করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের অবস্থাও ভয়াবহ। করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭৮ জনে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে প্রতি ১৩ মিনিটে একজন মারা যাচ্ছেন করোনায়। এই ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১২৯ জনসহ দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৫৮ জন।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ১০ হাজার ৯৪৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৮২ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ১৬৩ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩৫ জন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ছয় মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। সব না হলেও বর্তমানে চলমান অনেক নিষেধাজ্ঞাই দীর্ঘদিন বলবৎ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি বিবিসি রেডিও ৪-এর এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. জেনি হ্যারিস। তার মতে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই দেশটিতে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। এরপর থেকেই তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে এবং গ্রীষ্মকাল শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
দেশজুড়ে বর্তমান কড়াকড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না এসব ব্যবস্থা এত তাড়াতাড়ি তুলে নেয়া হোক। এতে হঠাৎ করেই সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, যাতে আমাদের সব চেষ্টাই বৃথা হয়ে যাবে।’ ডা. জেনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে অন্তত ছয় মাসের মতো হতে পারে।
উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৭৮৯ জন। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪ হাজার ৭১ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৯২। চীনের বাইরে মারা গেছে ২০ হাজার ৭৭৯ জন।
বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার ৭৬৪ জনসহ আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৪২ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৫৯ জন।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন