উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সাহায্যপুষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চলমান মাতৃস্বাস্থ্য ও ভাউচার স্কিম প্রকল্পের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় প্রসূতি সেবাপ্রাপ্ত প্রায় ৫ শতাধিক মহিলা তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া চেকআপসহ চিকিৎসা ভাতা না পাওয়ার ঘটনা নিয়ে গর্ভবতী মহিলারা ওই প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার মা ও শিশু-মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার মহাউদ্যোগ নিয়ে সারা দেশের প্রায় ৫৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাতৃস্বাস্থ্য ও ভাউচার স্কিম প্রকল্প চালু করে। উক্ত প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী যেসব গর্ভবতী মহিলা উক্ত প্রকল্পের সেবা নিতে ইচ্ছা পোষণ করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, ওইসব গর্ভবতী মহিলার প্রকল্পের নির্ধারিত চিকিৎসক দিয়ে প্রসবের পূর্বে ও পরে ৫ বার চেকআপ করা হয়। চেকআপ করতে আসা-যাওয়া বাবদ প্রত্যেক মহিলাকে ৫ বার চেকআপের গাড়িভাড়া বাবদ ৫’শ টাকাসহ চিকিৎসা, মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য বাবদ আড়াই হাজার টাকাসহ এককালীন ৩ হাজার টাকা প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাস্তবায়িত মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম প্রকল্পের আওতায় এলাকার হতদরিদ্র ও গর্ভবতী মহিলারা পর্যাপ্ত সেবা পেয়ে আসলেও গত এক বছর ধরে উক্ত প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে সেবা নিতে ইচ্ছুক গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত একাধিক কর্মচারী বর্তমান দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রতি অভিযোগের ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অর্থাৎ গত এক বছর ধরে ডিএসএফ প্রকল্পে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া তেলীপাড়া থেকে আসা প্রসূতি মহিলা দিনমজুর ছৈয়দ নুরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২০) জানান, তিনি হাসপাতালে প্রসব করেছেন। তার বাচ্চার বয়স বর্তমাসে ৬ মাসে উন্নীত হলেও প্রকল্পের নির্ধারিত ভাতাগুলো পাননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মাবুদ জানান, ইতোপূর্বে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম প্রকল্পের আওতাধীন সেবাপ্রাপ্ত প্রসূতি রোগীদের নগদ টাকা বিতরণ করার বিধিবিধান ছিল। এখন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রসূতিদের অনুকূলে করা ব্যাংক একাউন্টে টাকা প্রদান করার বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রসূতিদের টাকা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করে একাধিক কর্মচারী জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রসূতিরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ডিএসএফ প্রকল্পের ম্যানেজার মোস্তফা এনায়েত জানান, ৫ শতাধিক প্রসূতির মধ্যে ২৫৮ জন প্রসূতির একাউন্টে টাকা দেয়া হয়েছে। তবে তাদের চেক সরবরাহ না দেয়ার কারণে প্রসূতিরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছে না। কেন চেক দেয়া হয়নি জানতে চাওয়া হলে ওই কর্মকর্তা বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে ২০০৮ সাল থেকে উখিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলমান মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম প্রকল্পের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কারণে উখিয়া হাসপাতালে চলমান ডিএসএফ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে উখিয়ায় আজ ও ভবিষ্যতের মা ও শিশু-মৃত্যুর হার আবারো বেড়ে যেতে পারে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন