শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন মাশরাফি!

অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:২৮ এএম

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে বড় জয় পেয়ে যত না আনন্দ পেয়েছেন দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা তার চেয়ে বেশি তারা পুলকিত হয়েছেন ম্যাচ শেষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠের দৃশ্য দেখে।

শুক্রবার রাতে খেলা শেষ হওয়ার পর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে কাঁধে তুলে নিয়ে সম্মান জানালেন টানা দুই সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার তামিম ইকবাল। এরপর সবাই দেখলেন অধিনায়কের নাম লেখা ‘২’ নম্বর জার্সি গায়ে বাংলাদেশ দলের সব ক্রিকেটাররা ঘিরে ধরেছেন স্বয়ং মাশরাফিকে। যে জার্সির বুকে লেখা ছিল ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’... সে এক নজরকাড়া দৃশ্য। যে দৃশ্য দেখে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবার চোখ ছলছল করেছে।

মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন- এমনটাই মনে করেন টাইগার ভক্তরা। তাই তো অধিনায়ককে নিজের কাঁধ থেকে নামিয়ে তামিম বলেন, ‘জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে আমাদের অধিনায়কের বিদায়কে রাঙিয়ে তুলবো- কথাটি আগের দিন বলেছিলাম আমি। আজ (শুক্রবার) কাজটা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘খুব অল্প সময়ে মাশরাফি ভাইকে নিয়ে কথা বলা কঠিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন তা কোনো ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক কারো কোনোদিন ভোলা উচিত নয়। ২০১৫ সালে আমরা একটি জায়গায় ছিলাম, ২০১৯ সালে একটা অবস্থায় এসেছি। উনার হাত ধরেই। ওয়ানডেতে বিশেষ করে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব আমাদের এখন যেভাবে মূল্যায়ন করে, এটা মাশরাফি ভাইয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমার জন্য, আমাদের জন্য তিনি যা করেছেন, তা কখনোই ভোলার নয়। অধিনায়ক হিসেবে না পেলেও খেলোয়াড় হিসেবে আশাকরি আরো অনেক দিন তাকে পাব আমরা।’

লিটন দাসের কথায়, ‘আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ থেকেই মাশরাফি ভাই আমাকে সাপোর্ট করে আসছেন। এখনো তিনি তাই করেন। মাঠে উনি যে ক্যাপ্টেন তা তার আচরণে বোঝার উপায় নেই। আমরা মাশরাফি ভাইয়ের অবদান কখনো ভুলব না। তার জন্য শুভ কামনা রইল।’

পেছনে ফিরতেই হয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন একদিন। সেদিনও বাংলাদেশ দলের অনুশীলন চলছিল। অনুশীলনের আগে মাশরাফিকে ডেকে নিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। প্রস্তাব দিলেন অধিনায়ক হওয়ার। ২০২০ সালের ৫ মার্চ দলের আরেকটি অনুশীলন সেশনের আগে মাশরাফি মুঠোফোনে পাপনকে জানালেন, এবার ভার নামাতে চান তিনি। মাঝের সময়টুকুতেই এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। যার সফল নির্মাতা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

প্রায় সাড়ে ৫ বছরের এই সময়টায় মাশরাফির হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক স্বপ্ন ধরা দিয়েছে বাস্তব হয়ে। কখনও রচিত হয়েছে রূপকথা। দল ছুটে চলেছে সাফল্যের পথ ধরে। মাশরাফি তার কান্ডারি। দেশের ক্রিকেটে ছুঁয়েছে নতুন উচ্চতা। মাশরাফিও পৌঁছেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ধীরে ধীরে নায়ক থেকে হয়ে উঠেছেন মহানায়ক। অধিনায়ক থেকে হয়েছেন নেতা।

এই সময়ের মধ্যে কিছু হতাশার আঁধারও এসেছে। তবে পেছন ফিরে তাকালে, রঙিন পোশাকে আলো ঝলমলে সময়টুকুর ঔজ্জ্বল্যই যথেষ্ট চোখ ধাঁধিয়ে দিতে। বিসিবি সভাপতির প্রস্তাব পাওয়ার পর শুরুতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ থাকলেও বাবা গোলাম মুর্তজার অনুপ্রেরণায় অধিনায়কের চ্যালেঞ্জটা নিলেন মাশরাফি।

এমনিতেই চোট আক্রান্ত ছিল ক্যারিয়ার। ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরেই বেশি সময় কাটাতে হয়েছে। নেতৃত্বের আগের অভিজ্ঞতাও ভালো ছিল না চোটের জন্যই। তারপরও বাবার নির্দেশেই অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপটা নিয়ে ফেললেন। শুরু হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের পালাবদল! বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভীষণ দুঃসময়ে বিসিবি তাকিয়েছিল তার দিকেই। তিনি দেশের ক্রিকেটকে রাঙিয়েছেন সুসময়ের রঙে। সাফল্য বুভুক্ষু ক্রিকেট জাতিকে এনে দিয়েছেন অভাবনীয় সব বড় সাফল্যের স্বাদ।

জিম্বাবুয়েকে ৫-০ তে হারানো দিয়ে সাফল্য রথ ছোটা শুরু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওই সময়ের অবস্থায় জিম্বাবুয়েকে সব ম্যাচে হারানোর বিশ্বাসও ছিল না কারো। অধিনায়ক মাশরাফি বিশ্বাস এনে দিলেন। জাতিকে স্বপ্ন দেখতে শেখালেন। অধিনায়ক মাশরাফির আকাশ ছোঁয়ার মন্ত্র সতীর্থদের হৃদয়ে গেঁথে গেল। অসম্ভবগুলো তখন বাংলাদেশ সম্ভব করা শুরু করল। টাইগাররা খেলল বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে।

সেই মাশরাফিই অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নিজের নেতৃত্ব থামালেন। ক্যাপ্টেন মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থাকবেন বলে বিশ্বাস দেশের ক্রিকেটবোদ্ধাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন