অবশেষে ঘোষণাটা দিয়েই ফেললেন। অধিনায়কত্ব আর নয়- বললেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জানালেন শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচই হবে তার ক্যারিয়ারে অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ।

মাশরাফি অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন, এমন গুঞ্জন ক’মাস আগের। তবে এ গুঞ্জন শুধু হাওয়ায় ভেসে বেড়িয়েছে। পরিস্কার কোন তথ্য ছিল না। কারণ নড়াইল এক্সপ্রেস নিজে সরাসরি কিছু বলেননি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজই হবে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচ-এটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্ধে ছিলেন অনেকেই। তবে সব কিছুর অবসান ঘটালেন স্বয়ং মাশরাফি। এবার তার মুখ থেকেই আসলো ঘোষণা। বৃহস্পতিবার সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক সরাসরি ঘোষণা দিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেটিই হবে অধিনায়ক হিসেবে আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।’ তবে নেতৃত্ব ছাড়লেও সুযোগ পেলে জাতীয় দলে খেলা চালিয়ে যেতে চান মাশরাফি।

মাশরাফির অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদেও মাঝে আগ্রহের কমতি ছিলনা। এই আগ্রহ আরো বেশি বাড়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে। সিরিজের জন্য দল ঘোষণার আগে হঠাৎ করেই বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, অধিনায়ক হিসেবে জিম্বাবুয়ে সিরিজই হচ্ছে মাশরাফির শেষ সিরিজ। বিসিবি সভাপতির এমন ঘোষণার পর সবাই অপেক্ষায় ছিলেন কবে নড়াইল এক্সপ্রেস নিজের মুখেই বলবেন কথাটি। যদিও আগে তিনি জানিয়েছিলেন, অধিনায়কত্ব ছাড়ার ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। এ নিয়ে তার ভাবনার কিছু নেই। তবে সবাই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে কোনো ঘোষণা আসে কিনা? তাই বৃহস্পতিবার লাক্কাতুরা চা বাগান সংলগ্ন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুমে মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি নিজের অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ ঘোষণা করার সময়ই পরিস্কার করেছেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিসিবি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেই মাশরাফি আসেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘আমি অবসরের সিদ্ধান্তটা হুট করেই নিয়েছি এবং সেটা বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই।’

কখন বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছেন সেটা জানিয়ে মাশরাফি আরো বলেন, ‘টিম বাসে ওঠার আগে, হোটেল থেকে মুঠোফোনে আমি পাপন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি, যেহেতু অধিনায়কের দায়িত্বটা সব সময় বোর্ড নির্ধারণ করে এবং বোর্ডই আমাকে অধিনায়কের গুরু দায়িত্ব দিয়েছিল। তাই অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটাও বোর্ড প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেই নিয়েছি এবং তাকেই সবার আগে জানিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই মাশরাফি নিজ থেকে বলে ওঠেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি কিছু কথা বলতে চাই। অধিনায়ক হিসেবে কালকেই (শুক্রবার) আমার শেষ ম্যাচ। এত লম্বা সময় আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। ধন্যবাদ জানাই আমার সঙ্গে যত খেলোয়াড় খেলেছে তাদের। আমি নিশ্চিত মাঝের সময়টা এত সহজ ছিল না, গত ৫-৬ বছরের যাত্রাটা। আমি ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজম্যান্টকে, যাদের অধীনে আমি খেলেছি। তারা সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।’

অধিনায়কত্ব শুরুর সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দিয়ে। এর আগেও পেয়েছিলাম; কিন্তু ইনজুরির কারণে সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। হাথুরুসিংহেকে দিয়েই শুরু এরপর খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস আর রাসেল ডোমিঙ্গো। নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, তাদেও সহ বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ, সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ। আপনাদের সমর্থন ছাড়া এত দূর আসা সম্ভব হতো না।’

এরপর মাশরাফি সঙ্গে নিয়ে আসা লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান, ‘আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য।’

১অঃঃধপযবফ ওসধমবং