চট্টগ্রামের দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী প্রথম ব্যক্তি যার করোনাভাইরাস পজেটিভ হলো। এরআগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সন্দেহে মৃত্যুর সন্দেহে ছিলেন কক্সবাজারের একজন মহিলা এবং সীতাকুন্ডের এক কিশোর। তবে নিহত দুজনেরই দেহের নমুনা টেস্ট (কোভিড-১৯) করা হলে তারা করোনায় মারা যাননি তা স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করে। এ অবস্থায় শুক্রবার রাতে নগরীর জনবহুল দামপাড়া এলাকায় প্রথমজনের করোনা পজেটিভের খবর জানাজানি হওয়ার পর এর জেরবারে গতকাল বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাধারণ জনগণের মাঝে ভয়-উৎকণ্ঠা চোখে পড়ে।
চট্টগ্রামজুড়েই এটিই এখন দুশ্চিন্তার সাথে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে প্রথম পজেটিভ হওয়া এ রোগীটি দিয়েই সংক্রমণের ক্ষেত্রে চরম উদ্বেগের বড় কারণ হলো ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত নন। তিনি বাইরে মেলামেশার (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) কারণেই কোথাও কোনো করোনা রোগীর ছোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনসহ সমগ্র সিভিল প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে গতকাল আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। মেয়র ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কেউ শুধুই জরুরি কাজ ছাড়া বাড়িঘরের বাইরে যাবেন না। একথা আমরা অনেক আগে থেকেই বার বার সতর্ক করে আসছি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ সংস্পর্শ রোধ শতভাগ নিশ্চিত করছি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন কড়া সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, অনেকে অহেতুক বাড়িঘরের বাইরে গিয়ে ঘুরেফিরে নির্দেশের ব্যত্যায় ঘটাচ্ছেন। প্রসাশন এ বিষয়ে আরও কঠোর ও কঠিন। কাউকে রাস্তায়, অলিগলি বা অন্য কোথাও ঘোরাফেরা করলে এমনকি বাড়িঘরে বসে আড্ডা দিলে তার তাৎক্ষণিক শাস্তি হবে। আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে মোড়ে ও গলিপথে অযথা ঘোরাফেরা করতে দেখলে তাদের তাড়া করে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জনসাধারণকে নিজের বাড়িঘরে অবস্থান এবং করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতন করতে তৎপর ছিলেন সিভিল প্রশাসনকে সহায়তাকারী সেনাবাহিনীকে।
অন্যদিকে হুজুগ যেন অনেককে ছাড়তেই চায় না। নগরীর কয়েক স্থানে বিশেষত অলিগলি, কাঁচা বাজার, ফিশারি ঘাট, বস্তি এলাকায় কিছু লোকজনকে খেয়ালিপনার বশেই এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কয়েকজন জড়ো হয়ে তাদের কথাবার্তা কান পেতে শুনেই মনে হয় না করোনা এসব হুজুগেদের মনকে স্পর্শ করেছে। অথচ তারাই এখন বিপদ ডেকে আনতে পারে। করোনা সংক্রমণরোধে দেশে টানা ছুটি অঘোষিত লকডাউন চললেও একশ্রেণির মানুষকে বাড়িঘরে আটকে রাখা যাচ্ছেই না।
পেটের দায়ে বের হওয়া মানুষগুলো ভিন্ন কথা। তবে যারা চট্টগ্রাম শহরের মূল সড়কগুলো এড়িয়ে এখানে সেখানে ঘুরছেন, সুযোগ পেলে কমবেশি আড্ডা জমাচ্ছেন তারা নিছক বিপদ হাতে নিয়েই বের হচ্ছেন। যুবক-তরুণই শুধু নয় অতিবয়স্ক, মধ্যবয়সী লোকদেরও এভাবে ঘুরতে দেখা গেছে। তারা গা ঘেঁষাঘেষি করেই কথার ফানুস উড়াচ্ছে। কিছু মেস ও বাসাবাড়িতে ছুটিয়ে আড্ডা, তাসের আড্ডাও দিচ্ছে। সবান্ধবে ভূড়ি ভোজের আয়োজনও হচ্ছে। আবার অনেকেই কাজ ছাড়াই রিকশায় ঘুরে ঘুরে যেন জনশূণ্য শহর দেখার মজা কুড়াচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন