শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

করোনায় সাবেক মাদরাসা অধ্যক্ষের করুণ মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১১:৫১ এএম | আপডেট : ১১:৫৯ এএম, ২২ মার্চ, ২০২০

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা আসে গতকাল শনিবার। আগের জনের মতোই তার পরিচয়ও গোপন রাখা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকার একটি সরকারি মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই মরহুমের নাম প্রকাশ করা হলো না।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যাওয়া এ ব্যক্তির লাশ গতকাল সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দাফন করা হয়েছে। দাফনে তার দুই ছেলেসহ নিকটাত্মীয়রাও অংশ নিতে পারেনি। তার আগেই তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা এ শিক্ষাবিদের চিকিৎসা, মৃত্যু ও দাফন-সংক্রান্ত সব তথ্য জানিয়েছেন তার নিকটাত্মীয়রা।
অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১০ দিনের রোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে ওই শিক্ষাবিদের পরিবার থেকে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে করোনা নিয়ে সরকারি অব্যবস্থাপনার চিত্রও। তার পরিবারের অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাননি আক্রান্ত ব্যক্তি। পরে উচ্চপর্যায়ের তদবিরেই করোনা পরীক্ষার সুযোগ মিলেছিল আক্রান্তের। তবে ততোদিনে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি ঘটে। করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পরের দিনই বরেণ্য ওই শিক্ষাবিদের মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। এজন্য নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলেন। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কী রোগ হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই পরীক্ষার সুযোগ পাননি। গত সোমবার থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। এ শিক্ষাবিদের উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত সন্তানরা পিতাকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। এর মধ্যে বক্ষব্যাধির এক চিকিৎসক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তিনিই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এমন শঙ্কার কথা জানান। এ শঙ্কা থেকে গত ১৭ মার্চ সকাল থেকে রোগীর স্বজনরা যোগাযোগ করেন আইইডিসিআরে। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া হটলাইনে বহুবার চেষ্টা করে প্রথম দিকে তারা ব্যর্থ হন। অনেক চেষ্টার পর সংযোগ পাওয়া যায়। রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত শোনার পর আইইডিসিআর থেকে বলা হয়, কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি জানিয়ে রোগীকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে বলা হয়।
কিন্তু ওইদিন (১৭ মার্চ) দুপুর থেকে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে ওই শিক্ষাবিদের। বাধ্য হয়ে রোগীকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় রোগীকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় ওইদিন সন্ধ্যায় মিরপুর ১ নং সেকশনের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
গত বুুধবার ওই শিক্ষাবিদের আত্মীয়রা আইইডিসিআরে গিয়ে রোগীর করোনা পরীক্ষার জন্য তদবির করেন। কীট সঙ্কট দেখিয়ে প্রথমে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে ফোন করিয়ে অবশেষে করোনা পরীক্ষায় রাজি করাতে সফল হন তারা। আইইডিসিআরের এক কর্মী মিরপুরের ওই হাসপাতালে গিয়ে রোগীর রক্ত নিয়ে আসেন। সে রক্ত পরীক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকালে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয় ওই শিক্ষাবিদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
বিষয়টি জানতে পেরে বেসরকারি হাসপাতালটি থেকে ওই সময়ই রোগীকে সরিয়ে নিতে চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকার থেকে হাসপাতালটিতে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে বাধ্য করা হয়। এ অবস্থার মধ্যেই শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় এ শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তার লাশ রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনায় আক্রান্ত এ শিক্ষাবিদকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন তার সন্তানরা। পিতার মৃত্যুর পর এখন তার দুই ছেলে, এক মেয়ে, নিকটাত্মীয়সহ অন্তত ১০ জন করোনার ঝুঁকিতে আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ওই শিক্ষাবিদ বসবাস করতেন রাজধানীর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগে নিজ বাড়িতে। তার পরিবার কিংবা ওই বাড়িতে বসবাসকারী কোনো সদস্য সম্প্রতি বিদেশ সফর করেননি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঠিক কোত্থেকে বা কার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে, সে বিষয়েও অজ্ঞাত পরিবারের বাকি সদস্যরা। এ বিষয়ে মরহুমের পরিবারের সদস্যদের গণমাধ্যমে কথা বলতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে কল্যাণপুর ও মিরপুরের ওই দুটি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। করোনা আক্রান্ত ওই রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সংশ্লিষ্টদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মোস্তাকিম ২২ মার্চ, ২০২০, ১:০৮ পিএম says : 0
আমি মনেকরি করোনা প্রতিরোধ করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে।এই ভাবনায় আমি আতংকিত।করোনার প্রস্তুতির কথা বলে সরকার জনগনের সাথে প্রতারনা করেছে।বাস্তবে তেমন কোন প্রস্তুতি নেয়নি।সরকারের ভিতরে মিথ্যা আর দূনীতি দিয়ে পরিপূর্ণ।
Total Reply(0)
TITAS ২২ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ পিএম says : 0
আসলে আমরা কোথায় আছি তা ও জানি না !
Total Reply(0)
মোহাম্মদ ফজর আলী ২২ মার্চ, ২০২০, ১:৪০ পিএম says : 0
আমরা কেউ যেন দায়িত্ব এড়িয়ে না চলি। শুধু নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে সবাইকে যেন হুমকিতে ঠেলে না দেই। আল্লাহ আমাদের সকলের মঙ্গল করুন।
Total Reply(0)
Baki ২২ মার্চ, ২০২০, ২:১১ পিএম says : 0
এই কাজ টা iedcr ঠিক করে নাই।
Total Reply(0)
কাদের ২২ মার্চ, ২০২০, ২:৫৫ পিএম says : 0
এই যদি হয় শিক্ষক এর আবস্থাত সাধারন মানুষ এর তো রাস্তায় লাশ পরে থাকবে।যা করারতাড়াতাড়িকরে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২২ মার্চ, ২০২০, ৬:২২ পিএম says : 0
আল্লাহ্ রহম করুন,এই সংবাদ থেকে যা হলফ করলাম, এতদিনে তো ঐ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয় । সুতরাং যারা যারা ওনার সংস্পর্শে এসেছেন তারা নিজ দায়িত্বে। কোয়ারান্টাইনে থাকা এবং চিকিৎসা নেয়া জরুরী মনে করছি।
Total Reply(0)
Selim ২৪ মার্চ, ২০২০, ১১:৪১ এএম says : 0
করোনা প্রতিরোধ করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ.
Total Reply(0)
zaman ২৭ মার্চ, ২০২০, ৮:১৪ এএম says : 0
করোনায় আতংকিত হবেননা যেহেতু সাস্থ মন্ত্রী সপন সাব ও সরক মন্ত্রী কাদের সাব আছে।
Total Reply(0)
jack ali ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:২৯ পিএম says : 0
Government will be held responsible to Allah [SWT] as to why He did't get treatment...
Total Reply(0)
Sahih ২৮ মার্চ, ২০২০, ১০:১৩ পিএম says : 0
সংক্রামক ব্যাধি, (ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) কীট (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ) ও পাখির কুলক্ষণ বলে কিছু নেই গ্রন্থ:সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) / হাদিস নাম্বার: 5594
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন