পুরোপুরি লকডাউনের পথে চট্টগ্রাম। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এমন কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রশাসন। এর অংশ হিসাবে সোমবার রাত থেকে নগরীতে জরুরি সেবা এবং আমদানি রফতানি পণ্যের গাড়ি ছাড়া অন্য সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরীতে কারো প্রবেশ এবং বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । এটা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ প্রবেশপথ ‘অবরুদ্ধ’ করে দিয়েছে পুলিশ। পাঁচ প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিও।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রের সীমান্ত সেইসঙ্গে বিপুল প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম সংক্রমণের চরম ঝুঁকিতে। প্রবাসীদের বিশাল অংশ কোয়ারেন্টাইন না মেনে মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার ফলে ঝুঁকি আরো অনেক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যে তিন জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে তাদের বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে আসার রেকর্ড আছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হলেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি।
হোমকোয়রেন্টাইনে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে মাঠে নামেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি নিজে নগরীতে মাইকিং করেছেন। প্রবাসীদের বাসায় গেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন হোমকোয়রেন্টাইনে থাকাদের খোঁজ খবর নিতে যান । তাদের বাসায় ফলমূল নিয়ে যান। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে আছেন।
টানা ছুটিতে অঘোষিত সাটডাউনেও লোকজনকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না।অকারণ ঘোরাঘুরি পাড়া মহল্লায় জটলা আড্ডায় হানা দিয়ে চলছে অভিযান। যানবাহন আটক, লোকজনকে জরিমানা করছে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিচালিত জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সন্ধ্যায় ওষুধ ছাড়া অন্য সব ধরনের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে মসজিদ জামাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার তার ক্ষমতা বলে নগরীতে ব্যক্তি ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করবার নির্দেশনা জারি করেন। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের এই আদেশ সোমবার রাতেই কার্যকর করা হয়।
নগরীর পাঁচ প্রবেশপথ - শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট সেতু, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন মোড় এবং সিটি গেইট অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, আশপাশের উপজেলা থেকে প্রতিদিন লোকজন চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমাদের মনে হচ্ছে। সেজন্য আপাতত পাঁচটি প্রবেশপথ আমরা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার জানান, এসব প্রবেশপথ দিয়ে ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন, রফতানি পণ্যবোঝাই পরিবহন, রোগি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। এসব প্রবেশপথ দিয়ে মানুষের চলাচলও সীমিত থাকবে। নগরীতে প্রবেশের সময় লোকজনকে নিরাপত্তা চৌকিতে পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে। সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন