পেয়াজ, আদা, হলুদ ও অন্যান্য মসলার মত আমরা রসুনকে মশলা হিসেবে ব্যবহার করি। কিন্তু মশলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও রসুনকে আয়–র্বেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওষুধি হিসেবে রসুনের গুনাগুন অপরিসীম।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ও রসুনের গুনাগুন পরীক্ষা করে দেখেছেন। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে রসুনকে নিয়ে নানা ভাবে পরীক্ষা করে জানান, রসুন পেনিসিলিনের সমগোত্রীয়। জাপানী চিকিৎসকদের মতে, ই-কোলাই ও টাইফয়েডের জীবানুকে ধক্ষংস করতে রসুন খুব ফলপ্রদ। ব্রাজিলের একদল চিকিৎসক টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড এবং আমাশয় ভাল করতে রসুন ব্যবহারে যথেষ্ট সুফল পেয়েছেন।
বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকের মতে, রসুন হল উগ্রশক্তি জীবানু নাশক অ্যাক্রোলিন, অ্যালাইল সালফাইড ও ক্রোটোনিক অ্যালডিহাইড। কাজেই রসুনের জীবাণুনাশক ও ক্ষতদূষণ রোধক ক্ষমতার কথা অস্বীকার করা যায়না। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এবং আধুনিক চিকিৎসকদের মতে রসুনের বিভিন্ন মারাত্মক ধরণের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।
ঘা, বাগড়া, কাটা, ছেঁড়া সহ বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগে ও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ে কাঁচা রসুনের রস, ক্বাথ বা রসুন তেল ইত্যাদি লাগালে সুফল পাওয়া যায়। পেট ফাঁপা, সর্দি, দাতে যন্ত্রণা, গলাভাঙ্গা, সায়েটিকা, ও বিভিন্ন ধরণের বাত রোগে রসুন ভাল কাজ দেয়।
পেটে হঠাৎ গ্যাস জমে গেলে, নতুন অথবা পুরনো ব্রোংকাইটিস, হাপাঁনি, শ্বাসযন্ত্রে ঘা,যক্ষা রোগ রসুনে সেরে যায়। একমাত্র কাচা রসুনের রস ব্রোংকাইটিস এর ঘাড় কফকে তরল করে এবং সে সঙ্গে কফের দূর্গন্ধ দূর করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যদি কোনও মানুষ নিয়মিত রসুন খান তবে হৃদরোগ, পুরনো অজীর্ণ অরোচী, কৃমি, অর্শ্ব, আমবাত ইত্যাদি রোগ থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।
কেউ কেউ রসুনের তীব্র বিশ্রী গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। ফলে রসুন খাওয়া কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। এমতাবস্থায় রসুনের কোয়ার খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক করে কেটে আগের দিন রাতে টক দইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে দেয়া যায়। পরের দিন সকালে দই থেকে তুলে পানিতে ধুয়ে খেয়ে নিতে হবে। এছাড়া তেলে বা ঘিয়ে সামান্য ভেজেও খাওয়া যায়। তবে এভাবে খেলে হয়ত ততটুকু উপকারে আসবেনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, রসুনে যে অ্যালাইড সালফাইড রয়েছে তাতে সবধরণের জীবাণু নাশ করার ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে জার্মান চিকিৎসকরা উচ্চ রক্ত চাপ রোগীদের নিয়মিত রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রতিদিন খাওয়া সম্ভব নাহলেও একদিন পর পর দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় ১ থেকে ২ কোয়া করে কাচা রসুন খেলে পেট ফাঁপা, তলপেটে চাপ ধরা অথবা পেট ভার করে থাকা এবং ক্ষুদা মন্দাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে শরীর সুস্থ থাকে। রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যাক্টেরিয়া ধক্ষংস করার ক্ষমতা। তাই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রায় অধিকাংশ রোগের আক্রমন রসুন খেলে রোধ করা সম্ভব হয়।
পায়ের নীচে কড়া পড়লে রসুন ব্যবহার বিশেষ ফলপ্রদ একথা বলেছেন ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। কারও পায়ের নীচে কড়া পড়লে রসুনের কোয়ার খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক করে কেটে রাতে শোবার সময় কড়ার ওপর চেপে বসিয়ে দিয়ে লিউকোপ্লাষ্ট দিয়ে আটকে দিতে হবে। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করলে কড়া সম্পুর্ণরুপে ভাল হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে রসুন পায়ের কড়াতে বসাবার আগে ভেসিলিন জাতীয় কোন পদার্থ লাগিয়ে নিতে হবে।
কারও যদি প্রতিদিন রসুন খেলে অসুবিধা হয় তাহলে ৩ থেকে ৪ দিন পরপর খেতে পারেন। এতেও যদি শরীর দূর্বল লাগে ও মাথা ঘুরে তাহলে ২-৩ দিন রসুন খাওয়া বন্ধ করে ১ সপ্তাহ পর পর একটি রসুনের কোয়া খেলে আর কোনও অসুবিধা হবেনা। তবে খালি পেটে কোনও অবস্থাতে রসুন খাওয়া ঠিক নয়।
দাতের গোড়ায় ঘা হলে, মাড়ি দিয়ে পুজ ও রক্ত পড়লে এমনকি কিছু খেতে যদি দাঁেত যন্ত্রণা হয় তাহলে রসুনের ক্বাথ গরম অবস্থায় কুলকুচা করলে আরাম পাওয়া যাবে। রসুনের মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরের পক্ষে অতি প্রয়োজনীয় এ বি সি এবং ডি ভিটামিন। বহু রোগের উপশমে রসুনকে নির্ভয়ে ব্যবহার করা চলে। রসুন ব্যবহার করে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই কেননা এর ব্যবহারে কোনও কুফল নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসকরা রসুন ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন