উত্তর ঃ আহবান। আরবীতে যাকে বলে আযান। তবে সব আহবানকে আযান বলেনা। একটি আহবানকেই আযান বলা হয়। নির্দিষ্ট বাক্যের মাধ্যমে নামাজ ও কল্যাণের দিকে ডাকাকে আযান বলে।
আমি কেনইবা আযানের সুমধুর ধ্বনি আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দেবো না। কেনইবা আযানের মাধ্যমে প্রশান্ত হবো না। কেননা এতে রয়েছে প্রশান্ত লাভ করার মতো মহৎ বাক্যসমূহ। কোন অমুসলমি যদি নিরপেক্ষভাবে আযানকে হৃদয় থেকে উপলদ্ধি করে তাহলে আমার বিশ্বাস সে ঈমানের দিকে ধাবিত হবেই ইনশাআল্লাহ। তবে কোন মুসলমান যদি হৃদয় থেকে আযানকে উপলদ্ধি করে তাহলে কেমন হবে? অবশ্যই তার ঈমান বৃদ্ধি হবে, মন প্রশান্ত হবে। নামাজ ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হবে। খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। এটাই তো ঈমানের দাবী।
বড়ত্ব, মহত্ব আর অহংকার তো আল্লাহরই। সৃষ্টির আর কারো জন্য অহংকার অহমিকা আর বড়ত্ব শোভা পায় না। সে সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার হলো আমার চাঁদর, এবং মহত্ব হলো আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো’। (মুসলীম ২৬২০, আবু দাউদ ৪০৯০, ইবনু মাজাহ ৪১৭৪)
আর আযানেই তো ‘আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান’ বলে মহান রবের বড়ত¦ প্রকাশ করা হয়। তাহলে কেনইবা আযান দিতে চাইবো না। আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশের চেয়ে বড় কাজ কি হতে পারে? তাইতো আমি আযান দিয়ে মহান রবের বড়ত্ব প্রকাশ করে মনকে প্রশান্ত করতে চাই।
সৃষ্টিকর্তা একজনই। তিনিই সকলের উপাস্য। তার কোন শরীক নেই। আর তাইতো মহান ইলাহ নিজেই ঘোষণা দেন ‘যদি এতদুভয়ের (আসমান ও যমীনের) মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকতো, তাহলে উভয়েই বিশৃংখল হতো’। (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ২২)
আযানে মহান সৃষ্টিকর্তার ওয়াহদানিয়্যাত বা একত্ববাদ জোর গলায় প্রকাশ করা হয়। আযানের ধ্বনি আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে মন তো সবসময় উদগ্রীব থাকবেই। কারণ তার চেয়ে আর কল্যাণের কাজ কি হতে পারে? আযানেই তো রয়েছে ওয়াহদানিয়্যাতের পবিত্র ঘোষণা। যা প্রকাশ করা বান্দার জন্য সৌভাগ্যের।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। যিনি সৃষ্টিজগতের রহমত। যার নবুওয়াত ও রিসালাতের সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে একজন মানুষ ঈমানদার হবে, হবে মুমিন মুসলমান। রাসুলের রিসালাতের সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে আযানের পূর্ণতা পায়। আর আযানের মাধুর্যতা এখানেই। তাই তো আযানের মাধ্যমে রাসুলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়ে মুমিনের হৃদয় তৃপ্ত হয়।
সালাত। ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যার জন্য সার্বিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। শরীর, কাপড়-চোপড়, নামাজের স্থান থাকতে হয় পবিত্র। অপবিত্র অবস্থায় তা আদায় সম্ভব নয়। যে ইবাদত প্রত্যহ পাঁচবার আদায়ের নিমিত্তে মহান রবের সাথে চুপিসারে কথা বলা হয়। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের দিকে আহবান আযানের মাধ্যমেই করা হয়। তো আযানের চেয়ে মহান ব্রত কি কোন অংশে কম? তাই মুআযযিনের কন্ঠে আযানের সুর লাহরি এবং মাধুর্যতা মুমিন মুসলমানের হৃদয় ছুঁেয় যায়। আযান শুনে ছুটে যায় মসজিদ পানে। মাথাবনত করে আল্লাহকে সিজদার মাধ্যমে। তাহলে আযান দিয়ে মানুষকে তার রবের স্মরণ করিয়ে দিতে কার না মন চাইবে? এজন্য আমিও চাই আযান দিতে।
কল্যাণ। পৃথিবীতে এমন কেইবা আছে কল্যাণ কামনা করেনা। প্রভূত ও প্রকৃত কল্যাণের দিকে আহবান আযান ছাড়া আর কোন সুমধুর ধ্বনির মাধ্যমেই বা হতে পারে? মুআযযিন সাহেব প্রতিনিয়ত পাঁচবার আযানের মাধ্যমেই কল্যাণের দিকে আহবান করেন। আর কে আছে কল্যাণের দিকে আহবান কারী? আবারো মহান রবের বড়ত্ব প্রকাশ এবং একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে আযান শেষ করা হয়। যে আহবানের মধ্যে আল্লাহর বড়ত্ব দিয়ে শুরু করে একত্ববাদ দিয়ে শেষ করা হয় তারচেয়ে কোন আহবান শ্রেষ্ঠ হতে পারে? তাইতো আমি পৃথিবীর আনাচে কানাচে, পাহাড় পর্বতে সর্বত্রই আযানের ধ্বনি দিয়ে মানুষকে তার রবের দিকে ডাকতে চাই। আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে দাড়িঁয়ে আযান দিতে চাই। নিজের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে চাই।
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আল মাদানী পরিচালক, খিদমাতুল উম্মাহ্ ফাউন্ডেশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন