মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল : শীত মৌসুম এলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ বলে খ্যাত ‘খেজুর গাছ’কে ঘিরে জনপদে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করত। শীত মৌসুমে খেজুর রস দিয়ে তৈরি গুড় পাটালি, পিঠা, পয়েস ইত্যাদি নিয়ে গ্রামবাসীরা অতিথিদের আপ্যায়নে চেষ্টা করত। কিন্তু সেই খেজুরের রসের দানা গুড়, ঝোলা গুড়ের, ঘ্রাণ এখন আর গ্রামের হাট বাজারে দেখা যায় না। শীতের ঐতিহ্য মিষ্টি খেজুরের রসের স্বাদ আজ ভুলতে বসেছে মাদারীপুরবাসীরা। আগের মত আর বাজারে পাওয়া যায় না সেই আসল খেজুরের পাটালি ও সেই ঘ্রাণ। খেজরের রসের পিঠা পায়েশ মাদারীপুরবাসীদের জন্য এখন শুধুই স্মৃতিময় অবস্থা।
বর্তমানে যশোর থেকে আনা চিনি মেশানো ভেজাল নিম্নমানের ঝোলাগুড়, পাটালি গুড়, মাদারীপুরের হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে খেজুরে গুড় হিসেবে। এক সময় মাদারীপুরের এই অঞ্চলে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো খেজুরের গুড়ের উৎপাদন হতো। তখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে খেজুরের গুড় রফতানি হতো। এবং সরকারের রাজস্বখাতের একটি বিরাট অংশ এ সেক্টর থেকে আয় হতো। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও কঠোর নজরদারী দুর্নীতির কারণে মাদারীপুর জেলার প্রায় সবকটা ইটের ভাটায় অবাধে খেজুরগাছসহ ফলবান বৃক্ষ পোড়ানোর কারণে জেলার বনবিভাগের বিরাট অংশ উজার হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা দেখা গেছে, মাদারীপুর জেলার নৌমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণাধীন সার্বিক ব্রিকস, রশিদ গৌড়ার ইটভাটা, কাজী মনোয়ার হোসেন ওরফে মনাই কাজীর ইটভাটাসহ বেশকয়েকটি খ্যাতনামা ব্যক্তিদের ইট ভাটায় দেদারসে খেজুর গাছসহ আরো অন্যান্য ফলজ গাছ নিধন করে অবাধে প্রকাশ্য দিবালোকে কাঠ পুড়ছে। জনশ্রæতি রয়েছে ওইসব ইটভাটার মালিক ও সংশ্লিষ্টরা নিজস্ব ক্ষমতার প্রভাবেও জেলা প্রশাসকের ‘এল আর ফান্ড’নামক একটি জনকল্যান তহবিলে মোটা অংকের টাকা জমা রাখায় জেলা প্রশাসকের অঘোষিত ও অলিখিত অনুমতিতে অসাধু ইটভাটার মালিকরা দেদারসে প্রকাশ্যে ইটভাটায় কাঠ পুড়ছে। অথচ এ নিয়ে অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লেখালেখি হলেও প্রশাসন কার্যত নির্বিকার অপরদিকে পরিবেশ অধিদফতর ইতিপূর্বে বেশ কিছু আইনী পদক্ষে নিলেও এই মৌসুমে তাদের ভ‚মিকাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বর্তমানে ইটভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানোর ফলে গাছসহ খেজুরের রস বিলুপ্ত হতে চলছে। মাদারীপুরে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত না করে এবং পরিবেশ বিধিমালা লঙ্ঘন করে সনাতন পদ্ধতিতে কয়েকটি ইটভাটা স্থাপন করে পরিচালনা করে আসছে। সরকারি বিধান অমান্য করে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকার কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছেন এই ইটভাটা। জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেদারছে। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এলাকার জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন