ে শ খ দ র বা র আ ল ম
(২৬ মার্চে প্রকাশের পর)
কোনো গায়ের রঙের মানুষের কাছে সমস্যা নয়, পৃথিবীর কোনো ভাষাই কিন্তু অন্য কোনো ভাষার প্রতিপক্ষ ও শত্রু নয়, পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই কিন্তু অন্য কোনো অঞ্চলের প্রতিপক্ষ ও শত্রু নয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ও শত্রু হয় এসব কোনো একটাকে নিয়ে জাতীয়তাবাদ দাঁড় করালে।
পাঁচ
মুসলিম প্রধান দেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রাখার ব্যাপারে কারো কারো আপত্তির কথা জানা যায়। ইসলামকে না জানলে বা না বুঝলে বিশেষ করে অমুসলিমদের কাছে এটা বৈষম্যমূলক মনে হতেই পারে। কিন্তু ইসলাম তো কেবল মুসলমানদের জন্য আসেনি। সব মানুষের জন্যই এসেছে ইসলাম। সব মানুষের অর্থনৈতিক সাম্যের ও সামাজিক সাম্যেরও বিভিন্ন ধর্মীয় সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক শিক্ষাগত, আইনগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের সংস্থান আছে ইসলামে। জাতীয়তাবাদী স্বাধীন ভারতের মুসলমানদের যে অবস্থা এখন তাতে এ রকম সংস্থান রেখে হিন্দু প্রধান স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রে হিন্দু ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম করলে তাতে স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের মুসলমানরা বেঁচে যাবেন। কিন্তু আর্য বংশোদ্ভুত বৈদিক ব্রাহ্মণ শাসিত বর্ণ ও অধিকার ভেদাশ্রয়ী মনুসংহিতার সমাজপ্রধান জাতীয়তাবাদী স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রে কোনোক্রমেই সেটা হওয়ার না। জাতীয়তাবাদী স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও জাতীয়তাবাদী স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র আর্য হিন্দুদের মনুসংহিতার সমাজ প্রধান হওয়ার আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকামী এবং আর্য হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত্ব আরোপকামী মনুসংহিতার জাতীয়তাবাদী সমাজের নিচে অবস্থান সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বলে অভিহিত স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের এবং স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের আইন বিভাগের বিচার বিভাগের এবং শাসন বিভাগের এ কারণে আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক, জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকামী এবং আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃদিক এক জাতিতত্ত¡ আরোপকামী জাতীয়তাবাদী স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রে “ধর্মনিরপেক্ষতা” কোনো কোনো আমলেই কাজ করে না। কোনো আমলেই কাজ করেনি। চলেছে মনুসংহিতার সমাজের জাতীয়তাবাদী মহলের ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে।
অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশের এই মুসলিম প্রধান দেশে রাষ্ট্রের নিচে, রাষ্ট্রের আইন বিভাগের বিচার বিভাগের এবং শাসন বিভাগের নিচে অবস্থান সমাজহীন মুসলমান সমাজের। প্রাপ্ত অনেক তারিখ তথ্য থেকে এবং দৃশ্যমান বাস্তব অবস্থা থেকে এটা উপলব্ধি করা যায় যে, এখানে রাষ্ট্র যন্ত্র পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। কেবল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্তত একশ’ ভাগ। কেবল তাই নয়, আমাদের এই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা কার্যত ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিপূরক হিসাবে কাজ করে আসছে ভারতীয় উপমহাদেশে আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার এবং আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক একজাতিতত্ত¡ কায়েম করার কর্মসূচির। এর একটা খুব বড় প্রমাণ ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত খোদ পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগের এমএ ক্লাসের পাঠ্য তালিকায় মুসলমান সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামী সাংস্কৃতিক পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুই পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এরই অংশ হিসাবে সাম্য ও সহাস্থানের পবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য ও অবশ্য পাঠ্য করা হয়নি। পাঠ্য ছিল কেবল আর্য-হিন্দুসমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক পরম্পরা এবং এই পরস্পরাভিত্তিক আর্য-হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক জাতিসত্তা সংশ্লিষ্ট সাহিত্য-সঙ্গীত। ‘শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন’ এবং “বৈষ্ণব পদাবলী” ও অবশ্য পাঠ্য ছিল ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট থেকে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই পাকিস্তান আমলেও। সেই পাকিস্তান আমলেও ১৭৫৭-র ২৩ শে জুনের পলাশীর ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ যুদ্ধ প্রহসনের সময় থেকে ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্ট পর্যন্ত একশ’ নব্বই বছরের সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলের ইতিহাসটাও পড়ানো হয়নি। এ সবই হয়েছে করম আত্মঘাতী কাজ। এখনকার মুসলমান ঘরের সন্তানদের সম্বিৎ ফিরবে কী করে? কী করে আসবে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ? যে কোনো জাতীয়তাবাদই তো জাতীয়তাবাদী হওয়া লোকেই মনুষ্যত্ববোধ বিবেকবোধ সততা নিরপেক্ষ গঠনমূলক চিন্তাভাববা ও ঐতিহ্যবোধ নষ্ট করে দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন