হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মসজিদের মাইকে আযান দেয়া শুরু হয়। নামাজের সময় ছাড়া শহর ও গ্রামের মসজিদের মাইকগুলোতে একযোগে আযান প্রচারিত হওয়া মানুষজন অনেকটা আতংকিত হয়ে উঠেন। কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের নির্দেশনায় আযান দেয়া হয়েছে সে খবর জানা যায়নি।
বেশ কয়েকজন পাঠক বিষয়টি জানতে চান। কেনো আযান দেয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে কি আগে কোনো ঘোষণা ছিলো কিনা। আলাপচারিতার মধ্যেই রাতে সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি মসজিদে আযান শুরু হয়।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে কয়েকজন ইমাম-মুয়াজ্জিনের যোগাযোগ করেও উৎস সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের দাবি তারা অন্য মসজিদে আযান শুনে আযান দিয়েছেন। তাদের ধারণা করোনা নামক বৈশ্বিক মহামারি থেকে বাঁচতে হয়তো কেউ এ আযান দিতে বলেছেন।
নামাজের সময় ছাড়া এভাবে আযান দেয়ার বিধান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ইসলামি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক হাফেজ মাও. মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আযান দেয়ার বিধান রয়েছে। যেমন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে। তাছাড়া মহামারি, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড় তুফান ইত্যাদিতে আযান দেয়ার বিধান আছে। এছাড়া নদী ভাঙ্গন রোধ, বৃষ্টির জন্যে নামাজ, খতমে শেফা অনুষ্ঠানে আমরা সাধারণত আগে ঘোষণা দিয়ে থাকি। ঠিক তেমনিভাবে আজকের রাতের আযানের ক্ষেত্রে আগে ঘোষণা দিলে জনমনে আতংক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। যেহেতু এগুলো সমন্বিত ইবাদত সেহেতু জনসাধারণকে অবহিত না করে কোনো ইবাদত ঘোষণা দেয়া উচিত নয়।
চাঁদপুর বাগাদী দরবারের পীরাজাদা ও বাগাদী আহমদীয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মাও. মাহফুজ উল্যাহ খান জানান, রদ্দুল মুখতার ফতোয়ায়ে শামী জা আল হক শরহে আবু দাউদ শরীফের সূত্রে কিছুস্থানে আজান দেওয়া সুন্নাত। সেগুলো হলো সন্তান জন্ম নিলে, কোন মহামারী দেখা দিলে, আগুন লাগলে, জ্বিন দূরীভূত করা, মানসিক রোগী, কেউ রাস্তা হারিয়ে ফেললে, কোন হিংস্র জানোয়ার এর আক্রমণ রোধ করার জন্য, কেউ অতিরিক্ত রাগান্বিত হলে, কোন এলাকায় মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে। তবে এসব স্থানে আজানের ক্ষেত্রে ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ্’ ও ‘ হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ ব্যাতিত বাকি শব্দগুলো উচ্চারিত হবে।
তবে হঠাৎ এ আযানে মানুষজন আতংকিত হয়ে গেছে, এটি আগে জানানো হয়নি কেনো? এমন প্রশ্নে মাও. মাহফুজ উল্যাহ বলেন, ‘এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলেমদের মত হচ্ছে যে, মহামারী থেকে বাঁচতে সম্মিলিত ভাবে আযান দেয়ার একটি ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব তবে তা ব্যাপকভাবে জানান দিয়ে দিলে উত্তম হতো এবং কোন গ্রহণযোগ্য আলেম অথবা শীর্ষস্থানীয় শরীয়াহ বোর্ড থেকে বিষয়টি প্রচারিত হলে ফিতনার আশঙ্কা ছিল না। বিষয়টি পূর্ব থেকে ব্যাপক প্রচারিত না হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। আর সংক্রান্ত হাদিসটি ব্যাপক প্রচারিত না হওয়ায় জনমনে ফেতনার আশঙ্কা রয়েছে। এই মুহূর্তে সকলকে ধৈর্য ধারণ করার জন্য এবং ভালো টাকে মেনে নেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন