিল। এটা তো জীবনেরই অঙ্গ’। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, হিন্দুস্তান টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ান, দি ওয়্যার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Ab Jalil ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 0
মোদির মতো বিশ্বসন্ত্রাসী, উগ্রবাদীকে যারা ওয়েলকাম জানাতে চায়, তারা মুখে যতই নিরপেক্ষতার ফেনা তুলুক, প্রকৃতপক্ষে তারা উগ্রবাদী !
Total Reply(0)
Toshibur Rahman ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৬ এএম says : 0
মানুষ কখনো মানুষকে হত্যা করে না মসজিদ বা মন্দির ও ভাঙ্গে না যারা ভাঙ্গে তারা হলো মানুষের মতো দেখতে কিছু জানোয়ার আর শয়তান। ধর্ম মানুষকে ভালোবাসতে শিখাই এক সাথে চলতে শিখাই। কিন্তু কিছু শয়তান ধর্মের নাম দিয়ে মানুষ কে হত্যা করে মসজিদ ভাঙ্গে মন্দির ভাঙ্গে।
Total Reply(0)
Ifty Mohammad Shokal ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
নরেন্দ্র মোদি এটাই চেয়েছিলেন। মমতা ব্যানার্জি আসলে যথার্থই বলেছিলেন, 'মোদি দাঙ্গাগুরু'। ভারতের মূর্খ জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলো তার পূর্বের কর্মকাণ্ড জানার পরও। হিন্দু জনগোষ্ঠী যদি মোদির দাঙ্গা সফল করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে, তাহলে পুরো ভারতকেই এটার চরম মূল্য দিতে হবে। নরেন্দ্র মোদি এখনো স্বপ্ন দেখছে দাঙ্গাটাকে বড় করার। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বিচারপতি এস মুরলীধরের বদলির নোটিশ।
Total Reply(0)
Zillur Rahaman ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
উগ্রতার আগুনে জ্বলছে দিল্লি। মানুষের অধিকার এখানে ভুলুন্ঠিত। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত। বিচারপতিরা আতঙ্কিত। উগ্রবাদীরা উল্লসিত। আসুন উগ্রবাদের নামে যারা অশান্তির বিষ ছড়াচ্ছে, সে যে ধর্মেরই হোক, আমরা তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।
Total Reply(0)
Ekbal Hossen ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
সন্ত্রাসী লিডার মুদি এবং তার সহযোগী অমিত শাহ এর পরিকল্পিত আক্রমণ ছিল এটা। যার কারণে পুলিশকে অনুমতি দেওয়া হয়নি এগুলো সাথে সাথে বন্ধ করার জন্য। যখন নিশ্চিত হয়েছে যে সেই এলাকার সকল মসজিদ, মুসলিম বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং অসংখ্য মুসলিমকে শহীদ করা হয়েছে then তিন দিনের মাথায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন