স্পোর্টস ডেস্ক : দেশের প্রথম শিরোপা উৎসব, কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সুযোগ হলো না তাতে অবদান রাখার। ম্যাচের ১৬ মিনিটেই ধাক্কাটি এল। দিমিত্রি পায়েতের জোরালো এক ধাক্কা, মাঠে শুয়ে পড়েন রোনালদো। ১৮ মিনিটে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়েন। শুশ্রæষা শেষে ২০ মিনিটে ফিরেছিলেন, কিন্তু মুখ-চোখ দেখেই বোঝা গিয়েছিল, মনের জোরেই ফিরেছেন মাঠে। ২৪ মিনিটে দলের এক আক্রমণে দৌড়াতে গিয়েই টের পান, সম্ভব নয় খেলা। তবু দলকে গোলের এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেটি আদ্রিয়েন সিলভা হাত ছাড়া করার পর আবারও মাঠে শুয়ে পড়েন রোনালদো। মাঠ ছাড়েন স্ট্রেচারে শুয়ে। তখনও অঝোরে ঝরেছে অশ্রæ। এত কাছে এসেও কি খালি হাতে ফিরতে হবে পর্তুগালকে? এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিলো তখন দলসহ সমর্থকদের মনেও।
তবে দিনটি কান্না নয়, হাসিতেই শেষ করলেন রোনালদো। অতিরিক্ত সময়ের ১৯ মিনিটে এডারের গোল। ডাগ-আউট থেকে যন্ত্রণা ভুলে মাঠে ছুটে এলেন রোনালদো। মুহূর্তের জন্য মনে হলো, ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা নন, এই রোনালদো যেন এক যুগ আগের সেই কিশোর ছেলেটি, যিনি নিজের প্রথম প্রতিযোগিতায় হারের দুঃখটি ভুলে গেলেন এক লহমায়। গ্রিসের কাছে সেবারের হারের যন্ত্রণা পাওয়া রোনালদোর তখন বয়স মাত্র ১৯। এখনকার রোনালদোর বয়স ৩১, অনেক পরিণত। দলের অধিনায়কের দায়িত্বও তার কাঁধে। সেই যন্ত্রণার ভার আর বইতে হলো না রিয়াল তারকাকে।
মাঠের লড়াইয়ে থাকতে না পারলেও, নিজেই যেন ছিলেন মাঠের মধ্যমণি হয়ে। কোচ সান্তোসকে ছাপিয়ে যখন সিআর সেভেনের কোচিং রূপ পেল প্রাধান্য, কোচও যেন দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন তার ওপর। একটু সুস্থ হয়েই ডাগ আউট থেকে চেচিয়ে পেপে, সান্তোসদের অনুপ্রাণীত করা, ঘড়ি ধরে ধরে দলের প্রয়োজন বুঝিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে কাকে কিভাবে কোন যায়গায় খেলতে হবে তাও বলে দিচ্ছিলেন রিয়াল তারকা। এমন এক ইতিহাসের নায়কও তাই জয়ের কৃতিত্ব দিলেন অধিনায়ককে। ম্যাচের ৭৯ মিনিট পর্যন্ত বসে ছিলেন ডাগ-আউটে। রোনালদোর অনতিদূরে। রোনালদো নিজে কান্নাভেজা চোখ নিয়ে বেশ আগে ফিরেছেন মাঠ ছেড়ে। কাঁদবেনই তো, ফাইনালের মতো একটা ম্যাচের পুরোটা থাকতে পারলেন না। চোট আগেই তুলে দিল তাঁকে। কিন্তু রোনালদোর এই চোট একদিক দিয়ে পর্তুগালের জন্য শাপে বর হয়েছে। ডাগ-আউটের বাকিরা রোনালদোকে পেয়েছেন কাছে থেকে। এদেরই একজন এডার, যিনি গেলপরশু রাতে অতিরিক্ত সময়ে ২৫ গজ দূর থেকে করা আচমকা শটে জিতিয়েছেন পর্তুগালকে। আর ম্যাচ শেষে এডার জানিয়েছেন, মাঠে নামার আগে অধিনায়ক রোনালদো তাঁর কানে কানমন্ত্র দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি জানি, তুই-ই পর্তুগালকে জেতানো গোলটা করবি।’ নেতা রোনালদোর অনুপ্রেরণাতেই এমন গোল, জানিয়েছেন এডার।
দিমিত্রি পায়েতের মারাত্মক ট্যাকলের কারণে হাঁটুর চোট নিয়ে ডাগ-আউটে ফিরতে হয়েছিল রোনালদোকে। ম্যাচের বাকিটা সময় কেটেছে উৎকণ্ঠায়। নিজে মাঠে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে না পারার অসহায় আকুতি ধরা পড়ছিল চোখে-মুখে। কিন্তু ৯০ মিনিট শেষে নেতা রোনালদো সতীর্থদের জ্বালাময়ী একটা উজ্জীবনী ভাষণ দেন। তাতেই যেন বদলে গেলেন এডার। দলের প্রথম পছন্দের খেলোয়াড়ই ছিলেন না যিনি, তাঁর নামই উঠে গেল পর্তুগালের ইতিহাসে চিরদিনের জন্য। পর্তুগালের প্রথম ট্রফি তো জেতালেন তিনিই! ফ্রান্সেরই দল লিলের হয়ে খেলা এই স্ট্রাইকারকে ভুলবে কী করে পর্তুগিজরা! ইউসেবিও, ফিগোরা যা পারেনি তাই করে দেখিয়েছেন রোনালদো। প্রথমবারের মত কোন আন্তর্জাতিক বড় আসরে চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতিয়েছেন দলকে। বিশ্বজোড়া না হোক, অন্তত পর্তুগিজদের জন্য তিনিই-তো কিংবদন্তি!
তবুও সেরা গ্রিজম্যান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন