রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই কোয়েল পাখির হ্যাচারি

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) উপজেলা সংবাদদাতা : দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান, তবু চরম দরিদতা থামাতে পারেনি তাকে। জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বেকার এক যুবক দারিদ্রকে জয় করে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কোয়েল পাখির খামার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনিভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া কাঠ আর বাঁশ দিয়ে গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির হেচারি।
এ হ্যাচারিতে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন খরচ ছাড়াই শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক বাল্বের তাপ দিয়ে তিনি মাসে ৮ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করেন। একদিনের বাচ্চা খামারিদের কাছে বিক্রি করেন ১০ টাকা করে। ৩০ দিন বয়সী পুরুষ পাখি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ঐ উপজেলায় তার সহযোগিতায় এমন আরো ১০টি খামার গড়ে ওঠেছে। এসব ছোট ছোট খামারে তিনি বাচ্চা সরবরাহ করেন এবং তাদের উৎপাদিত প্রতিটি ডিম ২ টাকা দরে কিনে নিয়ে ঢাকা, দিনাজপুর এবং রংপুরে পাইকারী বিক্রি করেন। স্থানীয় হোটেলে পাখির মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রতিদিন ৭শ’ ডিম এবং ৩শ’ পাখি বিক্রি হয়।
এই উদ্যোক্তার নাম মেহেদী হাসান লেনিন। বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত গ্রাম আগ্রা-গরিনাবাড়ি। তার নিজ বাড়িতে পুকুর পাড়ে গড়ে তুলেছেন বিরাট কোয়েল পাখির খামার। এখানে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের ৬ হাজার পাখি রয়েছে।
আর পীরগঞ্জ শহরের মিত্রবাটি গ্রামে একটি টিনশেড বাড়িতে দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তিনি হেচারি করেছেন। তার খামারে উৎপাদিত ডিম থেকে এই হেচারিতে তিনি বাচ্চা ফুটান। সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে সামান্য খরচে মাসে ৮ হাজার বাচ্চা ফোটে এই হেচারিতে। ডিম ও বাচ্চা বাজারজাতকরণের জন্য একই মৌজায় ভাড়া নিয়েছেন একটি গুদাম। সেখানে রাখা ডিম আর বিক্রিযোগ্য পাখি সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। সেখানে বিক্রিযোগ্য পুরুষ পাখি পালনও করেন তিনি।
একটি কক্ষে কয়েকটি প্লাস্টিকের ট্রেতে ডিম রেখে সেখানে বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে ৯৮ থেকে ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রাখা হয় ১৩ দিন। এরপর আরেকটি কক্ষে তাপমাত্রা কিছু কমিয়ে ২ দিন রাখলেই আপনা-আপনি ডিম থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর হার শতকরা ৮৫ ভাগ।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে এই বেকার যুবক ঢাকার বঙ্গবাজার থেকে ৯৬টি কোয়েল পাখির বাচ্চা ক্রয় করেন। এগুলোকে যতœ করতে থাকেন। বড় করার পর নিজের চেষ্টায় ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর কৌশল আবিষ্কার করেন।
ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ডিম ও পাখি বিক্রির বাজার। ৬ মাস পর থেকে তিনি লাভ পেতে থাকেন। গত আড়াই বছরে তিনি ১ লাখ ৫০ হাজার পাখি বিক্রি করেছেন। ডিম বিক্রির হিসেব তার জানা নেই। প্রতিটি পাখি পাইকারী ৩০ টাকা আর প্রতি কেজি ৩শ’ টাকা হারে বিক্রি হয়ে থাকে। আর প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ২ টাকা করে। হাস-মুরগীর ডিমের পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিমও এখন পাওয়া যাচ্ছে শহরের বাজারে এমনকি গ্রামেও। এখন প্রতিদিন তার গড় আয় ২ হাজার টাকার কম নয়।
লেনিনের দেখাদেখি স্থানীয় অনেকেই কোয়েল পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পাখি ও ডিম বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করছেন। কেউ কেউ পড়ালেখার পাশাপাশি কোয়েল খামার গড়ে তুলে পড়ালেখার খরচ নির্বাহ করছেন।
ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগে এ খামারীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সরকারি বেশ কিছু সহায়তা পেয়েছেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মেহেদি হাসান লেনিনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কোয়েল পালন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই এখন কোয়েল পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অল্প খরচে কোয়েল পালন বেশ লাভজনক এবং ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেও তিনি মনে করেন। জেলা কর্মকর্তা আরো বলেন, ব্যবসায়িক সফলতার জন্য ইতোমধ্যে তাকে প্রশিক্ষণের পাশাপিাশি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মিজান ১৯ জুলাই, ২০১৭, ৬:৪৫ পিএম says : 0
আমি ঐ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে আমাও কয়েল পাখির খামার করতে চাই। সেজন্য ঐ ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারটা আমার খুব প্রয়োজন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন