প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অভ্যন্তরীণ আরসিসি সড়কটির নির্মাণের তিন মাস না পার হওয়ার পূর্বেই বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সড়কটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় এর নির্মাণ কাজের মান এবং সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক হতে প্রশাসনিক ভবন, গ্যারেজের সড়ক, গোল চত্তর পর্যন্ত সড়ক ৭ ইঞ্চি করে ঢালাই, গোল চত্ত¡র হতে ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত সড়ত ৬ ইঞ্চি করে ঢালাই এবং অবশিষ্ট শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়ক ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের মাধ্যমে ৮২৭ দশমিক৪৬ কিউবিক মিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ, ৩টি কালভার্ট , আরসিসি ও ব্রিকস ড্রেন, পূর্বের পরিবহন মাঠের পাশে বসার সিঁড়ি, সড়কের নীচে পাইপ স্থাপন এবং রাস্তার সাপোর্টিং গার্ডওয়াল নির্মাণের জন্য মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড নামক একটি কোম্পানীকে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৬ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গেল বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রাস্তাটি বুঝিয়ে দেয়। তবে সম্প্রতি সড়কটির অন্তত পঁচিশটি স্থানে ছোট বড় ফাঁটল দেখা যায়। এরমধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার পর থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কে ফাটলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
নির্মাণের এত সল্প সময়ের মধ্যে সড়কটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় এর কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ এই সড়কটি নির্মাণের সময় নিস্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং যথাযথ পরিকল্পনা না করেই সড়কটি করা হয়েছে। এসব কারণেই সড়কটির নির্মাণের কিছু দিন না পার হতেই সড়কটিতে ফাটল দেখা দিছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়কটির স্যান্ড ফিলিং এর জন্য যে পরিমাণ বালি দেওয়ার কথা সে পরিমাণ বালি দেওয়া হয়নি। এছাড়াও সড়কটির বিভিন্ন স্থানে নতুন ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে পূর্বের ব্রিক সলিং এর পুরাতন ইট ব্যবহার করা হয়েছে।’
তবে নব নির্মিত সড়কে ফাটল সৃষ্টির কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে সড়কের কাজ করা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স এর প্রকল্প পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, যানবাহন চলাচলের জন্য যে সকল সড়ক করা হয় সেগুলো পাথর দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয় কিন্তু এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সড়কগুলো ইট দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়। আর এধরনের আরসিসি সড়ক মূলত ৬ ইঞ্চির হয়, কিন্তু এখানে ৫ ইঞ্চির ঢালাই দিয়ে করা হয়েছে। এছাড়াও এধরনের সড়ক গুলো সর্ব্বোচ ৫ টন পর্যন্ত ওজন নিতে পারে কিন্তু এখানে এর চেয়ে বেশি ওজনের গাড়ি চলাচল করেছে। এসব কারণেই সড়কটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল না করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা পূর্বেই লিখিতভাবে জানিয়েছি।
সড়কটির নির্মাণ কাজ তদারককারী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসাইন বলেন, ‘সড়কটির কাজ যখন চলমান তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জন্য ভারী যানবাহন প্রবেশ করেছে, এই যানবাহনের কারণেই এধরনের ফাটল তৈরী হয়েছে। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়া থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কটি ৫ ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে করা হয়েছে, এধরনের সড়ক মূলত হাঁটার জন্য করা হয় যানবাহন চলাচলের জন্য নয়। এ কারণেই ভারী ওজনের যানবাহন চলাচল করায় সড়কের কয়েকটি স্থানে এধরনের ফাটল দেখা গেছে। ’
সড়কটির বিষয়ে তত্ত্বাবধয়াক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ‘ সড়কের চূড়ান্ত স্ট্রেন্থ আসতে ঢালাই কাজের পর ২৮ দিন সময় লাগে কিন্তু আমাদের এখানে ঢালাই এর পরপরই নির্মাণ সামগ্রীর ট্রাক চলাচল করেছে এই কারণেই মূলত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যে জামানত রয়েছে সেই অর্থে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কটি ঠিক করা হবে।’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, কাজটি ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিলো। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসলে আমি তদন্ত করতো দিবো। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এর আগে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কোন কাজ করা হয়নি, আমি নিয়ম মেনে এ কাজটা করেছি। এখন পর্যন্ত এ সড়কের বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আমি প্রকৌশলীদের জিজ্ঞেস করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন