শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উদার ইসলামের কথা বলে বিপাকে এক সউদী ধর্মীয় পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আমি যে সব কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি তারা দেশের বাইরে সউদী আরবের সুনাম ক্ষুণœ হওয়ায় উদ্বিগ্ন। তারা বার বার আমাকে বলেন যে, তারা উদার ইসলাম সমর্থন করেন।
কিন্তু উদার ইসলাম বলতে তারা আসলে কি বুঝাতে চান? এ কথার ব্যাখ্যায় সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে সউদী আরব ও তার আমেরিকান মিত্রের মধ্যে মূল্যবোধের ফারাক কত ব্যাপক। সউদী আরবের উদার ইসলামে অপরাধীদের প্রকাশ্যে শিরñেদ করা হয়, মুরতাদদের শাস্তি দেয়া হয় এবং একজন পুরুষ অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া নারীরা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারে না।
সউদী ধর্মীয় নেতারা জোর দিয়ে বলেন যে, জিহাদ করার পরিবর্তে ঈমানদারদের রাষ্ট্রকে মেনে চলতে হবে। সউদী রাজপরিবার শংকিত যে এ অঞ্চলে ছড়িয়ে জিহাদি আবেগ দেশে আগুন জ্বালাবে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে হুমকি সৃষ্টি হবে। তাই তারা জিহাদিদের নিন্দার জন্য রাষ্ট্রের ধর্মীয় যন্ত্রসমূহকে নিয়োজিত করেছে এবং শাসকদেও মেনে চলা ধর্মীয় দায়িত্ব বলে ঘোষণা করেছে।
এটা যখন সাধারণ ব্যাপার, তখন আমি কিন্তু খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ব্যাপারে কোনো অপমানজনক মন্তব্য তেমন শুনিনি যদিও শিয়াদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা প্রকাশ্যই। ইরানের সাথে বৈরিতা এর আংশিক কারণ। যেসব সউদী আমাকে বিধর্মী বলেছে তারা ছিল শিশু। একবার এক সউদী সাংবাদিক গর্বের সাথে আমাকে তার নয় বছরের মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। মেয়েটি যাতে ইংরেজি শিখতে পারে সেজন্য তিনি তাকে একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি ঃ তোমার নাম কি? সে বলে ঃ ডানা। ঃ তোমার বয়স কত? ঃ নয় বছর। ঃ তোমার জন্মদিন কবে? সে একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। তারপর আরবিতে বলেঃ সউদি আরবে জন্মদিন পালন করা হয় না। এটা বিধর্মীদের ছুটির দিন। তার বাবা বিব্রত হয়ে তার কাছে জানতে চান যে সে কোথায় শুনেছে এ কথা। সে বলে যে সরকারের দেয়া তার একটি পাঠ্য বই থেকে সে এটা জেনেছে। সেখানে নিষিদ্ধ ছুটির দিন হিসেবে বড়দিন থ্যাংকস গিভিং ডে’র কথা বলা আছে। জন্মদিনও তার মধ্যে পড়েছে।
আরেকবার আমি এক আলেম বন্ধুর সাথে বাড়িতে কফি পান করতে যাই। তিনি তার দু’ শিশু পুত্রকে নিয়ে আসেন আমার কাছে। আজান দেয়া হলে আমার বন্ধু নামাজ পড়তে চলে যান। আমি তার সঙ্গে না যাওয়ায় ছেলে দু’টি বিস্মিত হয়। চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখতে থাকে। তারপর জিজ্ঞেস করে ঃ তুমি কি কাফের?
ওয়াহাবিবাদ কী?
বহু সউদীই ওয়াহাবিবাদ সম্পর্কে প্রথমে যা বলবে তা হচ্ছে ওয়াহাবিবাদ নেই।
প্রথমবার সাক্ষাতের সময় হিশাম আল-শেখ আমাকে বলেছিলেন, ওয়াহাবিবাদ বলে কিছু নেই। যা আছে তা প্রকৃত ইসলাম।
পরিহাস যে, শেখ হচ্ছেন সেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের একজন যিনি ওয়াহাবি মতবাদের প্রবক্তার অধস্তন বংশধর।
আঠারো শতকের গোড়ার দিকে শেখ মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব মধ্য আরবে ধর্মীয় সংস্কারের ডাক দেন। পীর ও মাজারের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ইসলাম দুর্নীতিগ্রস্ত বা কলুষিত হয়ে পড়ছে, এ উপলব্ধি থেকে তিনি সব কুসংস্কার ত্যাগ করে খাঁটি ইসলামে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
আবদুল ওহাব ইবনে সউদ নামক একজন গোত্র প্রধানের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা ঐ অঞ্চলে শক্তি অর্জন করেন। সউদি পরিবার রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভ করে। আবদুল ওহাব ও তার বংশধররা তাদের শাসনের বৈধতা প্রদান করে এবং ধর্মীয় বিষয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব লাভ করে।
বিবদমান আরব গোত্রগুলোর মধ্যে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ওয়াহাবি ধর্মীয় নেতারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামরিক বিজয়কে বৈধতা দেন। তারা বলেন, যারা সউদ পরিবারের বিরোধিতা করবে তারা শুধু শত্রুই নয়, কাফেরও এবং তাদের শিরñেদ করা হবে।
১৮১৮ সালে অটোম্যানরা প্রথম সউদী রাজ্য ধ্বংস করে। তারপর থেকে বিশ শতক পর্যন্ত আবার সউদী রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবশেষে বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদের অভিযানে সউদী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আরব উপদ্বীপের অধিকাংশই তার নিয়ন্ত্রণে আসে। সূত্র : দি নিউইয়র্ক টাইমস। (অসমাপ্ত)
নিবন্ধকার বেন হাবার্ড দি নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন