শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

করোনার ঝুঁকিমুক্ত নয় কুড়িগ্রাম কারাগার : বন্দিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাত বন্ধ

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৩৩ পিএম

পৃথিবী ব্যাপী করোনার মহামারীতে সবাই আতঙ্কে। বাংলাদেশেও করোনার ছোবলে চলছে সরকারি ছুটি। আদালত পাড়া বন্ধ তাই কুড়িগ্রাম জেলখানায় বাড়ছে বন্দির সংখ্যা। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন বন্দি। কিন্তু মিলছে না কারো মুক্তি। জামিন যোগ্য ধারার আসামীদেরও পাঠানো হচ্ছে জেলহাজতে। ধারণ ক্ষমতার চার গুনেরও বেশী আসামী এখন কুড়িগ্রাম কারাগারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
ফলে জেলখানায় বন্দিদের মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্দি পাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবার থেকে বন্দি আসামীদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বজনরা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, কারাগারে আসামী ধারণ ক্ষমতা ১৬৩জন। মঙ্গলবার কারাবন্দির সংখ্যা ছিল ৭০৬জন। একই সঙ্গে জেলে রয়েছে ৫ নারী কারাবন্দির দুগ্ধপোষ্য ৫ শিশু সন্তান। এদের ৩জন ছেলে শিশু ও ২জন কন্যা শিশু। কারাবন্দিদের মধ্যে ৬৭৭জন পুরুষ এবং ২৯জন নারী। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ আসামী ১০৭জন ও নারী ৩জন এবং বিচারাধীন মামলার পুরুষ আসামী ৫৭০জন ও নারী আসামী ২৬জন। প্রতিদিন নতুন আসামী যুক্ত হচ্ছে জেলখানায়। গত ২৫মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৭০জন আসামী নতুন করে যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ৬৬জন ও নারী ৪জন। ফলে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে বন্দিরা। করোনার বিস্তার হয়ার শুরুর দিকে বিচারপ্রার্থীদের ১৫দিনে ১দিন এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মাসে একদিন সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হতো। নতুন নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে আসামীদের সাথে সাক্ষাত পুরোপুরি বন্ধ করেদেয়া হয়েছে। তবে জরুরী প্রয়োজনে কারাগারের নির্দিষ্ট মোইলের মাধ্যমে একজন বন্দি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫মিনিট কথা বলার সুযোগ পাবে স্বজনদের সাথে। তবে সেজন্যও কিছু নিয়োম-কানুন মানতে হবে।
জেলার লুৎফর রহমান আরো জানান, আদালত খোলা থাকলে প্রতিদিন গড়ে ২৫/৩৫জন আসামীর জামিন হোতো। তখন আসামীদের চাপ কমতো। আদালত বন্ধের শেষ দিনের আদেশে ৩৫জন আসামী মুক্তি পায়। যার মধ্যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন। এখন নতুন বন্দি আসছে কিন্তু জামিন মিলছে না। এদেও মধ্যে জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামীও রয়েছে। ফলে কারাবন্দির পাশাপাশি কারাগার সংশ্লিষ্টরাও পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুকিতে।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, কারাগারে বন্দিরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশী আসামী থাকায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওয়ার্ডে ঘুমাতেও হয় গাদাগাদি করে। ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তো রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছাড়া, কম গুরুত্বপূর্ণ ও জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামীদের জামিনের উদ্যোগ নিতে পারে বিচার বিভাগ। সে ক্ষেত্রে ছুটির সময় একদিন কিংবা একাধিক দিন আদালত বসিয়ে জামিন শুনানি করে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। একই সাথে নির্বাহী আদেশে আসামী মুক্তি দেয়া যেতে পারে। বিচারক ইচ্ছে করলে নিজ জিম্মায়ও আসামীদের জামিন দিতে পারেন। এর বাইরে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারেন। প্যান্ডিং ওয়ারেন্ট তালিম না করা। জামিনযোগ্য ও কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামীদের এ দুর্যোগকালিন সময়ে গ্রেপ্তার না করা। তা হলে কারাগারে চাপ কমবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম আসামীদের দুর্ভোগ স্বীকার করে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে কারাবন্দিদের দুর্ভোগলাঘবে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি উত্তোরণে বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোজা হবে।
কারাগারে করোনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ
কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, বিশেষ বিবেচনায় জামিনের লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত ১১০জন আসামীর মধ্যে তিন ধাপে ৫৭জন আসামীর সাজাভোগের সময় ও মামলার ধরণ উল্লেখ করে ঢাকায় তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। করোনা প্রতিরোধে কুড়িগ্রাম কারাগারের প্রথম ফটোক ও দ্বিতীয় ফটোকে আসামী ও সাক্ষাত প্রার্থীদের হাত ধুয়ে ঢুকতে হয়। পড়তে হয় মাস্ক। এছাড়া কারাগারের ভিতরে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন ঔষধ দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে ড্রেন ও ওয়ার্ড। এছাড়া প্রতিদিন হ্যান্ড মাইক দিয়ে বন্দিদের সচেতনতা মুলক প্রচারনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন